Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

খুনে জড়িত! শীতলের ‘অভিনয়ে’ হতবাক রাজশহর

ওই রাতে নিজের ফেসবুকে শীতল কুরবান খুন হওয়ার খবর পোস্ট করেন। শুধু তাই নয়, কুরবানের শেষযাত্রাতেও উপস্থিত ছিলেন শীতল। মাইশোরা বাজারে কুরবান হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত ধিক্কার মিছিলেও পা মেলান শীতল। 

শীতলের গুদামে রাজাকে সঙ্গে নিয়ে তদন্তে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

শীতলের গুদামে রাজাকে সঙ্গে নিয়ে তদন্তে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:০৯
Share: Save:

এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা কুরবান শা খুন হওয়ার পরে দলের সভায় ঘটনার নিন্দা প্রকাশ করে ‘দুরন্ত’ ভাষণ দিয়েছিলেন। তাঁর ‘কুরবান প্রীতি’ দেখে সে দিন তৃণমূলের পাঁশকুড়া ব্লক নেতৃত্ব তাঁকে দলের মাইশোরা অঞ্চলের ১১ জনের নতুন কোর কমিটিতে স্থানও দেন। সেই নেতাই কি না কুরবান খুনের চক্রী! হতবাক দলীয় নেতা থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা।

কুরবান শা খুনের পুনর্নির্মাণের জন্য বৃহস্পতিবার শ্যুটার তসলিম আরিফ ওরফে রাজা এবং দীপক চক্রবর্তীকে মাইশোরা বাজার এলাকায় আনে পুলিশ। সে সময় রাজা পুলিশকে তাদের আশ্রয়স্থল হিসাবে দেখিয়েছিল রাজশহর গ্রামের ফেরার প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য শীতল মান্নার দোকানের গুদাম ঘরকে। এর পরেই কুরবানের খুনের ঘটনায় শীতলের যোগ থাকার কথা প্রকাশ্যে এসেছে। বর্তমানে অবশ্য শীতল এলাকা ছাড়া।

স্থানীয় সূত্রের খবর, গত ৭ অক্টোবর কুরবানের খুন হওয়ার কিছুক্ষণ পরই শীতল এবং আরেক ফেরার নেতা গোলাম মেহেন্দি ওরফে কালু মাইশোরা বাজারে এসেছিলেন। ওই রাতে নিজের ফেসবুকে শীতল কুরবান খুন হওয়ার খবর পোস্ট করেন। শুধু তাই নয়, কুরবানের শেষযাত্রাতেও উপস্থিত ছিলেন শীতল। মাইশোরা বাজারে কুরবান হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত ধিক্কার মিছিলেও পা মেলান শীতল।

দলীয় সূত্রের খবর, ১১ অক্টোবর রাজশহর-মোহনপুর বুথ এলাকায় কুরবান হত্যার প্রতিবাদে মৌন মিছিল অনুষ্ঠিত হয় এই শীতলের নেতৃত্বেই। ওই সন্ধ্যায় রাজশহর বাজারে নিহতের দাদা আফজল শা’কে নিয়ে গিয়ে তাঁর ছবিতে মাল্যদান ও মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি পালন করেন তিনি। ১২ অক্টোবর পাঁশকুড়া ব্লক তৃণমূলের উপস্থিতিতে মাইশোরায় তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে নতুন কোর কমিটি গঠন করা হয়। সেখানেই শীতল ‘দুরন্ত’ ভাষণ দেন। কিন্তু দীপককে পুলিশ আটক করার পরেই শীতল এলাকা থেকে পালিয়ে যান বলে অভিযোগ।

শ্যুটার রাজার সঙ্গে শীতলের যোগ সামনে আসার পরেই ঠাণ্ডা মাথায় শীতলের ওই ‘অভিনয়ে’ তাজ্জব রাজশহরের মানুষজন। রাজশহর গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘কুরবান খুন হওয়ার পর অনেকের কাছে শীতলকে চোখের জলও ফেলতে দেখেছি। এখন ভাবতে অবাক লাগছে ও এই খুনে যুক্ত।’’

স্থানীয় সূত্রে খবর, রাজশহরের বাসিন্দা শীতলের রাজশহর বাজারে একটি ফুলের আড়ত রয়েছে। রয়েছে গাড়ি ব্যবসাও। তিনি এলাকায় আগে সিপিএম কর্মী বলে পরিচিত ছিলেন। ২০১১ সালে পরিবর্তনের পর শীতল নাম লেখান তৃণমূলে। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে শীতল রাজশহর-মোহনপুর বুথ থেকে তৃণমূলের প্রতীকে জেতেন। ২০১৩ সালে মাইশোরা গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের সময় তৎকালীন তৃণমূল নেতা তথা কুরবান খুনের মূল চক্রী আনিসুর রহমানের গোষ্ঠীর সঙ্গে কুরবানের গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ বাধে। সে সময় শীতল আনিসুরের পক্ষ নেন বলে দাবি কুরবান অনুগামীদের। আনিসুর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর শীতল তলে তলে আনিসুরের সাথে যোগাযোগ রেখে এলাকায় বিজেপির হয়েই প্রচার করতেন বলে দলীয় নেতৃত্বের অভিযোগ।

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজশহর-মোহনপুর বুথে শীতলের স্ত্রী কাকলিকে টিকিট দেন কুরবান। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতেন কাকলি। মাইশোরা অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি স্বপন খাঁড়া বলেন, ‘‘শীতল খাতায় কলমে তৃণমূল করলেও মন পড়ে থাকত আনিসুরের দিকে। গত লোকসভা নির্বাচনে শীতল রাতে এলাকায় বিজেপির হয়ে প্রচারও করেছে। কুরবানদা সব জেনেও সংশোধনের আশায় ওকে সুযোগ দিয়েছিলেন। আর শীতল সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ওঁকে খুন করালো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Panskura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE