সাজা ষোষণার পর। কর্ণ বেরা (বাঁদিকে) ও শেখ রহিম।
দৃশ্য-১: আদালতে রায় শোনাচ্ছেন বিচারক। আর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে পুলিশ-খুনের আসামী কান্না ভেজা গলায় বলছে, ‘‘হুজুর, আমি ভালভাবে বাঁচতে চাই। ছোটবেলায় টুকটাক চুরি করতাম। কিন্তু এই মামলায় পুলিশ আমাকে ফাঁসিয়েছে। আমাকে ছেড়ে দিন। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা রয়েছে। তার সঙ্গে দিন কাটাতে চাই।’’ অন্যদিকে, এজলাসেই তখন অঝোরে কেঁদে চলেছেন মধ্যবয়স্কা এক মহিলা। তিনি নিহত পুলিশ কর্মী নবকুমার হাইতের স্ত্রী সুচিত্রা।
দৃশ্য-২: যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়দানের পরে ওই আসামীকে পুলিশি ঘেরাটোপে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে। সেখানেও সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলতে শুরু করল সে— ‘‘দাদা, পুলিশ আমাকে কিছু বলতে দিচ্ছে না। আমি দেশের জন্য কিছু করতে চাই। তার জন্য আমার কিডনি, চোখ কেউ নিতে চাইলেও দিয়ে দেব।’’
মহিষাদল থানার কনস্টেবল নবকুমার হাইত খুনের মামলায় হলদিয়া মহকুমা আদালতে সোমবার ছিল কর্ণ বেরা-সহ দুই আসামীর সাজা ঘোষণা। আদালতের অতিরিক্ত জেলা এবং দায়রা বিচারক আশিসকুমার দাসের এজলাসে কর্ণকে এ দিন তোলা হয়। সকাল ১১টা নাগাদ বিচারক তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনান। প্রথমে ভাবলেশহীন থাকলেও রায় শোনার পরে কান্নায় ভেঙে পড়ে কর্ণ। আবেগতাড়িত হয়ে নানা মন্তব্য করতে শুরু করে সে।
রায়দানের পরে এ দিন বিচারক কর্ণের কাছে জানতে চান, সে ওই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যেতে চায় কি না? বা অন্য কোনও সহযোগিতা চায় কি না? বিচারকের ওই সব প্রশ্নের উত্তরে কর্ণ জানিয়েছে, বাড়িতে অসুবিধার জন্য কেউ আসতে পারেনি। তার পরিবার আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নয়। তাই উচ্চ আদালতে গেলে আইনি সহায়তা দেওয়ার প্রার্থনা জানায় সে। পুলিশ খুনের এই মামলার আর এক আসামী শেখ রহিমের ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। এ দিন আদালতে এসেছিল তার স্ত্রী।
কর্ণ এর আগে পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়েছিল। পরে ধরা পড়ে। তাই এ দিন তার সাজা ঘোষণা ঘিরে হলদিয়া মহকুমা আদালতে এবং আশেপাশের এলাকা পুলিশে ছেয়ে গিয়েছিল।
পুলিশ সূত্রের খবর, সাব-ইনস্পেক্টর এবং অ্যাসিট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর মিলিয়ে ১১ জন, ৩০ জন সশস্ত্র পুলিশ কর্মী, এসডিপিও এবং সার্কল ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার আধিকারিক এবং ১০০ জন সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন ছিল ওই এলাকায়। এছাড়া, মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে কর্ণ এবং শেখ রহিমকে যে গাড়িতে আদালতে আনা হয়, সেই দু’টি গাড়িতেও ৬ জন করে র্যাফ এবং কমব্যাট ফোর্সের সদস্য ছিলেন বলে খবর।
কর্ণের সাজার রায় শোনার জন্য এ দিন হাওড়ার জয়পুর থেকে আদালতে এসেছিলেন নিহত নবকুমারের স্ত্রী সুচিত্রা। সঙ্গে ছিলেন দুই আত্মীয়। বিচারকের রায় শুনে তিনি কেঁদে ফেলেন। পরে তিনি বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম ওদের ফাঁসি হবে। যারা অতন্দ্র প্রহরী হয়ে সকলকে নিরাপত্তা দেন, সেই পুলিশ খুনে এমন সাজায় খুশি নই।’’ একটু থেকে ফের বলেন, ‘‘একমাত্র ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। পেনশনের সামান্য টাকায় সংসার চালাতে হয়। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ফোনে আশ্বাস দিয়েছেন— ছেলের উপযুক্ত বয়স হলে চাকরি পাবে।’’
স্বামীর খুনির সাজার পরে এখন সেই আশাতেই বুক বেঁধেছেন সুচিত্রা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy