Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
পশ্চিমে উদ্বেগ, সেঞ্চুরি খড়্গপুরের
Coronavirus

সংক্রমণে হাজার পার 

জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘জেলায় কোভিড-পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সংক্রমণ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিমাইচন্দ্র মণ্ডলের কথায়, ‘‘সংক্রমিতদের বেশিরভাগই উপসর্গহীন।’’ 

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২০ ০৫:১৩
Share: Save:

দেখতে দেখতে করোনায় সংক্রমিতের সংখ্যা এক হাজারে পৌঁছল পশ্চিম মেদিনীপুরে। সোমবার স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১,০৩৪।

জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘জেলায় কোভিড-পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সংক্রমণ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিমাইচন্দ্র মণ্ডলের কথায়, ‘‘সংক্রমিতদের বেশিরভাগই উপসর্গহীন।’’

মাত্র মাস দুয়েকের মধ্যে জেলায় করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়েছে। ৭ জুন সংক্রমিতের সংখ্যা সেঞ্চুরি ছুঁয়েছিল। ১০ জুন ডবল সেঞ্চুরি। ১৪ জুলাই সংখ্যাটা ৫০০ ছুঁয়েছিল। আর সোমবার ছুঁল এক হাজার! অর্থাৎ, ১৩ দিনে সংক্রমিতের সংখ্যা দ্বিগুণ হল। এক সময়ে পরিযায়ী শ্রমিক সূত্রে ঘাটাল, দাসপুর, কেশপুর প্রভৃতি এলাকায় সংক্রমণ ছড়িয়েছিল। পরে পরে খড়্গপুর, চন্দ্রকোনা রোড, ডেবরা, বেলদা প্রভৃতি এলাকায় সংক্রমণ ছড়িয়েছে। জেলার সদর শহর মেদিনীপুরেও বেশ কয়েকজন সংক্রমিত হয়েছেন। করোনা সংক্রমিতের মৃত্যুও হয়েছে। জেলার জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, আনলক-পর্বের শুরু থেকে অনেকের মধ্যে গা-ছাড়া মনোভাব দেখা গিয়েছে। ফলে, এই সময়ের মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরেও লাফিয়ে বেড়েছে করোনা সংক্রমণ। তা ছাড়া, নমুনা পরীক্ষাও বেশি হচ্ছে।

জেলার যে সব এলাকায় আক্রান্তের বাড়বাড়ন্ত তার অন্যতম খড়্গপুর। রেলশহরে করোনা যোদ্ধা পুলিশ আধিকারিকও সংক্রমিত হয়েছেন। আর তাঁকে ধরে খড়্গপুরে আক্রান্ত সংখ্যা একশো ছুঁয়েছে। রবিবার রাতে আসা রিপোর্ট অনুয়ায়ী খড়্গপুর মহকুমায় ৪ জন নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তবে রেলশহরে গ্রাফ কিছুটা স্বস্তির। এত দিন যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৬ জন করে আক্রান্ত হচ্ছিলেন, সেখানে এ দিন শহরে একজন আক্রান্ত হয়েছেন।

খড়্গপুর শহরের ইন্দা রামকৃষ্ণপল্লির বাসিন্দা বছর ছাপান্নর ওই পুলিশ আধিকারিকের উপসর্গ আবার উদ্বেগ বাড়িয়েছে চিকিৎসকদের। জ্বর, কাশি, সর্দি, গাঁটে ব্যথা নয়, হুগলির খানাকুল থানা থেকে ফেরা পুলিশের এই এএসআই-এর ছিল গ্যাস-অম্বল ও ডায়েরিয়ার উপসর্গ। ফলে, করোনা পরীক্ষাতেও বিলম্ব হয়েছে। আক্রান্ত পুলিশ আধিকারিকের ছেলে বলেন, “বাবার গ্যাস-অম্বলের সমস্যা হওয়ায় গত ১৯ জুলাই ছুটি নিয়ে খড়্গপুরে বাড়িতে ফিরে আসেন। জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথার মতো কোনও করোনার উপসর্গ ছিল না। শহরের এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাই। কিন্তু ওষুধ খেয়েও অবস্থার উন্নতি না হয়নি। গত ২৪ জুলাই মুখের স্বাদ চলে যাওয়ায় বাবার করোনার নমুনা দিতে নিয়ে যাই।” রিপোর্ট পজ়িটিভ আসার পরে তাঁকে শালবনির করোনা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “এখন করোনার উপসর্গ হিসাবে ডায়েরিয়া দেখা দিচ্ছে। এতে শারীরিক দুর্বলতা অনেক বেশি বেড়ে যায়।”

ডেবরা ও খড়্গপুর-১ ব্লক মিলিয়ে আরও তিনজন করোনা পজ়িটিভ হয়েছেন। ডেবরায় বরাটিতে আক্রান্ত হয়েছেন এক মহিলা-সহ দু’জন। ওই পরিবারে আগেও একজন কোয়াক ডাক্তার আক্রান্ত হয়েছিলেন। খড়্গপুর-১ ব্লকের সালুয়া ইএফআর ক্যাম্পে এক জওয়ান সংক্রমিত হয়েছেন। সালুয়ায় প্রশিক্ষণে এসে আক্রান্ত হওয়া পুলিশকর্মীদের যোগেই তাঁর সংক্রমণ বলে বলে মনে করা হচ্ছে। জেলার অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস পাল বলেন, “আক্রান্তের সংখ্যা মহকুমায় কিছুটা কমেছে। যে চারজন আক্রান্ত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে খড়্গপুর শহরের পুলিশ আধিকারিক ভিন্‌ জেলা থেকে বাড়িতে ফিরেছিলেন। বাকি তিনজনের ক্ষেত্রে আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে আসার ইতিহাস রয়েছে।” তিনি আরও জুড়ছেন, “এত ঘন বসতিপূর্ণ শহরে একশো জন আক্রান্ত খুব উদ্বেগের নয়। লকডাউন করে আমরা সেটুকু শৃঙ্খলও ভাঙার চেষ্টা করছি। মানুষকেও অনেকবেশি সচেতন হতে হবে।” তিনি আরও জুড়ছেন, “এত ঘন বসতিপূর্ণ শহরে একশো জন আক্রান্ত খুব উদ্বেগের নয়। লকডাউন করে সেটুকু শৃঙ্খলও ভাঙার চেষ্টা করছি।”

সোমবার ঘাটাল-দাসপুরেও নতুন করে ছ’জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ঘাটাল শহরের দুই মহিলা রয়েছেন। সকলকেই শালবনি করোনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ দিন বীরসিংহ গ্রামীণ হাসপাতালে জরুরি পরিষেবা চালু হয়েছে। তবে এখনও বহিবির্ভাগে পরিষেবা বন্ধই রয়েছে। ঘাটাল সুপার স্পেশালিটিতেও মেডিসিন, স্ত্রী ও প্রসূতি বিভাগে রোগী ভর্তি স্বাভাবিক হয়নি। বীরসিংহ হাসপাতালের বিএমওএইচ মনোজিৎ বিশ্বাস-সহ ৪৩ জনের করোনা রিপোর্ট অবশ্য নেগেটিভ এসেছে। ঘাটালেও বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌমশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, “বীরসিংহ হাসপাতালে পরিষেবা চালু হয়েছে। আর ঘাটালে ভর্তি বন্ধ হয়নি। দু’-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE