Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রাত হলেই ভিড় জমে মদের ঠেকে

শহরের বাসিন্দাদের একাংসের অভিযোগ, সুভাষপল্লি গেট, খরিদা রেল লাইনের ধার, রাজগ্রাম, ধানসিংহ ময়দান, গুরুদ্বারা, তালবাগিচার আদিবাসীপাড়া, পুরাতনবাজার, সাঁজোয়াল, ইসলাপুকুর, ইন্দা ভাটাপুকুর, ঝোলি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা রাত হলেই চলে যায় মদ্যপদের দখলে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৮ ০৩:০৫
Share: Save:

রাত তখন পৌঁনে ১২টা। খড়্গপুরের গুরুদ্বারা সংলগ্ন ধানসিংহ ময়দানের কাছে একটি ঝুপড়ির সামনে বেশ কয়েকটি মোটরবাইক দাঁড়িয়ে। রাস্তার ধারে থাকা ঝুপড়ির চারিদিক অন্ধকার। ব্যাটারি চার্জের আলো মিটমিট করে জ্বলছে ঝুপড়িতে। রাস্তার উল্টো দিকে চেয়ারে বসে দুই যুবক মোবাইলে গেম খেলার অছিলায় রাস্তায় সজাগ নজর রাখছে। বাইকে, সাইকেলে একের পর এক তরুণ-যুবকেরা আসছে। সটান চলে যাচ্ছে ওই ইটের ঝুপড়ির ভিতরে। মাঝে-মধ্যে কয়েকজন টলমল পায়ে বেরিয়ে আসছেন। সঙ্গে মদের ঝাঁঝালো গন্ধ!

খড়্গপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় এভাবেই রমরমিয়ে চলছে মদের বেআইনি কারবার। রাত দশটার পরে বৈধ মদের দোকান বন্ধের পরেই রমরমা চেহারা নিচ্ছে ওইসব মদের ঠেক। দেদার বিকোচ্ছে দেশি-বিদেশি মদ। রয়েছে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা। শহরবাসীদের একাংশের অভিযোগ, প্রতিবাদ করলে শুরু হয় হুমকি। তাই ভয়ে মুখ বুঝে সহ্য করতে হয় সবকিছু। বেআইনি মদের দোকান বন্ধ করতে পুলিশ অভিযান চালায় না? শহরের সুভাষপল্লির বাসিন্দা রেলকর্মী বিশ্বজিৎ কর বলেন, “পুলিশ মাঝে-মধ্যে এক-দু’জন মদ্যপকে ধরে। কিন্তু দোকান তো বন্ধ হয় না। মানুষ প্রতিবাদ করতেও ভয় পায়। আমার মনে হয় জোরাল পদক্ষেপ প্রয়োজন।”

শহরের বাসিন্দাদের একাংসের অভিযোগ, সুভাষপল্লি গেট, খরিদা রেল লাইনের ধার, রাজগ্রাম, ধানসিংহ ময়দান, গুরুদ্বারা, তালবাগিচার আদিবাসীপাড়া, পুরাতনবাজার, সাঁজোয়াল, ইসলাপুকুর, ইন্দা ভাটাপুকুর, ঝোলি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা রাত হলেই চলে যায় মদ্যপদের দখলে। নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন মহিলারা, শহরের সাঁজোয়ালের বাসিন্দা সাংস্কৃতিক কর্মী কৃশানু আচার্য বলেন, “খুব খারাপ লাগে যখন দেখি কমবয়সী ছেলেরা নেশায় বুঁদ হয়ে রয়েছে। সেই সঙ্গে বাড়ির মহিলাদের নিরাপত্তার অভাব তো রয়েছেই। পুলিশ বা আবগারির কোনও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নজরে পড়ে না।”

কী বলছে প্রশাসন? খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, “আমি ছুটিতে আছি। ফিরে গিয়েই লাগাতার অভিযানে নামব।” আর আবগারি দফতরের জেলা সুপার একলব্য চক্রবর্তীও বলেন, “আমরা এই বিষয়টি আর রেয়াত করব না। শীঘ্রই জোরাল অভিযান শুরু করে ওই সব দোকান বন্ধ করব।”

ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে বেআইনি মদের দোকান। ফলে বৈধ মদের দোকানে বিক্রি কমছে। সরকারের রাজস্ব ক্ষতিও বাড়ছে। খড়্গপুরের বাসিন্দা তথা ‘বেঙ্গল জোন ফরেনলিকার শপ ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোশিয়েশনে’র জেলা সম্পাদক রঞ্জন ঘোষ বিষয়টি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “জেলা জুড়েই বেআইনি মদের কারবার রয়েছে। কিন্তু খড়্গপুরে তো ব্যাঙ্কের ছাতার মতো বেআইনি মদের ঠেক রয়েছে। এতে তো আমাদের বৈধ দোকানের ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছেই। প্রশাসনের জোরাল ও লাগাতার অভিযান প্রয়োজন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Liquor store Illegal Kharagpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE