Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

চুলের ছাঁটে ‘কাঁচি’ প্রধান শিক্ষকের

বিষয়টি দেখার পরেই স্কুলের অন্য ছাত্রদের চুলের ছাঁটের দিকে নজর দিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক। আর তাতেই তাঁর চক্ষু চড়কগাছ।

সেলুনে পাঠানো প্রধান শিক্ষকের সেই চিঠি। —নিজস্ব চিত্র।

সেলুনে পাঠানো প্রধান শিক্ষকের সেই চিঠি। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁথি শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৯ ০০:৪৮
Share: Save:

স্কুলে ঢুকে এক ছাত্রের চুলের ছাঁট দেখে চোখ আটকে গিয়েছিল প্রধান শিক্ষকের। ছাত্রটির মাথার এক ধারে চুল প্রায় কিছুই নেই। সেখানে ‌আবার কায়দা করে লেখা নিজের নামের আদ্যক্ষর।

বিষয়টি দেখার পরেই স্কুলের অন্য ছাত্রদের চুলের ছাঁটের দিকে নজর দিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক। আর তাতেই তাঁর চক্ষু চড়কগাছ। বহু ছাত্রই চুল কেটেছে সিনেমা বা ক্রীড়াবীদদের চুলের আদলে। এর পরেই স্কুলের শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যাপারটি কড়া হাতে দমন করতে উদ্যোগী হয়েছেন, কাঁথির নয়াপুট সুধীরকুমার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বসন্তকুমার ঘোড়ই। দিন কয়েক আগে ক্ষৌরকারদের তিনি চিঠি দিয়ে আর্জি জানিয়েছেন, যাতে তাঁরা স্কুল পড়ুয়াদের ওই ধরনের কায়দা করে চুল না কেটে দেন।

স্কুল সূত্রের খবর, বর্তমানে ছাত্রের সংখ্যা ৭৫০ জন। এদের মধ্যে অনেকেরই চুল কায়দা করেছে কাটিয়েছে। ছাত্রদের কারও সামনে বিরাট চুল, আবার কারও মাথার পিছনে এবং পাশে একেবারে চুল নেই বললেই চলে। কারও মাথার পিছনে চুল কেটে নিজের নামের প্রথম অক্ষর লেখা, কারও মাথায় রয়েছে ঝুঁটি। এতেই আপত্তি শিক্ষকদের। ‘কো এডুকেশন’ ওই স্কুলের ছাত্রদের চুলের ছাঁট নিয়ে প্রধান শিক্ষক এতটাই কঠোর যে, গত ৩ অগস্ট দশম শ্রেণির দ্বিতীয় পর্বের গণিতের পরীক্ষার ‘হেয়ার স্টাইলে’র জন্য দুই ছাত্রকে তিনি পরীক্ষায় বসতে দেননি। ওই ছাত্রদের জন্য পরীক্ষার আলাদা দিন ধার্য করা হয়েছে।

ছাত্রেদের চুলে ছাঁট নিয়ে এত কড়া মনোভাব কেন? প্রধান শিক্ষক বসন্ত বলেন, ‘‘স্কুলে শৃঙ্খলার প্রয়োজন। এছাড়া, বেলুড় এবং স্থানীয় রামকৃষ্ণ মিশনের আদর্শে ছাত্রছাত্রীদের অনুপ্রাণিত করতে প্রতি ছ’মাসে মিশনের মহারাজরা এখানে আসেন। সেই সংস্কৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে ছাত্রদের এমন চুলের স্টাইল বেমানান। তাই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদ্যালয়ের টিচার্স কাউন্সিল। বিষয়টি স্কুল ইনস্পেক্টরকেও জানানো হয়েছে।’’ উল্লেখ্য, সম্প্রতি কলকাতার নিউটাউনের হাটগাছা হরিদাস বিদ্যাপীঠ এবং মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক একি পন্থা নেওয়া হয়েছিল।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে পরীক্ষা দিতে পারেনি দশম শ্রেণির ছাত্র অরিজিৎ সামন্ত। তার কথায়, “গরম লাগে। তাই চুল ছোট ছোট করে কেটেছি। আর মুখের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার জন্য মাথার দুই দিকের চুল কমিয়ে, সামনে বড় রেখেছি। এমন চুলের ছাঁটে আরাম লাগে।’’ অভিভাবকেরা অবশ্য প্রধান শিক্ষকের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অভিভাবকদের নিয়ে হওয়া বৈঠকে, তাঁরা প্রধান শিক্ষককে সমর্থন করেছেন। নয়াপুটের বাসিন্দা সত্যকাম করণের সন্তান ওই স্কুলে পড়ে। তিনি বলেন, “বিদ্যালয়ের সংস্কৃতির সঙ্গে এই ধরনের চুলের স্টাইল মানায় না। ছাত্রবস্থায় সহজ-সরল জীবন যাপন করা উচিত।’’

তবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের এমন নিদানে কিছুটা অস্বস্তিতে নয়াপুট এলাকার বিভিন্ন সেলুন কর্তৃপক্ষ। বিদ্যালয়ের কাছে থাকা এক সেলুন দোকানের মালিক কার্তিক বারিক বলেন, ‘‘নোটিস পেয়ে গত ৩ অগস্ট প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করেছি। উনি ছাত্রদের এই ধরনের চুলের স্টেপ কাটিং করতে বারণ করেছেন। কিন্তু অনেক অভিভাবক এসে এমন ছোট ছোট করে চুল কেটে দেওয়ার কথা বলেন। তাছাড়া, আধুনিক ভাবে চুল না কাটলে ছাত্রেরাও খুশি হবে না। তারা অন্য সেলুনে যাবে। তখন আমার পেট চলবে কিভাবে ?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hair style Contai
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE