Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

গোষ্ঠী কোন্দলেই ‘ফেঁসেছেন’ গৌতম, দাবি পরিবারের

নন্দকুমার বাজারে নন্দকুমার ব্লকের তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ গৌতমের  দোকানে মঙ্গলবার আবগারি দফতর তল্লাশি চালায়।

গৌতমের দোকানে চলছে তল্লাশি। —ফাইল চিত্র

গৌতমের দোকানে চলছে তল্লাশি। —ফাইল চিত্র

 নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৯ ০০:০৭
Share: Save:

চোলাই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা গৌতম সাহুর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করল আবগারি দফতর। পলাতক ওই নেতার বিরুদ্ধে বেঙ্গল এক্সসাইজ অ্যাক্ট, (১৯০৯) এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল মোলাসেস কন্ট্রোল অ্যাক্টে মামলা দায়ের হয়েছে। গৌতমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি এবং তিনি যাতে জামিন না পান, সে ব্যাপারে আর্জি জানিয়েছেন আবগারি আধিকারিকেরা।

আবগারি দফতরের দাবি, এক-দু’মাস নয়, গৌতম বেশ কয়েক বছর ধরেই চোলাই তৈরির জন্য ব্যবহৃত চিটে গুড় এবং অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডের ব্যবসা করতেন। যদিও অভিযুক্ত নেতার এক আত্মীয়ের অভিযোগ, রাজনৈতিক ভাবে হেয় করতেই তাঁকে ফাঁসিয়েছে তৃণমূলেরই একাংশ।

নন্দকুমার বাজারে নন্দকুমার ব্লকের তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ গৌতমের দোকানে মঙ্গলবার আবগারি দফতর তল্লাশি চালায়। অভিযানে ৪৬০ টিন ( যার পরিমাণ সাড়ে ১১ হাজার কিলোগ্রাম) চিটে গুড় এবং পাঁচ পেটি (যার পরিমাণ ১২৮ কিলোগ্রাম) অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। গৌতমকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় শৌচাগারে যাওয়ার নাম করে তিনি পালিয়ে যান বলে দাবি আবগারি আধিকারিকদের। তাঁরা জানিয়েছেন, নিয়ম মতো কোনও ব্যবসায়ী পাঁচ টন চিটে গুড় রাখতে পারেন। কিন্তু গৌতমের কাছে এর অনেক বেশি পরিমাণে গুড় উদ্ধার হয়েছে। ব্যবসার জন্য লাইসেন্সও ছিল না বলে দাবি।

স্থানীয় সূত্রের খবর, গৌতমদের আগে ডাল-কলাইয়ের পারিবারিক ব্যবসা ছিল। ব্যবসায় মন্দার জেরে তা বন্ধ করে তিন দশক আগে নন্দকুমার বাজারে বাড়ি ভাড়া নিয়ে চিটে গুড়ের ব্যবসা শুরু করেছিলেন গৌতমের বাবা। ওই গুড় মাছের খাবার হিসাবে কিনতেন মাছ ব্যবসায়ীরা। বাবার অবর্তমানে বছর সাতেক আগে ব্যবসার হাল ধরেন গৌতম। অভিযোগ, সেই সময় থেকেই গৌতম বেশির ভাগ চিটে গুড় চোলাই ভাটি মালিকদের কাছে বিক্রি করতেন। লরি করে বর্ধমান থেকে চিটে গুড় এবং কলকাতা থেকে রাসায়নিক আনতেন। নন্দকুমার ছাড়া হলদিয়া, মহিষাদল এবং চণ্ডীপুর এলাকার চোলাই ব্যবসায়ীরা গৌতমের দোকান থেকে চিটে গুড় এবং রাসায়নিক কিনে নিয়ে যেতেন।

গৌতম দীর্ঘদিন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য দফতরের কর্মাধ্যক্ষ ছাড়াও গৌতম বর্তমানে দলের কুমরআড়া অঞ্চল সভাপতি পদের দ্বায়িত্বে রয়েছেন। আগে তিনি পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি-সেচ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন। স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের একাংশের মতে, কাটমানি নিয়ে এমনিতেই তাঁরা নাজেহাল। স্থানীয় একাংশের দাবি, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বেআইনিভাবে ওই ব্যবসা চালালেও শাসকদলের নেতা হওয়ায় গৌতমের দোকানে আবগারি দফতর বা পুলিশ হানা দেয়নি।

যদিও গৌতমের এক আত্মীয় তথা দোকানের এক কর্মী স্বপন কুণ্ডুর অভিযোগ, রাজনৈতিক ভাবে হেয় করতে দলেরই কেউ গৌতমকে ফাঁসিয়েছেন। ওই অভিযোগ উড়িয়ে নন্দকুমারের বিধায়ক তথা তৃণমূল ব্লক সভাপতি সুকুমার দে বলেন, ‘‘দলের কেউ গৌতমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনি। এখানে গোষ্ঠীকোন্দল বলে কিছু নেই। দলীয়ভাবে বিরোধী বিজেপি অভিযোগ করতে পারে।’’

বিজেপির তমলুক জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েক বলেন, ‘‘বিজেপির লোকজন অভিযোগ করলে আবগারি দফতর ওই নেতার দোকানে হানা দেবে, এটা কেউ বিশ্বাস করবেন না। এটা তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের ফল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE