Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

গুড়ের টানে ভিড় গোয়ালতোড়ে

গোটা রাজ্যে এই সময় খেজুর রসের ব্যাপক চাহিদা। আর সেই চাহিদার অন্যতম জোগানদার হল গোয়ালতোড়। জেলা বা জেলার বাইরে থেকেই গোয়ালতোড়ে ভিড় জমান গুড় ব্যবসায়ীরা।

সুবাস: জ্বাল দেওয়া হচ্ছে খেজুর রস। নিজস্ব চিত্র

সুবাস: জ্বাল দেওয়া হচ্ছে খেজুর রস। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৪৬
Share: Save:

সন্ধে হলেই গাছে গাছে বাঁধা হচ্ছে হাঁড়ি। সকাল হতে না হতেই খেজুর রসের চেনা স্বাদে মাতোয়ারা গোটা গ্রাম। নিম্নচাপের জেরে শীতের মেজাজ তেমন শরিফ নয়। তবু, গুড় নিয়ে ভাবনা চিন্তা না-করলেই নয়।

গোটা রাজ্যে এই সময় খেজুর রসের ব্যাপক চাহিদা। আর সেই চাহিদার অন্যতম জোগানদার হল গোয়ালতোড়। জেলা বা জেলার বাইরে থেকেই গোয়ালতোড়ে ভিড় জমান গুড় ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় বাসিন্দা, যাঁদের খেজুর গাছ আছে, তাঁদের সঙ্গে চুক্তি করেই চলে ব্যবসা। চুক্তি হয় টাকা বা গুড়ের ভিত্তিতে। কেউ এক একটি গাছের জন্য নেন তিনশো-চারশো টাকা। কেউ আবার নেন গাছ প্রতি তিন-চার কিলো গুড়।

নভেম্বর থেকেই চলছে গাছ কাটানোর হিড়িক। গত কয়েক বছর ধরেই বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলার ব্যবসায়ীরা গোয়ালতোড়ে আসছেন। এক একটি গাছ থেকে আট-দশ লিটার রস সংগ্রহ হয়। সে রস থেকেই তৈরি হয় পাটালি। আবার গ্লাসে ভরেও বিক্রি হয় খেজুর রস। ভোরের শীতে তার স্বাদই আলাদা।

গোয়ালতোড়ের আউলিয়া, আমলাশুলি, কুঁদরিশোল, রেঙচা, শশাবেদিয়া, কুলডাঙা, রূপাঘাগরা, ভালুকবাসা-সহ প্রায় ৩০-৪০টি গ্রামে হাজার হাজার খেজুর গাছ আছে। বেশির ভাগই ব্যক্তিগত মালিকানার। কিছু গাছ অবশ্য আছে বন দফতরের তত্ত্বাবধানে। গুড় ব্যবসায়ীরা মূলত ব্যক্তিগত গাছগুলিই বেছে নেন। শীত পড়তে না পড়তেই অস্থায়ী তাবু খাটিয়েই থাকতে শুরু করেন গা়ছিরা। সেখানেই মাটির উনুনে ব়ড় কড়াইয়ে রস ঢেলে জ্বাল দেওয়ার কাজ চলে। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় তৈরি হয় গুড়। তারপর কেউ সে গুড় বেচে দেন ব়ড় হাঁড়িতে, বা টিনে ঢেলে। আবার কেউ তৈরি করেন পাটালি। স্বাদ আনতে পাটালিতে মেশানো হয় এলাচ, দারচিনিও।

গত ৮-১০ বছর ধরে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে পাটালি তৈরি করছেন চুনারাম মণ্ডল, আশাউল খান, আবুহোসেন খানরা। তাঁরা জানান, পাঁচ লিটার খেজুর রস থেকে আড়াই-তিনশো গুড় তৈরি হয়। দিনে প্রায় ১৫-২০ কিলো করে গুড় তৈরি হয়। তিন-চার কিলো পাটালি।

ব্যবসায়ীরা জানালেন, শীত ভাল পড়লে রসের স্বাদ বাড়ে, গুড়ের উৎকর্ষও নির্ভর করে তার উপর। তবে বাজার নিয়ে কোনও আক্ষেপ নেই ব্যবসায়ীদের। চুনারাম বলেন, ‘‘চাহিদার অভাব নেই। লাভ থাকে ভালই।”

জ্বালানি ছাড়া অন্য কোনও খরচ নেই গুড় তৈরিতে। প্রতি কিলোগ্রাম পিছু গুড় বিক্রি হয় ৬০-৭০ টাকায়। শালবনির এলাকার শিক্ষক মানব পাল, মেদিনীপুর শহরের এক ব্যবসায়ী অমৃত জানারা সরাসরি চলে আসেন গোয়ালতোড়ে। খাঁটি গুড়ের সন্ধানে আসেন অনেকেই। মানববাবুর কথায়, “ভোর থেকে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি। দোকানে এমন খাঁটি গুড় পাওয়া ভার। খাঁটি গুড়ের গন্ধই নেই। তাই এত কষ্ট করে নিয়ে যাই একটু গুড়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Molasses Goyaltor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE