রিমা চক্রবর্তী
স্কুল হকির রাজ্য দলে জায়গা পেল নারায়ণগড়ের প্রত্যন্ত গ্রাম দুরিয়ার মেয়ে রিমা চক্রবর্তী।
ছোটবেলা থেকেই তাঁর খেলার প্রতি ঝোঁক। বছর চারেক আগে হকিতে হাত পাকানো শুরু। এর আগে রাজ্যের সাব-জুনিয়র দলে জায়গা পেয়েছে। এ বার সরাসরি স্কুল হকির সিনিয়র দলে জায়গা করে নিয়েছে খুরশির চকমুকুন্দ বাসন্তী বিদ্যাপীঠের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী রিমা। রিমা স্কুল হকির সিনিয়র দলে জায়গা পাওয়ায় খুশি জেলা ক্রীড়া- কর্তারা। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক বিনয় দাস মাল বলছেন, “ওর জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইল। আমি নিশ্চিত, জেলার মেয়েদের এই খবর বড় উত্সাহ জোগাবে।” জেলা বিদ্যালয় ক্রীড়া সংসদের সম্পাদক সোমনাথ দাস বলছেন, “এ বার হকিতেও পশ্চিম মেদিনীপুর এগোবে। নারায়ণগড়ের রিমা রাজ্য দলে জায়গা পেয়েছে। এটা একটা গর্বের মুহূর্ত। বহু বছর ধরে আমরা সকলে এর অপেক্ষায় ছিলাম।”
রাজ্য দলের হয়ে খেলতে বিহারের পটনায় যাচ্ছে বছর সতেরোর ওই কিশোরী। প্রথম খেলা আগামী রবিবার। পটনায় ‘রাজীব গাঁধী খেল অভিযান’- এ নেমে নিজের সেরাটা দেওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী রিমাও। সে বলছে, ‘‘পটনায় আমাদের কাজটা মোটেই সহজ হবে না। তবে ওখানে নিজের শেষ শক্তি, ক্ষমতা উজাড় করে সেরাটা দেওয়ার জন্যও তৈরি। মাঠে প্রতিপক্ষকে এক ইঞ্চিও জায়গা ছাড়ব না। এটা কিন্তু বলে দিলাম।’’ তার কথায়, “প্রতিনিয়ত প্র্যাকটিস করছি। ফলে, ভাল খেলতে সমস্যা হবে না।”
রিমার এই সাফল্যের পিছনে আসল নায়ক অবশ্য তার কোচ অমিতাভ পাল। দুরিয়ায় হকি দল রয়েছে অমিতাভবাবুর। সেই দলের ক্যাপ্টেন রিমা। অমিতাভবাবু বলছিলেন, “বেশ কয়েক বছর আগের কথা। দলটা শুরু করেছিলাম ১৫- ১৬ জনকে নিয়ে। ২০০৮ সালে কলকাতায় টুর্নামেন্ট খেলতে যাই। ওটা রাজ্য লিগ ছিল।’’ তিনি বলছেন, ‘‘ওই লিগের প্রথম ম্যাচে কলকাতার দলের বিরুদ্ধে ১-০ গোলে জিতি। ভাল হকি স্টিক ছিল না। তাও মেয়েরা মাঠে নেমে নিজেদের সেরাটা দেয়। ম্যাচটা জেতার পর উত্সাহ বাড়ে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ওই ম্যাচটা না জিতলে দলটা টিকে থাকত কি না বলা মুশকিল। বলা যায়, ডুবে যাওয়া তরী খাদের কিনারা থেকে উঠে এসেছিল। মেয়েদের ম্যাচ জেতার তীব্র ইচ্ছা ছিল। তাই কলকাতার দলকে হারানো সম্ভব হয়।”
জঙ্গলমহলের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরে সে ভাবে হকির প্রভাব নেই। জেলা হকির আলাদা কোনও দলও নেই। নেই স্কুল হকির দলও। কেন? জেলা বিদ্যালয় ক্রীড়া সংসদের সম্পাদক সোমনাথ দাস বলছেন, ‘‘জেলায় তেমন হকি খেলা হয় না। তবে এ বার একটা চেষ্টা করতে হবে। রিমার সাফল্য নতুন করে এটা আমাদের ভাবাচ্ছে।’’
রিমার বাবা শঙ্করপ্রসাদ চক্রবর্তীর সামান্য জমি রয়েছে। শঙ্করবাবু পুরোহিত। বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুজো করেন। মা সন্ধ্যারানি চক্রবর্তী গৃহবধূ। দুই মেয়ের মধ্যে রিমাই ছোট। হকির প্রতি উৎসাহের কারণ কী? একাদশ শ্রেণির ছাত্রী বলছে, “ছোট থেকেই খেলাধুলোয় উত্সাহ। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় দেখতাম, কয়েকজন হকি খেলছে। সেই দেখেই হকিতে উত্সাহ আসে। অমিতাভ স্যারের দলে খেলা শুরু করি। গত কয়েক বছরে অবশ্য বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্ট খেলেছি। আমি আরও ভাল খেলতে চাই। আরও অনেক বড় হতে চাই।”
রিমার হাত ধরে জেলা হকিরও যেন শাপমুক্তি ঘটতে চলেছে। রিমার কোচ অমিতাভ পাল বলছেন, ‘‘শুরুতে কোনও দল ছন্দ পেয়ে গেলে পরের দিকে অনেক কিছু ভাল ঘটতে পারে। খেলোয়াড়দের মধ্যে আত্মবিশ্বাস এসে যায়। আশা করব, রিমাদের দল পটনার মাঠে শুরুতেই ছন্দ পেয়ে যাবে। ভাল কিছু করবে।’’
জেলা বিদ্যালয় ক্রীড়া সংসদের সম্পাদক সোমনাথবাবুর কথায়, ‘‘বছর কয়েক আগে দুরিয়ায় গিয়েছিলাম। দেখেছিলাম, বেশ কয়েকজন মেয়ে হকি খেলছে। হকি খেলার জন্য যেমন ভাল মাঠ লাগে, সেই মাঠটাও তত ভাল ছিল না। তাও হকি স্টিক আর বল নিয়ে মেয়েরা মাঠে দৌড়চ্ছে। যাওয়ার আগে ভাবতেই পারিনি, এমন প্রত্যন্ত এলাকায় হকি দল থাকতে পারে। তাও আবার মেয়েদের। আজ মনে হচ্ছে, অমিতাভবাবুর চেষ্টা সফল হল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy