বিপদ-গলি: মেদিনীপুরের সাহাভড়ং বাজারে সরু গলিতে রয়েছে এমনই প্রাচীন বাড়ি। ছবি: কিংশুক আইচ
একে তো তেমন ঢাল-তরোয়াল ছাড়াই ঝাঁপিয়ে প়ড়তে হয় আগুন-যুদ্ধে। তারউপর যুদ্ধস্থল যদি হয় বুড়ো বাড়ি তাহলেই ত্রাহি মধুসূদন রব ওঠে দমকলে। কারণ, আগুন নেভাতে হলে উঠতেই হবে বিপজ্জনক বাড়ির ছাদে। কিন্তু তারপর! আগুন নেভাতে গিয়ে হুড়মুড়িয়ে ছাদ ভেঙে অন্য বিপদ ঘটবে না তো! প্রতি মুহূর্ত আতঙ্ক কাটে দমকলকর্মীদের।
পশ্চিম মেদিনীপুরের দমকলের এক আধিকারিকও মানছেন, ‘‘ঘিঞ্জি এলাকার কোনও বাড়িতে আগুন লাগলে, আমাদের প্রায়শই অসুবিধায় পড়তে হয়। বিশেষ করে সেই বাড়ি যদি বিপজ্জনক হয়। বিপজ্জনক বাড়ির ছাদে ওঠাও অনেক সময় মুশকিল হয়ে পড়ে।” আগুন নেভানো তো পরের ধাপ, বহুক্ষেত্রে ঘটনাস্থলে পৌঁছতেই মুশকিলে পড়েন দমকলকর্মীরা। কারণ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিপজ্জনক বাড়িগুলি রয়েছে ঘিঞ্জি এলাকায়। সরু গলি পেরিয়ে যেতে পারে না দমকলের ইঞ্জিন। সম্প্রতি মেদিনীপুরে একটি পুরনো মার্কেট কমপ্লেক্সে আগুন লেগেছিল। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হয়েছিল দমকলকে। মেদিনীপুরের বড়বাজার, স্কুলবাজার, খড়্গপুরের খরিদাবাজার, গোলবাজারের মতো এলাকায় অনেক বিপজ্জনক বাড়িতে দোকান রয়েছে। সর্বত্র সহজে গাড়িও ঢুকে না। দমকলের গাড়ি পৌঁছনোর আগেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ঘাটালের কুঠিবাজারেরও পরিস্থিতিও একই। সঙ্কীর্ণ এলাকায় সার দিয়ে বিপজ্জনক দোকান। দমকলের মেদিনীপুরের ওসি মানিকলাল দোলুই মানছেন, “ঘিঞ্জি এলাকায় সহজে ঢোকা যায় না। অনেক জায়গায় জল পেতেও সমস্যা হয়।”
খড়্গপুরের ছোটট্যাংরার রয়েছে একটি বিপজ্জনক বাড়ি। সেখানে পৌঁছনোর জন্য নেই কোনও প্রশস্ত রাস্তা। এমনকি, গলিপথে ছোট গাড়ি ঢোকার মতোই পরিসরও নেই। শহরে এমন বিপজ্জনক বাড়ি কতগুলি রয়েছে তা জানে না দমকল। দমকলের খড়্গপুরের ওসি নির্মল মুর্মু বলেন, “জীর্ণ ভবনের জন্য পৃথক কোনও পরিকাঠামো থাকে না। তবে সমীক্ষায় নামা হয়েছে। ধীরে ধীরে বিপজ্জনক ভবনগুলো চিহ্ণিত করা হবে।”
বিপজ্জনক বা়ড়িগুলিতে রয়েছে অন্য বিপদও। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাস্তা সঙ্কীর্ণ হওয়ায় ঢোকে না অ্যাম্বুল্যান্স। ফলে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে পাঁজাকোলা করে অ্যাম্বুল্যান্স পর্যন্ত নিয়ে যেতে হয়। ওই বাড়িগুলির বিদ্যুতের ওয়ারিংও বেশ পুরনো। বহুক্ষেত্রে বিপজ্জনকভাবে ঝোলে তারের জঙ্গল। ফলে শর্ট সার্কিটের সম্ভাবনা উ়ড়িয়ে দেওয়া যায় না। অনেক বিপজ্জনক বাড়িতে আবার স্টোভে রান্না হয়। বিপদ সেখানেও।
তথ্য: কিংশুক গুপ্ত, অভিজিৎ চক্রবর্তী, বরুণ দে ও দেবমাল্য বাগচী
চলবে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy