Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
নির্দল প্রার্থীকে হেনস্থা তমলুকে

বহিরাগত ঢোকানোর অভিযোগ

‘বহিরাগতদের’ এলাকায় ঢুকিয়ে ভোটে সন্ত্রাস ছড়াতে চাইছে শাসক দল- কয়েকদিন ধরেই এই অভিযোগ তুলছিল বিরোধীরা। এ বার তমলুক পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ‘বহিরাগত’ অনুপ্রবেশের অভিযোগে শুক্রবার তৃণমূলের কর্মী বোঝাই গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখাল ওই ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থীর অনুগামীরা। ঘটনার জেরে তমলুক থানা চত্বরে পুলিশের সামনেই ওই ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী দীপু মাইতিকে হেনস্থা ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

তমলুকে তৃণমূল কর্মীদের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ। শুক্রবার। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

তমলুকে তৃণমূল কর্মীদের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ। শুক্রবার। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৫ ০০:২৬
Share: Save:

‘বহিরাগতদের’ এলাকায় ঢুকিয়ে ভোটে সন্ত্রাস ছড়াতে চাইছে শাসক দল- কয়েকদিন ধরেই এই অভিযোগ তুলছিল বিরোধীরা। এ বার তমলুক পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ‘বহিরাগত’ অনুপ্রবেশের অভিযোগে শুক্রবার তৃণমূলের কর্মী বোঝাই গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখাল ওই ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থীর অনুগামীরা। ঘটনার জেরে তমলুক থানা চত্বরে পুলিশের সামনেই ওই ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী দীপু মাইতিকে হেনস্থা ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, সব জেনেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এই ঘটনার পরও পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈনের দাবি, ওই নির্দল প্রার্থী থানায় নিজেই লিখে গিয়েছেন, তাঁর কোনও অভিযোগ নেই। যদিও বহিরাগত তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছেন তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বহিরাগত নিয়ে যাবতীয় অভিযোগ ভিত্তিহীন। মানুষ উৎসবের মেজাজেই ভোট দেবেন।’’

ঘটনা নিয়ে শাসক দলের সমালোচনায় সরব বিরোধী দলগুলি। এ বিষয়ে বিজেপি-র জেলা সাধারণ সম্পাদক সুকুমার দাস বলেন, ‘‘ভোটের আগেই তৃণমূলের বহিরাগত ঢোকানো নিয়ে আমরা পুলিশ-প্রশাসনের কাছে যে অভিযোগ জানিয়েছিলাম এ দিনের ঘটনায় তা সত্যি বলে প্রমাণিত হল। আমরা চাই, তৃণমূলের বহিরাগতদের বিরুদ্ধে পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নিক।’’ একইভাবে, সিপিএমের জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহিরও অভিযোগ, ‘‘সাধারণ মানুষের সমর্থন হারিয়ে তৃণমূল যে বহিরাগতদের নিয়ে সন্ত্রাস করে ভোট করাতে চাইছে এ দিনের ঘটনায় তা প্রকাশ্যে এল। আর পুলিশ-প্রশাসন এইসব ঘটনা আড়াল করতে তৎপর হয়ে উঠেছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ তমলুক শহরের উত্তর চড়া শঙ্করআড়া এলাকায় পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে দু’টি গাড়িতে করে বেশ কয়েকজন তৃণমূল কর্মী আসে। গাড়ি দু’টি বুদ্ধ পার্কের সামনে গিয়ে তৃণমূলের একটি নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনে দাঁড়ায়। এরপরই ওই এলাকায় জড়ো হন স্থানীয় নির্দল প্রার্থী দীপু মাইতির অনুগামীরা। গাড়িতে আসা ‘অচেনা’ তৃণমূল কর্মীদের কাছে তাঁরা এলাকায় আসার কারণ জানতে চান। এরপরই দু’পক্ষের বচসা বাধে। ওই দু’টি গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন দীপুবাবুর অনুগামী কয়েকশো স্থানীয় বাসিন্দা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি গাড়িতে ছিলেন শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদ সদস্য দিবাকর জানা-সহ জনা কয়েক কর্মী ছিলেন। অন্য গাড়িতে ব্লক যুব নেতা সুনীল দেব অধিকারী-সহ কয়েকজন ছিলেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। ইতিমধ্যে একটি গাড়ি সেখান থেকে চলে যায় বলে অভিযোগ। বিক্ষোভের জেরে পুলিশ সুনীলবাবুদের গাড়ি তমলুক থানায় নিয়ে আসে। ওই সময় থানায় আসেন দীপু মাইতি ও তাঁর অনুগামীরাও। থানা চত্বরে দাঁড়িয়ে দীপু মাইতি সাংবাদিকদের সামনে অভিযোগ করেন, ‘‘তৃণমূল বহিরাগতদের এনে দলীয় প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ সেনকে ভোট না দিলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দেখে নেবে বলে হুমকি দেয়। সেই কারণেই স্থানীয় বাসিন্দারা ওইসব লোকেদের আটকে রেখে পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবি জানায়।’’

ঘটনার খবর পেয়ে থানা চত্বরে আসেন দিবাকর জানা, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য উত্তম সাহু, তৃণমূল প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ সেন প্রমুখ। এরপরই ওই গাড়ি থেকে জনা আটেক তৃণমূল কর্মী বেরিয়ে আসেন। থানায় আসেন তমলুকের এসডিপিও রাজ মুখোপাধ্যায়, সার্কেল ইনস্পেক্টর দেবাশিস ঘোষ-সহ পুলিশবাহিনী। দিবাকরবাবু-সহ তৃণমূল কর্মীরা থানা চত্বরে পুলিশের সামনেই দীপু মাইতিকে ঘিরে ধাক্কাধাক্কি করে হুমকি দিতে থাকে। দিবাকরবাবুর দাবি, দলের প্রবীণ প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ সেনের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। তাই দলের জেলা নেতৃত্ব তাঁকে দেখতে গিয়েছিল। এ জন্য উনি (নির্দল প্রার্থী) দলের গাড়ি আটকে রাখবেন? এরকম কোনও বিধি আছে না কি ? দীপু মাইতিকে গ্রেফতার করার দাবিও জানান দিবাকরবাবু। বহিরাগত আনার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে রবীন্দ্রনাথবাবুও বলেন, ‘‘ওই নির্দল প্রার্থীর লোকেরা আমার ও দলের কর্মীদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, দলীয় নেতৃত্বকে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি তিনি জানান। তাই এ দিন তাঁরা এলে তাঁদের আটকে রাখা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্দল প্রার্থীর অনুগামীদের হাতে আটক গাড়ি এক কর্মী পুলিশে অভিযোগ জানিয়ে বলে, কয়েকজন সঙ্গী-সহ তিনি দিদির বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পথে বলাই দাস-সহ ২০-২৫ জন বেআইনিভাবে তাঁদের গাড়ি আটকে রাখে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। যদিও ওই নির্দল প্রার্থী কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি বলে পুলিশ সূত্রে দাবি। নির্দল প্রার্থী দীপু মাইতি বলেন, ‘‘থানার সামনে পুলিশের উপস্থিতিতেই তৃণমূলের লোকেরা যে ভাবে হুমকি দিয়েছে এরপর আর পুলিশের কাছে আর কী অভিযোগ জানাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE