Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
TMC. BJP

বোমা-গুলি, জখম শিশুকে নিয়ে বিতর্ক

খেজুরি-২ ব্লকের কটকা দেবিচক গ্রামে স্থানীয় বিজেপি নেতা লালমোহন মাইতির বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে।

জখম শিশু। ইনসেটে, এই গুলিতেই কি না বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র

জখম শিশু। ইনসেটে, এই গুলিতেই কি না বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
খেজুরি শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৯ ০০:০২
Share: Save:

লোকসভা ভোটের সময় থেকেই খেজুরিতে উত্তেজনা ছড়িয়েছে একাধিকবার। সোমবার স্থানীয় বিজেপি নেতার বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণও ঘটেছে। এবার ওই রাত থেকেই এলাকায় গ্রামে বোমাবাজি এবং গুলি চলার অভিযোগ উঠল। সেই সঙ্গে তিন বছরের এক শিশুর আহত হওয়ার ঘটনায় জুড়ে গিয়েছে নতুন বিতর্ক। বিজেপি-তৃণমূল একে অন্যকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দাবি করেছে, ওই শিশু গুলির আঘাতে জখম হয়েছে। যদিও পুলিশ সেই দাবি খারিজ করে দিয়েছে।

খেজুরি-২ ব্লকের কটকা দেবিচক গ্রামে স্থানীয় বিজেপি নেতা লালমোহন মাইতির বাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। ওই গ্রাম থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে হলুদবাড়ি-১ নম্বর অঞ্চলের দেখালি গ্রামে সোমবার রাতে বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে। রাতেই হলুদবাড়িতে স্থানীয় বিজেপি কর্মী মন্টু দোলাইয়ের তিন বছরের মেয়ের পিঠে রক্তক্ষরণ হয়। এর পরে মন্টুর বাড়ির কাছে একটি বুলেটও পাওয়া যায় বলে বিজেপির দাবি। তাতেই তারা অভিযোগ করে, তৃণমূলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা মন্টুর মেয়েকে গুলি করেছে। বিজেপি’র খেজুরি-২ মণ্ডল সভাপতি শুভ্রাংশু দাস বলেন, ‘‘তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা রাতে বোমাবাজি, গুলি ছুড়ছে। তাতে আহত হয়েছে দলীয় কর্মীর মেয়ে।’’

তৃণমূলের পাল্টা দাবি, হলুদবাড়ি তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য পশুপতি সাউকে গত এক মাস ধরে বিজেপি ঘরছাড়া করেছিল। পশুপতি সোমবার বিকালে গ্রামে ফিরে আসেন। তাঁকে মারধরের জন্যই বিজেপি কর্মীরা বন্দুক এনেছিল বলে অভিযোগ। তৃণমূলের দাবি, নিজেদের আনা বন্দুকেই অসাবধানতাবশত মন্টুর মেয়ের গুলি লাগতে পারে।

তৃণমূলের খেজুরি-২ ব্লকের কার্যকরী সভাপতি অতীন নন্দ বলেন, ‘‘বিজেপি এলাকায় বোমা, গুলি ছুড়েছে। মন্টু দোলাইয়ের মেয়ের যদি রাতে গুলি লাগে, তাহলে তখন তাঁরা সরকারি হাসপাতালে গেলেন না কেন? পুলিশ গিয়ে মেয়ের চিকিৎসা করালো। আসলে এই ঘটনায় কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে যাবে।’’

মেয়ের কি গুলি লেগেছ? জবাবে মন্টুর স্ত্রী মঙ্গলবার বলেন, ‘‘সোমবার রাতে বাড়ির বাইরে খেলছিল মেয়ে। হঠাৎ করে চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আমরা ছুটে এসে দেখি, ওর পিঠ থেকে অনেক রক্ত ঝরছে। স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম।’’

এ দিন মন্টুর পরিবার এবং মেয়েকে পুলিশ খেজুরি থানায় ডেকে পাঠায়। সেখান থেকে শিশুটিকে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, আঘাতটি বুলেট বা বোমার স্‌প্লিন্টারের নয়। এছাড়া, আঘাতটি নতুনও নয় বলে দাবি। আপাতত আঘাতের নমুনা সংগ্রহ করে ফরেন্সিক ল্যাবরেটারিতে পাঠানো হচ্ছে। এ দিনই প্রাথমিক চিকিৎসার পর হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, যে বুলেটটি হলুদবাড়ি থেকে পাওয়া গিয়েছে, সেটি প্রায় অক্ষত। তাই গুলিটি ছোট্ট মেয়েটির আদৌ লেগেছে কি না, পুলিশের সন্দেহ রয়েছে। তারা গুলিটি ফরেন্সিক দলের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাঁথির এসডিপিও সৈয়দ মহম্মদ মামদোদুল হোসেন এক বিবৃতিতে জানান, চিকিৎসদের রিপোর্ট অনুসারে, মেয়েটির আঘাত পুরনো। তবে লিখিত অভিযোগ হলে তদন্ত হবে।

এ দিকে, সোমবার রাতেই কটকা দেবীচক গ্রামে বিজেপি নেতা বাড়িতে বিস্ফোরণ স্থল পরিদর্শন করে সিআইডি’র বম্ব স্কোয়াড। স্নিফার ডগও আসে। ওই ঘটনায় আটক ১০ জনকে পুলিশ সোমবার গভীর রাতে গ্রেফতার করে। এদের বোমার ঘায়ে আহত তথা লালমোহনের ছেলে শিবুরঞ্জনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকি ৯ জনকে এদিন কাঁথি আদালতে তোলা হয়। কিশলয় বর নামে এক ধৃতকে বিচারক ছ’দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। বাকিদের ১৪ দিনের জেল হেফাজত হয়েছে।

এসডিপিও বলেন, ‘‘বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা দায়ের করেছে। সিআইডি এবং ফরেন্সিক দলের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে এলাকায় টহলদারি শুরু হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC BJP Khejuri Lok Sabha Election 2019
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE