Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

ক্ষতি হলে সাহায্য মেলে সামান্যই

বছর-বছর ফসলের ক্ষতির জন্য হাতি ও মানুষের মধ্যে সংঘাত বাড়ছে বলে মনে করছেন নিচুতলার বনকর্মীরা। ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণের বিষয়টি নতুন করে ভাবা উচিত বলে মনে করেন চাষি ও বনকর্মীদের একাংশ।

ঝাড়গ্রামের সিমলি গ্রামে। ফাইল চিত্র

ঝাড়গ্রামের সিমলি গ্রামে। ফাইল চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৯ ০০:৪৫
Share: Save:

জঙ্গলমহলে হাতির হানায় ফসলের ক্ষতি হলে বিঘে প্রতি প্রায় ২ হাজার টাকা হিসেবে ক্ষতিপূরণ দেয় বন দফতর। সে ধানই হোক কিংবা আনাজ। বাস্তবে হাতির হামলায় বিঘে প্রতি জমিতে ধান ও আনাজের ক্ষতি হয় অনেক বেশি। ফলে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের পদ্ধতি নিয়েই আপত্তি রয়েছে চাষিদের মধ্যে।

বছর-বছর ফসলের ক্ষতির জন্য হাতি ও মানুষের মধ্যে সংঘাত বাড়ছে বলে মনে করছেন নিচুতলার বনকর্মীরা। ক্ষতিপূরণের পরিমাণ নির্ধারণের বিষয়টি নতুন করে ভাবা উচিত বলে মনে করেন চাষি ও বনকর্মীদের একাংশ। এ ব্যাপারে জেলা বন দফতরের পক্ষ থেকে বেশ কয়েক বার রাজ্য বন বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। প্রাক্তন বনকর্তা সমীর মজুমদারের মত, কৃষি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে বিভিন্ন মরসুমে ধান ও আনাজের ক্ষেত্রে ফসলের সরকারি সহায়ক দাম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ হওয়া উচিত।

বন দফতর প্রতি হেক্টর হিসেবে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে। এক হেক্টরে ক্ষতিপূরণের ধার্য মূল্য ১৫ হাজার টাকা। সাড়ে সাত বিঘেতে এক হেক্টর হয়। অর্থাৎ বন দফতরের হিসেব মতো এক বিঘে জমির ফসলের ক্ষতি হলে দু’হাজার টাকা দেওয়া হয়। এক বিঘের কম ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ আরও কমে যায়। এখানেই আপত্তি চাষিদের। ঝাড়গ্রামের ঘোড়াজাগির গ্রামের চাষি ত্রিলোচন মাহাতো, লালগড়ের ভূমিজ-ধানশোলা গ্রামের চাষি প্রমীলা সিংহ, কালীপদ সিংহ-রা জানাচ্ছেন, এক বিঘে জমিতে পাঁচ থেকে সাত কুইন্টাল ধান হয়। জমি উর্বর হলে এবং ফলন ভাল হলে বিঘে প্রতি ৮ কুইন্টালও ফলন হতে পারে। এক বিঘে জমিতে ধান চাষ করতে খরচ হয় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। অসেচ এলাকায় চাষের খরচ আরও বেশি হয়। ধানের সরকারি সহায়ক মূল্য কুইন্টাল প্রতি ১,৮১৫ টাকা। কয়েকদিন আগে লালগড়ের ভূমিজ-ধানশোলা গ্রামের ধান ও আনাজ খেত তছনছ করেছে হাতিরা। স্থানীয় চাষিদের দাবি, এবার ফলন ভাল হয়েছে, এক বিঘেতে আনুমানিক ৭ থেকে ৮ কুইন্টাল ধান হতো। তাই ধানের সরকারি দর অনুযায়ী প্রতি বিঘেতে ৮ কুইন্টাল ধানের দাম অনুযায়ী প্রতি বিঘেতে সাড়ে ১৪ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন চাষিরা। নেতাই গ্রামের আনাজ চাষি পলাশ জানা বলেন, ‘‘এক বিঘে জমিতে প্রায় ৫ হাজার ফুলকপি চাষ করা যায়। এক বিঘে জমিতে ফুলকপি চাষ করতে প্রায় ৪ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু হাতি ক্ষতি করলে তো চাষের খরচের অর্ধেকেরও কম ক্ষতিপূরণ মেলে। ক্ষতিপূরণের হার না বাড়ালে চাষিরা বাঁচবেন কেমন করে।’’

জঙ্গলমহলের একাধিক রেঞ্জ অফিসার ও বিটের অফিসার বলছেন, সরকার নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ যথেষ্ট নয়। এই কারণে হাতি ও মানুষের মধ্যে সংঘাত বাড়ছে। সরকারি বাজার দর অনুযায়ী ফসলের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলে এই সংঘাত অনেকটাই এড়ানো সম্ভব। ক্ষতিপূরণের হার বাড়ানো না হলে সমস্যা মেটানো সম্ভব নয়। প্রাক্তন বনকর্তা সমীর মজুমদার বলেন, ‘‘সরেজমিনে ক্ষয়ক্ষতির অনুসন্ধান করে বিঘে প্রতি ফসলের সরকারি সহায়ক দরে চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হলে হাতি-গ্রামবাসীর সংঘাত অনেকটাই এড়ানো সম্ভব।’’

বনকর্মীরা বলছেন, শস্য বিমার আওতায় হাতির ক্ষতির বিষয়টি নেই। এর ফলে বিমা করানো থাকলেও হাতির হানায় চাষিরা ক্ষতিপূরণ পান না।

হাতির হানায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আর সরকারি ক্ষতিপূরণের ব্যবধানেই বাড়ছে সমস্যা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farmer Elephant Forest Depertment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE