Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বিস্ফোরণে বোমা তত্ত্ব, চাপান উতোর

সোমবার সকাল থেকে খেজুরি-২ ব্লকের কটকা দেবীচক গ্রামে ওই তিনতলা বাড়ি ঘিরে কৌতুহলের শেষ ছিল না। বাড়ির চারপাশে পুলিশের পাহারা থাকলেও ভিড় করেছিলেন গ্রামবাসীদের একাংশ।

বিজেপি নেতার বাড়িতে পুলিশ। ইনসেটে, এই ঘরেই বোমা ফাটে।

বিজেপি নেতার বাড়িতে পুলিশ। ইনসেটে, এই ঘরেই বোমা ফাটে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খেজুরি শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৯ ০০:৫৭
Share: Save:

হলুদ রঙের তিনতলা বিশাল পাকা বাড়ি। সেটির দোতলার একটা ঘরের জানালার উপরের দিকের কাঁচ ভাঙা। জানালার কাঠের পাটাতনও উড়ে গিয়ে পড়েছে বেশ খানিকটা দূরে। ঘরের চারদিকে বারুদের কটূ গন্ধ।

সোমবার সকাল থেকে খেজুরি-২ ব্লকের কটকা দেবীচক গ্রামে ওই তিনতলা বাড়ি ঘিরে কৌতুহলের শেষ ছিল না। বাড়ির চারপাশে পুলিশের পাহারা থাকলেও ভিড় করেছিলেন গ্রামবাসীদের একাংশ। এ দিন সকাল সওয়া ৬টা নাগাদ গোটা বাড়ি কেঁপে উঠে বিস্ফোরণে। স্থানীয়েরা জানান, বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে মাটি কেঁপে ওঠে। জানালার কাঠের পাল্লা খুলে বেশ কিছুটা দূরে উড়ে যায়। যে ঘরে বিস্ফোরণ হয়েছে, তার ঠিক পাশেই রয়েছে অ্যাসবেস্টস দেওয়া রান্নাঘর। বিস্ফোরণের অভিঘাতে রান্নাঘরের ছাদেরও কিছু অংশ উড়ে যায়।

পুলিশ সূত্রে খবর, বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন বাড়ির মালিক তথা কটকা দেবীচক বুথের বিজেপি সভাপতি লালমোহন মাইতির ছেলে শিবুরঞ্জন মাইতি এবং নাতি শান মাইতি। শিবুরঞ্জনও এলাকায় বিজেপি কর্মী হিসাবে পরিচিত।

বিস্ফোরণের পরেই শুরু হয়েছে তৃণমূল-বিজেপি চাপানউতোর। তৃণমূলের অভিযোগ, বোমা বাঁধতে গিয়ে ওই বিস্ফোরণ হয়েছে। আবার বিজেপির দাবি, তাদের দলীয় নেতার বাড়িতে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বোমাবাজি করছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।

পুলিশ সূত্রে খবর, বাড়ির মধ্যে থেকে বেশ কয়েকটি তাজা বোমা-সহ বোমা বানানোর উপকরণ—পাটের দড়ি, বারুদ, কেরোসিন, স্টোনচিপস, ছুরি, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এবং বোমা বাঁধার জন্য ব্যবহৃত একটি বড় গামলা উদ্ধার হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, বাইরে থেকে বোমাবাজি নয়, বিস্ফোরণ হয়েছে বাড়ির মধ্যেই।

বাড়িতে লালমোহনের পরিবার ছাড়াও তাঁর দুই ভাই অটল ও নগেন্দ্র মাইতিও থাকেন। পুলিশ বিস্ফোরণের পরে বাড়িতে থাকা ন’জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে শিবুরঞ্জনও রয়েছে। পুলিশের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে সে বাড়িতে বোমা তৈরির কথা স্বীকার করেছে। শিবু-সহ অন্যরা জানিয়েছে, ঘটনার সময় ওই ঘরে খাটে শুয়েছিল শিবু। হঠাৎই পাশে রাখা বোমায় বিস্ফোরণ হয়। তাতে শিবুর বাঁ কাঁধের কিছুটা ঝলসে যায়। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ কিশলয় বর নামে আরও এক যুবককে আটক করেছে। আপতত বাড়িটি সিল করে দেওয়া হয়েছে। তদন্তের জন্য বম্ব স্কোয়াড এবং স্নিফার ডগও পুলিশের পক্ষ থেকে আনার ব্যবস্থা হয়েছে।

স্থানীয় তৃণমূলের অভিযোগ, গত কয়েকদিন ধরে শিবুদের বাড়িতে বোমা তৈরির কাজ চলছিল। গত ১৭ জুলাই খেজুরি-২ ব্লকের আলিপুর বাজারে বোমাবাজি হয়েছিল। ওই ঘটনাতেও এ দিনের আটকেরা জড়িত বলে দাবি তৃণমূলের। এছাড়াও, তাদের অভিযোগ, সম্প্রতি এলাকায় বহিরাগতরা ঢুকেছে। উদাহরণ হিসাবে তাদের দাবি, এ দিন সকালে পুলিশ যাদের আটক করেছে, তাদের মধ্যে পবিত্র দাস গোড়াহারজলপাই গ্রামের বাসিন্দা, কিশলয় এবং অশ্রুসজল বাকড়া মুরলিচকের বাসিন্দা। তৃণমূলের আরও অভিযোগ, লালমোহনের ভাই অটল খেজুরি থানায় এনভিএফ পুলিশ কর্মী ছিলেন। তার মাধ্যমেই পুলিশের গোপন তথ্য বিজেপির শিবিরে চলে যেত।

খেজুরি-২ ব্লকের তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি অতীন নন্দ বলেন, ‘‘বিজেপি খেজুরি জুড়ে অশান্তির জন্য গত কয়েক মাস ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে। বিজেপির বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণের পর হাটে হাড়ি ভেঙে গিয়েছে। ওরা বোমাবাজির রাজনীতি করছে। এ দিনের ঘটনা তারই প্রমাণ।’’

ব্লক বিজেপির মণ্ডল সভাপতি শুভ্রাংশু দাস বলেন, ‘‘খেজুরিতে তৃণমূলের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছে। তা ফিরে পেতে বিজেপির বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে। এ দিন ঘরের বাইরে থেকেই তৃণমূল কর্মীরা বিজেপি কর্মীদের বোমা ছুড়েছে।’’ পুলিশ প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছে, বাইরে থেকে বোমা ছোড়ার কোনও চিহ্ন ছিল না। বরং ঘরের ভিতরে বোমা বিস্ফোরণের অনেক তথ্য পাওয়া গিয়েছে।

কাঁথির এসডিপিও সৈয়দ মহম্মদ মামদোদুল হোসেন বলেন, ‘‘আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া মিলেছে। আরও কয়েক জনের বিরুদ্ধে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Explosion BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE