Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সরকার মানবিক হোক, আর্জি মুক্ত বন্দির 

প্রায় ৩২ বছর জেল খাটার পর মঙ্গলবার মুক্তি পেয়েছেন বিজন। বাড়ি কলকাতার বালিগঞ্জে।

মেদিনীপুর জেল থেকে বাড়ির পথে।  নিজস্ব িচত্র

মেদিনীপুর জেল থেকে বাড়ির পথে। নিজস্ব িচত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২০ ০১:১৭
Share: Save:

সরকার আরও মানবিক হোক। সাজাপ্রাপ্ত যে সব বন্দি দীর্ঘদিন ধরে জেলে রয়েছেন, তাঁদের জন্য আরও ভাবুক। জেল থেকে বেরিয়ে এ কথাই বললেন মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দি বিজন বড়ুয়া।

প্রায় ৩২ বছর জেল খাটার পর মঙ্গলবার মুক্তি পেয়েছেন বিজন। বাড়ি কলকাতার বালিগঞ্জে। প্রায় ৩০ বছর ছিলেন প্রেসিডেন্সি জেলে। শেষ ২ বছর ছিলেন মেদিনীপুর জেলে। এক খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হয়েছিল বিজনের। জেল থেকে বেরিয়ে বিজন বলছিলেন, ‘‘আরও আগে ছাড়া উচিত ছিল। জীবনের অনেকটা সময়ে তো জেলেই কেটে গেল। অনেক কিছুই তো প্যারালিসিস হয়ে গিয়েছে।’’ তারপরেই বিজন জুড়ছেন, ‘‘আমাদের মতো লোকেদের জন্য সরকার যদি আরেকটু মানবিক হয় তাহলে ভাল হয়। জেলের মধ্যে একটা বুথ করা উচিত। বুথ একটা খুব দরকার। বুথ থাকলে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ থাকে।’’

বিজন জানালেন, অনেক দিন আগে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। মাঝে আর বাড়ির সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। এ দিনই সকালে জানতে পেরেছেন যে জেল থেকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।’’ বাড়ি ফিরে কী করবেন? ৬৮ বছরের বিজন বলেন, ‘‘আমি একটা ভুল করে ফেলেছিলাম। আমি শিক্ষিত লোক, বিএসসি বিটেক। সামনে কী অপেক্ষা করছে এখনই বলা যাবে না। চেষ্টা করব সমাজের ভালর জন্য কিছু করার।’’ জেলে লেখকের কাজ করতেন বিজন।

সরকারি নির্দেশে মঙ্গলবার রাজ্যের বিভিন্ন জেল থেকে বেশ কয়েকজন বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ৮ জন বন্দি মুক্তি পেয়েছে মেদিনীপুর জেল থেকেই। এর মধ্যে মেদিনীপুর জেলে ছিলেন ৫ জন। আর মুক্ত জেলে ছিলেন ৩ জন। মেদিনীপুর জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন সুখেন্দু শূর, মান্নান খান, বিজন বাড়ুয়া, মানিক বাগদী, বিশ্বনাথ বাড়ুই। মেদিনীপুর মুক্ত জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন লালমোহন বিশ্বাস, তরুণ মাইতি, দয়াময় মণ্ডল। জেলের সুপার সৌমিক সরকার, জেলের ওয়েলফেয়ার অফিসার কর্ণদেব গোস্বামী প্রমুখের সঙ্গে দেখা করে জেল থেকে বেরোন ওই বন্দিরা। এক বন্দির কথায়, ‘‘পুরনো দিনের কথা আর মনে রাখতে চাই না। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই।’’

কারা দফতর সূত্রে খবর, এই বন্দিদের মুক্তির ব্যাপারে দিন কয়েক আগে রাজ্য সরকারের তরফে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। আদালতেরও সবুজ সঙ্কেত মেলে। এর আগে স্টেট সেনটেন্স রিভিউ বোর্ডে (এসএসআরবি) আবেদন করেছিলেন ওই বন্দিরা। বোর্ডের তরফেও মুক্তির সুপারিশ করা হয়েছিল। সুখেন্দু, লালমোহনরা বলছিলেন, ‘‘এ দিন সকালেই জানতে পারি যে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। অনেক দিন ছিলাম। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ভাল লাগছে।’’

বিশ্বনাথ বাড়ুইয়ের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরে। প্রায় ২১ বছর জেলে ছিলেন । বিশ্বনাথ বলছিলেন, ‘‘মাঝে প্যারোলে কয়েক বার বাড়ি গিয়েছি।’’ বাড়ি ফিরে কী করবেন? বিশ্বনাথ বলেন, ‘‘মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। দু’টো ছেলে বাইরে থাকে। সোনার কাজ করে। জামাইও সোনার কাজ করে। জেলে পাহারা দেওয়ার কাজ করতাম। আমি চাষবাস করতাম। বাড়ি গিয়ে আবার চাষবাস করব।’’ মেদিনীপুর জেলের এক আধিকারিক মানছেন, ‘‘সরকারি নির্দেশ মতো মঙ্গলবার

এখান থেকে ৮ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সকলেই যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমরাও চাই, ওঁরা এ বার স্বাভাবিক জীবনে ফিরুক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jail Prisoner
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE