Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
অধিকর্তার সামনেই অপ্রস্তুত

শিশু বিভাগে মিলল মেয়াদ ফুরনো ওষুধ

শনিবার যে স্বাস্থ্য অধিকর্তা আসবেন, তা অজানা ছিল না কারও। প্রস্তুতিও ছিল সারা। তাতেও যে এভাবেও অপ্রস্তুতে পড়তে হবে তা বোধহয় ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি কেউ।

পরিদর্শনে হাজির রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র

পরিদর্শনে হাজির রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৯ ০২:৫৯
Share: Save:

সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে পরিদর্শনে এসে জরুরি বিভাগে ও শিশুবিভাগে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ দেখলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী। ফল যা হওয়ার তাই হল। মেজাজ হারালেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা।

শনিবার যে স্বাস্থ্য অধিকর্তা আসবেন, তা অজানা ছিল না কারও। প্রস্তুতিও ছিল সারা। তাতেও যে এভাবেও অপ্রস্তুতে পড়তে হবে তা বোধহয় ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি কেউ। ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার মলয় আদক বলেন, ‘‘কীভাবে ওই দু’টি ওয়ার্ডে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ ছিল তা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।’’

শনিবার সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা। সঙ্গে ছিলেন ঝাড়গ্রাম জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অশ্বিনীকুমার মাঝি, হাসপাতালের সুপার, নার্সিং সুপার মিনা বাগ, ডেপুটি নার্সিং সুপার মার্থা সিংহ প্রমুখ। হাসপাতাল সূত্রের খবর, প্রথমে জরুরি বিভাগে ঢুকে ক্যাশ ট্রলিতে (ওষুধ রাখার ট্রলি) একটি মেয়াদ উত্তীর্ণ জীবনদায়ী ওষুধ দেখে কর্তব্যরত নার্সদের কাছে অধিকর্তা জানতে চান, কীভাবে এমন ওষুধ ট্রলিতে রয়েছে। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত দু’জন নার্সের কাছে সদুত্তর না-পেয়ে রীতিমতো বিরক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা ওষুধটি নিজে নিয়ে নেন। শিশুবিভাগেও একই অভিজ্ঞতা হয় স্বাস্থ্য অধিকর্তার। সেখানে একটি মেয়াদ উত্তীর্ণ কৃমির ওষুধ দেখে মেজাজ হারান তিনি। হাসপাতাল সূত্রের খবর, অজয় জানতে চান, কেন এমন মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ একাধিক জায়গায় দেখা যাচ্ছে? তিনি বুঝিয়ে দেন, কোনওরকম গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না। জরুরি বিভাগের দুই নার্স এবং শিশু বিভাগের এক জন নার্সের নাম লিখে নেন অধিকর্তা।

হাসপাতালের একাধিক ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন অধিকর্তা। রোগীরা অবশ্য তাঁকে জানান, হাসপাতালে ভাল পরিষেবা মিলছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, রোগীদের অভিজ্ঞতা শুনে কিছুটা মন ভাল হয় অধিকর্তার। কিন্তু মেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডে পৌঁছতেই ফের গোলমাল। সেখানে দেখা যায়, সরকারি ফরমার্টে ওয়ার্ডের রোগী সংক্রান্ত তথ্য রাখার পাশাপাশি, একাধিক খাতায় তা লেখা হয়। বিরক্ত অধিকর্তা কর্তব্যরত ওয়ার্ডের সিস্টার ইনচার্জের কাছে জানতে চান, এত খাতা কেন? এরপর অতিরিক্ত খাতাপত্র সেখান থেকে নিয়ে নেন অজয়। সেখান থেকে বেরোনোর সময় এক রোগীর পরিজন অভিযোগ করেন, ডায়ালিসিস ইউনিটে রোগীর পরিজনদের বসার জায়গায় পাখা নেই। মশার খুব উপদ্রব। ডায়ালিসিসের রোগীদের জন্য একটি প্রয়োজনীয় ইঞ্জেকশন পাওয়া যায় না বলেও অভিযোগ করেন রোগীর আত্মীয়া। সঙ্গে সঙ্গে অধিকর্তা সুপারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেন। অধিকর্তা ডায়ালিসিস ইউনিট পরিদর্শনের আগেই সেখানে পাখা লাগিয়ে দেওয়া হয়। মশা নাশকও লাগিয়ে দেওয়া হয়।

হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগ পরিদর্শন করার সময় স্বাস্থ্য অধিকর্তার নজরে আসে এক্সরে করার জন্য ৭ জন টেকনিশিয়ান আছেন। কিন্তু দৈনিক ৬০টির বেশি এক্স রে করা হয় না। প্রতিদিন বর্হিবিভাগে প্রচুর রোগী আসেন, যাঁদের অনেকেরই এক্সরে করানো প্রয়োজন। এই চাপ সামলানোর জন্য গুরুত্ব অনুযায়ী রোগীদের কাউকে দশদিন, কাউকে এক মাস-দু’মাস পরে দিন দেওয়া হয়। এ রকম চলবে না বলে জানিয়ে দেন অধিকর্তা। প্রতিদিন কমপক্ষে একশোটি এক্স রে করানোর নির্দেশ দেন তিনি। প্রসূতিদের চার্ট ঠিকমতো তৈরি হওয়ায় সেখানকার নার্সদেরও ভর্ৎসনা করেন অধিকর্তা। রাতে সুপারের অফিসে চিকিৎসক ও নার্সিং বিভাগের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা। ওই বৈঠকে জেলার শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্তারাও ছিলেন। স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানান, হাসপাতালের জন্য যা সরঞ্জাম প্রয়োজন তার সব কিছুই দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ, শল্য ও অস্থি সহ সমস্ত বিভাগে অস্ত্রোপচারের সংখ্যা বৃদ্ধির নির্দেশ দেন অধিকর্তা। ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার মলয় আদক বলেন, ‘‘অধিকর্তার নির্দেশে প্রতিদিন এক্সরে-র সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। হাসপাতালের সার্বিক পরিষেবা প্রদান নিয়ে অধিকর্তা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।’’

এ দিন গোপীবল্লভপুর ও নয়াগ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালও ঘুরে দেখেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Inspection Health Officer Medicine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE