বাজি পোড়ানোয় রাশ টানতে অনুরোধ করা হয়েছে।
২০১৫ সালের ৬ মে-র রাত। পিংলার ব্রাহ্মণবাড়ে বেআইনি বাজি কারখানায় পরপর বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল নয় শিশু-সহ ১৩ জনের দেহ।
২০১৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বরও বড়সড় বিস্ফোরণ হয়েছিল বেলদার গুড়দলা সংলগ্ন বড়মোহনপুরের বেআইনি বাজি কারখানায়। মৃত্যু হয়েছিল দু’জনের। জখম অনেকে। গ্রেফতার হয়েছিলেন কারখানার মালিক লোচন দাস অধিকারী। মকরামপুরের কোতাইগড়েও মাধব গিরির বেআইনি বাজি কারখানায় আগুন লাগার নজির রয়েছে।
পরপর দুর্ঘটনাতেও খড়্গপুর মহকুমায় বেআইনি বাজির কারবার থামেনি। দুর্ঘটনার পরে ক’দিন পুলিশ-প্রশাসনের অভিযান হয়েছে। তারপর যে কে সেই। বান্ধারদের (বোমা বাঁধার কারিগর) সাফ কথা— পেটের দায়েই এ সব করতে হয়। বড়মোহনপুরের দুর্ঘটনার পরে ধৃত বাজি কারবারি লোচন দাস অধিকারীও বলছেন, “বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে বাজি তৈরি করতে হয়। নইলে খাব কী!”
বেআইনি বাজির কারবার বন্ধ না হওয়ার পিছনে অভিযানে ঘাটতিকেই দুষছেন সকলে। খড়্গপুর গ্রামীণের চাঙ্গুয়াল পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান চন্দন চক্রবর্তী বলেন, “পুলিশ সে ভাবে হানা দেয় না।’’ চাঙ্গুয়ালের বান্ধার বুদ্ধদেব পাত্রও মানছেন, “গোপনে বাড়ির বাইরেই বাজি বানাই। পিংলা-কাণ্ডের আগে একবার জেলে ছিলাম। এখন পুলিশকে খুশি করে চলতে হয়।’’ অভিযোগ উড়িয়ে খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, “বাজির কারবার এখন চলছে না বলেই জানি। যদি কোথাও চলে তবে খোঁজ নিয়ে অভিযান চালাব।” শটস্, গাছবোমা, আশমানগোলা— পুজো-পার্বণ ছাড়াও বিয়েবাড়ি, পাড়ার ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, ভোটের বিজয় মিছিলের জন্য এই সব বেআইনি শব্দবাজির বরাত আসে। সেই চাহিদা মেটাতেই বেলদার গুরদলা, বড়মোহনপুর, গোবিন্দপুর, মকরামপুর, দাঁতনের তুরকা, খড়্গপুর গ্রামীণের চাঙ্গুয়াল, পিংলার দুজিপুরে সাধারণ গেরস্ত বাড়িতে নিয়মের তোয়াক্কা না করে চলে শব্দবাজি তৈরি। পুলিশ হানা দিলে কিছু দিন ব্যবসা একটু থিতোয়। পরে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র গিয়েও নিষিদ্ধ বাজি বানানো হয়। অধিকাংশ বাজি কারিগরেরই লাইসেন্স নেই। আবার লাইসেন্স থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শব্দের মাত্রা ছাপিয়ে নিষিদ্ধ বাজি তৈরি হয়। অনেক ক্ষেত্রে বাড়ির রান্নাঘরের আশেপাশেই মজুত করা থাকে কাঠকয়লা, এসপি, পাইরো পাউডার, সোর, গন্ধকের মতো বাজির নানা মশলা। এক বাজি কারখানার মালিক বাপি দাস মানছেন, “লাইসেন্স পুনর্নবীকরণে প্রশাসন সহযোগিতা করছে না। এখন তাই বিয়েবাড়ি বা পুজো-পার্বণে অল্প বাজি তৈরি হয়। কারিগরেরা অন্যত্র গিয়ে ব্যবসা করে।” বেলদার ১১টি পরিবার বাজি কারবারে যুক্ত। তবে বাড়ি থেকে ব্যবসার পাট গুটিয়ে এগরা সংলগ্ন কৌরদা, ষড়রংয়ের ফাঁকা এলাকায় গিয়ে গোপনে বাজি তৈরি করছে তারা। স্থানীয় তৃণমূল নেতা বাদল বর্মনও বলেন, “এলাকায় বাজি তৈরি হচ্ছে না। তবে অনেকে এগরার দিকে গিয়ে বাজি তৈরি করেছে বলে শুনছি।’’
(শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy