Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
নন্দীগ্রাম, হলদিয়ায় ঘাসফুলের বিপুল লিডে প্রশ্ন

ভুয়ো ভোট সরব বিরোধী

তৃণমূল ও প্রশাসন সূত্রে খবর, তমলুক বিধানসভায় গত লোকসভা উপ-নির্বাচনে তৃণমূলের লিড ছিল প্রায় আটচল্লিশ হাজার ভোটের। এবার তা কমে হয়েছে প্রায় ৬ হাজার।

জেলাশাসকের হাত থেকে জয়ের শংসাপত্র নিচ্ছেন দিব্যেন্দু। নিজস্ব চিত্র

জেলাশাসকের হাত থেকে জয়ের শংসাপত্র নিচ্ছেন দিব্যেন্দু। নিজস্ব চিত্র

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৯ ০১:০৭
Share: Save:

জেলার দুটি লোকসভা কেন্দ্রেই ব্যবধান আগের চেয়ে অনেকটাই কমেছে। তারপরেও জেলায় শাসকদলকে স্বস্তি দিল সেই নন্দীগ্রাম ও হলদিয়া।

আড়াই বছর আগে তমলুক লোকসভার উপ-নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারী জিতেছিলেন প্রায় পাঁচ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে। এলাকার সাতটি বিধানসভাতেই তৃণমূলের কমবেশি লিড ছিল। সবচেয়ে বেশি ছিল নন্দীগ্রামে। এখানে তৃণমূল প্রার্থী বিরোধী প্রার্থীর চেয়ে এগিয়েছিলেন এক লক্ষ উনচল্লিশ হাজার ভোটে। তারপরেই ছিল হলদিয়া বিধানসভা। এখানে তৃণমূল প্রার্থী এগিয়েছিলেন প্রায় এক লক্ষ এক হাজার ভোটের ব্যবধানে। বাকি তমলুক, নন্দকুমার, মহিষাদল, ময়না ও পূর্ব পাঁশকুড়াতেও বড় ব্যবধান ছিল শাসক দলের। কিন্তু এ বার রাজ্য জুড়ে গেরুয়া ঝড়ের মধ্যে যখন বেশিরভাগ কেন্দ্রে শাসক দলের ভোট কমেছে তখন নন্দীগ্রাম ও হলদিয়ায় শাসক জলের বিপুল লিড নিয়ে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।

তৃণমূল ও প্রশাসন সূত্রে খবর, তমলুক বিধানসভায় গত লোকসভা উপ-নির্বাচনে তৃণমূলের লিড ছিল প্রায় আটচল্লিশ হাজার ভোটের। এবার তা কমে হয়েছে প্রায় ৬ হাজার। একইভাবে পূর্ব পাঁশকুড়া বিধানসভায় ৩৮ হাজার থেকে কমে হয়েছে প্রায় সাত হাজার। ময়নায় ৬৪ হাজার থেকে কমে হয়েছে প্রায় ১২ হাজার। মহিষাদলে ৫৭ হাজার থেকে কমে হয়েছে ১৭ হাজার এবং নন্দকুমারে ৪২ হাজার থেকে কমে হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার।

নন্দীগ্রাম বিধানসভায় গত লোকসভা উপ-নির্বাচনে তৃণমূল ‘লিড’ পেয়েছিল এক লক্ষ উনচল্লিশ হাজার ভোট। এবার ভোটে তা হয়েছে প্রায় আটষট্টি হাজার এবং হলদিয়া বিধানসভায় লিড ছিল এক লক্ষ এক হাজারের। এবার লিড হয়েছে প্রায় ৬৪ হাজারের। অর্থাৎ নন্দীগ্রাম ও হলদিয়া বিধানসভা এলাকা থেকেই তৃণমূল প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারী প্রায় ১ লক্ষ ৩২ হাজার ভোটের লিড পেয়েছেন। যা জয়ের ব্যবধানে অন্যতম ভূমিকা নিয়েছে। বিরোধীদের প্রশ্ন, যেখানে দেখা যাচ্ছে তমলুক লোকসভা এলাকার সব বিধানসভায় তৃণমূলের লিড অনেক কমেছে, সেখানে নন্দীগ্রাম ও হলদিয়ায় লিড কমেও কী ভাবে তা অন্য কেন্দ্রের থেকেও সংখ্যায় এগিয়ে।

বিজেপির তমলুক জেলা সাধারণ সম্পাদক নবারুণ নায়েকের অভিযোগ, ‘‘হলদিয়া বিধানসভার ১৪২ নম্বর বুথে ৬৬০ টি ভোটের মধ্যে তৃণমূল ৬৫০, বিজেপি ২ ও সিপিএম ৩ টি ভোট পেয়েছে। ১৪৩ নম্বর বুথে ৬৬৭টি ভোটের মধ্যে তৃণমূল ৬১৪টি, বিজেপি ১৩টি ভোট পেয়েছে। ১৪৪ নম্বর বুথে ৯২৬টি ভোটের মধ্যে তৃণমূল ৯০২, বিজেপি ৯টি এবং সিপিএম ১১টি ভোট পেয়েছে। এটাই প্রমাণ করে শাসক দলের লোকজন কী ভাবে ছাপ্পা ভোট দিয়েছে।’’

একইভাবে নন্দীগ্রামে ২০৭ নম্বর বুথে তৃণমূল ৮৮০, বিজেপি ৪, সিপিএম ৮, কংগ্রেস ১২টি ভোট পেয়েছে। ২০৮ নম্বর বুথে তৃণমূল ৪৩৪, বিজেপি ৮, সিপিএম ১২ ও কংগ্রেস ২০ টি ভোট পেয়েছে। সিপিএমের অভিযোগ, তৃণমূলের ছাপ্পাভোটের জন্যই এটা হয়েছে। তমলুক কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী ইব্রাহিম আলির অভিযোগ, ‘‘নন্দীগ্রাম, হলদিয়া বিধানসভার অনেক বুথেই তৃণমূল ছাপ্পা ভোট দিয়েছে। যার জেরে ওই সব এলাকায় তৃণমূল বিপুল লিড পেয়েছে। এনিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে।’’

অভিযোগ অস্বীকার করে শহর তৃণমূল সভাপতি মধুরিমা মণ্ডল বলেন, ‘‘হলদিয়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে সবাই ভোট দিয়েছেন। ফলে কোনও অস্বাভাবিকতা নেই। জনসমর্থন না পেয়েই বিরোধীরা ভিত্তিহীন আভিযোগ করছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE