Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

অনিয়মের বহু বহুতল, বিপত্তির শঙ্কা

বিরোধীদের অভিযোগ, এতদিন বহুতল তৈরির ক্ষেত্রে পুরসভা কোনও সুষ্ঠু নীতি অনুসরণ করেনি। এক-দু’জন প্রোমোটার বহুতল তৈরির ক্ষেত্রে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের নির্দেশিকা মেনে চললেও বাকিরা সেই নিয়মের ধার ধারেন না বলে অভিযোগ।

এ ভাবেই ঝাড়গ্রামে গজিয়ে উঠছে বহুতল। নিজস্ব চিত্র

এ ভাবেই ঝাড়গ্রামে গজিয়ে উঠছে বহুতল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৭:০০
Share: Save:

বহুতল তৈরি হচ্ছে একের পর এক। যদিও তার মধ্যে অধিকাংশ বহুতল তৈরির ক্ষেত্রেই নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। অভিযোগ, অধিকাংশ বহুতলে নেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও। প্রয়োজনীয় ল্যাডার না থাকায় সাত তলা বা দশ তলা বাড়িতে আগুন লাগলে কী ভাবে মোকাবিলা করা হবে, নিরুত্তর দমকল বিভাগ।

বিরোধীদের অভিযোগ, এতদিন বহুতল তৈরির ক্ষেত্রে পুরসভা কোনও সুষ্ঠু নীতি অনুসরণ করেনি। এক-দু’জন প্রোমোটার বহুতল তৈরির ক্ষেত্রে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের নির্দেশিকা মেনে চললেও বাকিরা সেই নিয়মের ধার ধারেন না বলে অভিযোগ। সম্প্রতি বহুতলে আগুন নেভানোর জন্য ল্যাডারের ব্যাপারে পুর কর্তৃপক্ষের তরফে দমকলকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পুরসভার পূর্ত বিভাগের এক কর্মী বলেন, “বিপর্যয় ঘটে গেলে তখন কিছু করার থাকবে না। তাই বহুতলে আগুন মোকাবিলার জন্য সম্প্রতি দমকল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।”

বিগত বাম পুরবোর্ডের আমলে ১৯৯৬ সালে ঝাড়গ্রাম শহরে প্রথম বহুতল তৈরি হয়। কিন্তু পরে রায়তি জমির গাছ কেটে, পুকুর ভরাট করে একের পর এক বহুতল তৈরি হয়ে যায়। অভিযোগ, এখন ঝাড়গ্রাম শহরের যেখানে সেখানে বহুতল তৈরি হচ্ছে। রাস্তা ঘেঁষে, গৃহস্থের বাড়ি ঘেঁষে বহুতল তৈরি হচ্ছে।

ওই সব বহুতলের বেশ কিছুর উপযুক্ত নিকাশি ব্যবস্থা নেই। নেই গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও। কয়েকটি বহুতল তৈরির ক্ষেত্রে দু’পাশে প্রয়োজনীয় জায়গাও ছাড়া হয়নি বলে অভিযোগ। সমস্যায় পড়া বাসিন্দারা পুরসভার কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনও প্রতিকার পান না বলে অভিযোগ।

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে ঝাড়গ্রাম শহরে বহুতলের সংখ্যা ৩৮টি। আরও ৭টি বহুতল অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। কয়েক বছর আগে শহরের ঘোড়াধরায় জনবহুল এলাকার মধ্যে বহুতল তৈরির কাজ শুরু হলে আপত্তি জানান আশেপাশের বাসিন্দারা। পুরসভা কোনও পদক্ষেপ না করায় কয়েকজন বাসিন্দা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। তবে সমস্যার সুরাহা হয়নি বলে এলাকাবাসীর দাবি। নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে।

কিছুদিন আগে অরণ্যশহরের রঘুনাথপুর এলাকায় একটি পুরনো বাড়ি ভেঙে বহুতলের জন্য জমি সমতল করার কাজ চলাকালীন প্রমোটার-চক্রের লোকজন বেআইনি ভাবে পাশের একটি ক্লাব ভবন ভাঙতে শুরু করেন বলে অভিযোগ। বাধা দিতে গিয়ে জখম হন ক্লাবের সম্পাদক। এই সব গোলমালের কারণে সম্প্রতি পুরসভার পূর্তবিভাগের বৈঠকে বহুতল ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম-কানুন খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পুরসভা সূত্রে খবর, বহুতল তৈরির ক্ষেত্রে চারপাশে উপযুক্ত ফাঁকা জায়গা, গ্যারেজের ব্যবস্থা, দমকল ঢোকার মতো জায়গা রাখা, বিদ্যুৎ সংযোগ ঠিক মতো রাখা, উপযুক্ত নিকাশির বন্দোবস্ত রাখতে হবে। ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা জেলা সিপিএম নেতা প্রদীপ সরকারের অভিযোগ, “পুরসভা যে কী করছে, একের পর এক বহুতল ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে পুরসভা কী যথাযথ নিয়ম নীতি মানছে কি-না সেটা জানার জন্য বহুবার চিঠি দিয়েছি। পুর-কর্তৃপক্ষ জবাব দেননি।’’

ঝাড়গ্রামের ভাইস চেয়ারপার্সন শিউলি সিংহ বলেন, “সব দিক খতিয়ে দেখে বহুতলের অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু গাইড লাইন মেনে চলার জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Catastrophe Illegal Construction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE