Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

রথের মেলায় ভিড় টানছে ‘ফুচকাদাদুর’ ভেষজ বাগান

এমনি সময় এ পাড়া ও পাড়া ফুচকা বিক্রি করেন। এলাকায় তাঁর পরিচিতি ‘ফুচকা দাদু’। আর ফুচকা বেচার অবসরে নেশা ইতিউতি ভেষজ গাছ খুঁজে বেড়ানো। তবে তারও একটা ইতিহাস আছে। তবে ওই নেশার জেরেই বছর তিনেক ধরে হলদিয়া টাউনশিপে রথের মেলায় ভেষজ গাছের সম্ভার নিয়ে তাঁর আনাগোনা। যা রথের মেলার ভিড়কে টেনে আনে তাঁর কাছে।

গাছপ্রেমী: ভেষজ বাগানে শক্তিপদ প্রধান। নিজস্ব চিত্র

গাছপ্রেমী: ভেষজ বাগানে শক্তিপদ প্রধান। নিজস্ব চিত্র

আরিফ ইকবাল খান
হলদিয়া শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৮ ০৭:৪০
Share: Save:

এমনি সময় এ পাড়া ও পাড়া ফুচকা বিক্রি করেন। এলাকায় তাঁর পরিচিতি ‘ফুচকা দাদু’। আর ফুচকা বেচার অবসরে নেশা ইতিউতি ভেষজ গাছ খুঁজে বেড়ানো। তবে তারও একটা ইতিহাস আছে। তবে ওই নেশার জেরেই বছর তিনেক ধরে হলদিয়া টাউনশিপে রথের মেলায় ভেষজ গাছের সম্ভার নিয়ে তাঁর আনাগোনা। যা রথের মেলার ভিড়কে টেনে আনে তাঁর কাছে।

হলদিয়া টাউনশিপে রথের মেলায় নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়ার বাসিন্দা শক্তিপদ প্রধানের ভেষজ বাগানের প্রদর্শনী নজর কেড়েছে সবার। কী নেই সেই প্রদর্শনীতে! কাক মাছি, বেতো শাক, বিশল্যকরণী, রুদ্র জাটা, মেষ শৃঙ্গী, চোর পলতা, কাক মূল সহ তিনশো প্রজাতির ভেষজ গাছ নিয়ে হাজির শক্তিপদবাবু।

ফুচকা বিক্রির মাঝে ভেষজ গাছ নিয়ে এই উৎসাহের কারণ?

শক্তিপদবাবুর কথায়, ‘‘গাছের নেশা আমার দীর্ঘদিনের। এক সময় হাওড়ায় তাঁতকলে কাজ করতাম। কল বন্ধ হয়ে কাজ চলে গেল। তারপর শুরু ফুচকা বিক্রি। আমার ছেলে তখন ছোট। ফুচকা ভাজতে গিয়ে ছেলের গায়ে ফুচকার তেল পড়ে পুড়ে যায়। টাকা অভাবে ভালমত চিকিৎসা করাতে পারিনি। তবে সেই সময় ওর জন্য ওষধি বা ভেষজ গাছ খুব কাজে লেগেছিল।’’ তারপর থেকেই ভেষজ গাছের প্রতি তাঁর টান বা নেশা বলে জানালেন শক্তিপদ। নিজের এই নেশা দুই ছেলের মধ্যেও ছড়িয়ে দিয়েছেন।

ওষধি গাছ নিয়ে এই চর্চায় শক্তিপদবাবু পাশে পেয়েছেন হেরিটেজ সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার নামক এক সংস্থাকে। যাঁরা বিভিন্ন ভেষজ গাছের গুণাগন সম্পর্কে প্রচারের পাশাপাশি ওই সব গাছ বাড়িতে রাখার পরামর্শও দেন। সংস্থার তরফে চিত্তরঞ্জন সামন্ত জানান, মানুষের মধ্যে ভেষজ গাছ নিয়ে আগ্রহ বাড়াতেই তাঁদের এই উদ্যোগ।

শক্তিবাবুর ছেলে সোমনাথ জানান, বাবাই তাঁদের দুই ভাইয়ের মধ্যে ভেষজ গাছ নিয়ে আগ্রহ তৈরি করেন। তিনি নিজে চাকরি করলেও সময় পেলেই কোদাল, শাবল নিয়ে ঝোপঝাড়, জঙ্গলে ওষধি গাছের খোঁজে বেরিয়ে পড়েন। গাছ চিনতে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞর পরামর্শও নিয়েছেন তাঁরা।

শক্তিপদবাবুর ভেষজ গাছের প্রদর্শনী নিয়ে মেলায় আসা পড়ুয়াদের আগ্রহও কম নয়। স্কুলছাত্রী নাহিদা সুলতানার কথায়, ‘‘এই প্রথম আমি বিশল্যকরণী দেখলাম। ‘ফুচকা দাদু’ যে ভাবে এত রকম গাছ সম্পর্কে আমাদের জানাচ্ছে তাতে আমাদের উপকার হচ্ছে। আগে এত গাছ চিনতামই না।’’

আর কী বলছেন ‘ফুচকাদাদু’!

শক্তিপদবাবু বলেন, ‘‘ফুচকা বিক্রিতে যে পরিশ্রম করি, সেই পরিশ্রম দিয়েই গাছ-মাটির দেখভাল করি। পরিবেশ থেকে শুধু নেওয়া নয়, তাকে কিছু ফিরিয়েও দিতেও হয়। একটা গাছও যদিও কেউ লাগান তাতে পরিবেশটা বাঁচে।’’

হলদিয়া টাউনশিপের রবীন্দ্রমূর্তির কাছে ভেষজ গাছের ওই প্রদর্শনী চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tree Fuchka Seller Environment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE