Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
তমলুকে আক্রান্ত বাবা-ছেলে

ছেলেধরা সন্দেহে বাবা-ছেলেকে গাছে বেঁধে গণপিটুনি, ফের তমলুকে

একটি মৃত্যু। তাতেও শিক্ষা নেই। তিন মাসের ব্যবধানে ছেলেধরা সন্দেহে ফের গণপিটুনির ঘটনা পূর্ব মেদিনীপুরে।  

আক্রান্তকে উদ্ধার করছে পুলিশ। শনিবার তমলুকে। নিজস্ব চিত্র

আক্রান্তকে উদ্ধার করছে পুলিশ। শনিবার তমলুকে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৮ ০১:৩৫
Share: Save:

একটি মৃত্যু। তাতেও শিক্ষা নেই। তিন মাসের ব্যবধানে ছেলেধরা সন্দেহে ফের গণপিটুনির ঘটনা পূর্ব মেদিনীপুরে।

শনিবার তমলুক শহর সংলগ্ন পায়রাচালি গ্রামে ছেলেধরা সন্দেহে এক বাবা ও ছেলেকে গাছে বেঁধে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়েই তমলুক থানার পুলিশ গিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁদের দু’জনকে উদ্ধার করে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। পুলিশ জানিয়েছে, আহত রবীন দাস এবং তাঁর ছেলে সমীর সুতাহাটা থানার হরিবল্লভপুর গ্রামের বাসিন্দা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হলদিয়ার কুঁকড়াহাটি এলাকার হরিবল্লভপুর গ্রামের বাসিন্দা রবীন স্থানীয় ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করেন। তিনি শ্রবণ প্রতিবন্ধী। ছেলে সমীর আগে তমলুকের কুঁকড়াহাটি বাজারে খাবারের দোকানে কাজ করত। কয়েক মাস আগে সমীর ওড়িশায় পালিয়ে গিয়ে খাবারের দোকানে কাজ করছিল। কয়েকদিন আগে সে বাড়ি ফিরে আসে। এ দিন সকালে সমীর বাবার সঙ্গে তমলুকের নিমতৌড়িতে এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। দু’জনে তমলুক শহরে সংলগ্ন পায়রাচালি এলাকায় গিয়ে অপেক্ষা করছিলেন।

আরও পড়ুন: জীবনযুদ্ধে হারতে নারাজ তিন কন্যাকে কুর্নিশ

স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, ওই সময় বাবা-ছেলের মধ্যে গোলমাল বাঁধে। দাবি, সমীর স্থানীয় লোকজনের কাছে জানায়, তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ওই ছেলেধরার গুজব ছড়ায়। সমীরের কথা শুনে স্থানীয় বাসিন্দারা রবীনকে একটি গাছে বেঁধে মারধর করে বলে অভিযোগ। সমীরকেও গাছে বেঁধে রাখা হয়। বাবাকে মারধর করা হচ্ছে দেখে সমীর বারণ করে। অভিযোগ, দু’ধরনের কথা শুনে সন্দেহবশত সমীরকেও মারধর করা হয়।

উল্লেখ্য, মাস তিনেক আগে তমলুক শহরের অদূরে মথুরী গ্রামে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছিলেন সঞ্জয় চন্দ্র নামে এক যুবক। ওই ঘটনার পর তমলুক শহরের শঙ্করআড়ার কাছে মোটর সাইকেল চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে গুরুতর আহত হয়েছিলেন এক পুলিশ কনস্টেবল।

এ দিনের ঘটনার পরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। স্থানীয় এক বাসিন্দার কাছ থেকে খবর পেয়ে তমলুক থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং দু’জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। তারা জানিয়েছে, রবীনের অবস্থা গুরুতর। জেলা হাসপাতালের মেল সারজিক্যাল বিভাগে চিকিৎসাধীন রবীনের মুখে ও শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কানে শোনার সমস্যা থাকার জন্য ঘটনার বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করেও তেমন কোনও সদুত্তর মেলেনি বলে দাবি পুলিশের।

সমীর বলে, ‘‘বাবা মাকে মারধর করত। সে জন্য কয়েকমাস আগে মা বাড়ি ছেড়ে মামা বাড়ি চলে যায়। আমিও ওড়িশায় চলে গিয়েছিলাম।’’ তার কথায়, ‘‘বাড়ি ফিরে এসে তমলুকে একজনের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম আধার কার্ড ও ভোটার কার্ড নিয়ে। বাবাও সঙ্গে এসেছিল। কিন্তু তমলুকে এসে বাবা আমার ওই সব কার্ড ছিড়ে দিলে আমি স্থানীয় লোকজনকে জানাই। ওই সময় অনেক লোক এসে বাবাকে মারধর করে।’’

প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের দাবি, বাবা–ছেলের মধ্যে গোলামালের জেরেই ছেলেধরার গুজব ছড়ায়। তার জেরেই স্থানীয় বাসিন্দারা রবীনকে মারধর করেছেন। ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police Man Son Mob Lynching Child Lifter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE