Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
গাড়ি আটকাতে পুলিশের গার্ডরেল

চাঁদার জুলুমের আঁচ বাজারে, আনাজ আগুন

তমলুকের বড়বাজারের ব্যবসায়ী শচিন হাজরা বক্তব্য, ‘‘এই সময় আনাজে গড়ে কিলোগ্রাম প্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা বেশি দাম নিতে বাধ্য হচ্ছি।’’

 দাপট: তমলুকের নিমতৌড়ি রাস্তায় সোনামুইয়ে গাড়ি আটকে পুজোর চাঁদা আদায়। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস

দাপট: তমলুকের নিমতৌড়ি রাস্তায় সোনামুইয়ে গাড়ি আটকে পুজোর চাঁদা আদায়। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৫৯
Share: Save:

রাস্তায় যান চলাচল এবং গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে গার্ডরেলের উপরে ভরসা করে পুলিশ-প্রশাসন। রাতে পুলিশের সেই গার্ডরেলই হয়ে উঠছে চাঁদা আদায়ের হাতিয়ার! গার্ডরেল দিয়ে রাস্তা আটকে সাধারণ যাত্রী-বাহী গাড়ি থেকে বিভিন্ন মালবাহী গাড়ির থেকে জোর করে কালীপুজোর চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে পূর্ব মেদিনীপুরের বহু এলাকায়। এর জেরে সরাসরি জুলুম তো হচ্ছেই, পরোক্ষে এর আঁচ পড়ছে বাজারেও।

চাঁদার জুলুমে যে লোকসান হচ্ছে, তাতে উৎসবের মরসুমে আনাজের দাম সাময়িকভাবে বাড়ানো হচ্ছে বলে মানছেন ব্যবসায়ীরা। হলদিয়ার মঞ্জুশ্রীর ব্যবসায়ী শেখ নবাবউদ্দিন, সুতাহাটার আনাজ বিক্রেতা আলি হোসেনের কথায়, ‘‘রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত গাড়ি আটকে চাঁদা তোলা হচ্ছে। এত জায়গায় চাঁদা দিতে দিনে গড়ে ৩ হাজার টাকা যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে আনাজের দাম বাড়াতে হচ্ছে।’’ তমলুকের বড়বাজারের ব্যবসায়ী শচিন হাজরা বক্তব্য, ‘‘এই সময় আনাজে গড়ে কিলোগ্রাম প্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা বেশি দাম নিতে বাধ্য হচ্ছি।’’

তমলুক–পাঁশকুড়া রাজ্য সড়কে দুর্গাপুজোর পর থেকেই লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজোর চাঁদা তোলার দাপট বেড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পাঁশকুড়া আনাজ বাজারে যাওয়া তমলুক-হলদিয়ার গাড়িচালক ও ব্যবসায়ীদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, তমলুকের রাধামণি বাজারের মোড় থেকে বিষ্ণুবাড়, নাইকুড়ি, অনন্তপুর, হরিদাসপুর, গোগ্রাস, বেড়াবেড়িয়া, নারায়ণদিঘি, প্রতাপপুরের একাধিক জায়গা মিলিয়ে পাঁশকুড়া স্টেশন পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার সড়কে অন্তত ১০-১৫টি জায়গায় চাঁদা তোলা হচ্ছে। আর সে কাজে একাধিক জায়গায় ব্যবহার করা হচ্ছে পুলিশেরই গার্ডরেল। আনাজের গাড়ির এক চালক শেখ আক্রাম বলেন, ‘‘রাধামণি, নাইকুড়ি, হরিদাসপুর, প্রতাপপুর এলাকায় দিনে পুলিশ গার্ডরেল রাখে। রাতে বিভিন্ন ক্লাব এবং পুজোর উদ্যোক্তারা সেই গার্ডরেল দিয়ে গাড়ির আটকে চাঁদা আদায় করছে। বেশিরভাগই মদ্যপ অবস্থায় থাকে। চাঁদা দিতে না চাইলে গাড়িতে ভাঙচুর করতে আসে। পুলিশেকে জানানো হলেও কোনও পদক্ষেপ করা হয় না।’’

ওই সড়ক দিয়ে আনাজ ব্যবসায়ীর গাড়ি ছাড়াও মেদিনীপুরের বালি গাড়ির চলাচল করে। বালি ব্যবসায়ীরাও তাই দাম বাড়িয়েছেন। নিমতৌড়ির বালি ব্যবসায়ী শ্যামল মাইতির কথায়, ‘‘চাঁদার খরচের জন্য বালির দাম লরি পিছু ৫০০ টাকা করে বাড়িয়েছি। এর ফলে অনেকেই বালি কিনতে চাইছেন না। সমস্যা হচ্ছে।’’

প্রায় একই ছবি হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কে, তমলুকের নিমতৌড়ি থেকে ময়নাগামী রাজ্য সড়কে। ওই রাস্তাগুলি দিয়ে ময়না এলাকার মাছের ভেড়ি থেকে মাছ হাওড়া, কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় যায়। ময়না থেকে নিমতৌড়ি যাওয়ার পথে শ্রীরামপুরে কাঁসাই সেতু, মিরিকপুর এবং নিমতৌড়ির কাছে গাড়ি আটকে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা করে কালীপুজোর চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।

রাস্তা আটকে বেলাগাম চাঁদা আদায় প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের ট্র্যাফিক পুলিশ আধিকারিক আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ‘‘পুজো উদ্যোক্তারা চাঁদা তোলার জন্য গার্ডরেল ব্যবহার করছেন, আমাদের কাছে এমন কোনও অভিযোগ আসেনি। তবে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এলাকার থানাকে জানালে পুলিশ পদক্ষেপ করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Price Vegetables Fundraising
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE