স্বনির্ভর: টোটো চালাচ্ছেন ঝুমা পাত্র। নিজস্ব চিত্র
টোটোচালক স্বামী সংসারের খরচ দিতেন না। সংসার চালানোই মুশকিল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু জীবনযুদ্ধে ভেঙে পড়েননি ঝাড়গ্রামের ঝুমা পাত্র। বরং শিখে নিয়েছেন টোটো চালানো। ঝাড়গ্রাম জেলায় একমাত্র মহিলা টোটো চালক বছর আটত্রিশের ঝুমা।
একসময় বহু গঞ্জনা ও লাঞ্ছনা সইতে হয়েছে ঝুমাকে। কিন্তু সেসব কথায় আমল দেননি তিনি। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছোট মেয়েকে একদিন স্বনির্ভর করার স্বপ্ন দেখেন ঝুমাদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘স্বপ্নটা দেখি বলেই পুরুষদের ভিড়ে লড়াইটা চালাতে পারছি।”
ঝাড়গ্রাম শহরের বাছুরডোবায় ঝুমাদেবীর বাপের বাড়ি। বছর কুড়ি আগে বাঁকুড়ার বক্সী এলাকায় মিষ্টি দোকানের এক কারিগরের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। অভিযোগ, পরপর দু’টি কন্যা সন্তান হওয়ায় শ্বশুরবাড়ির লোকজন অত্যাচার শুরু করেন। ঝাড়গ্রামে ভাড়া বাড়িতে স্বামীকে নিয়ে সংসার পাতেন। কিন্তু অভিযোগ, কিছুদিনের মধ্যেই ফের অত্যাচার শুরু করেন স্বামী। এমনকী, গায়ে কেরোসিন ঢেলে তাঁকে পুড়িয়ে মারারও চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। কয়েক বছর ধরে কদমকাননে অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া মাটির বাড়ি তৈরি করে বসবাস করছেন তিনি। ঝুমাদেবীর কথায়, “মেয়ের মা হওয়ার অপরাধে শ্বশুরবাড়িতে ও স্বামীর কাছে অত্যাচার সহ্য করেছি। স্রেফ মেয়ে দু’টোকে মানুষ করার স্বার্থে মুখ বুজে অত্যাচার সহ্য করেছি।” ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে স্বামীকে গত বছর একটি টোটো কিনে দিয়েছিলেন। কিন্তু একটা টাকাও স্বামী দিচ্ছিলেন না। বাধ্য হয়ে গত বছর নভেম্বরে টোটো নিয়ে নিজেই রাস্তায় নামেন ঝুমাদেবী।
কখনও ভাতে লঙ্কার গুঁড়ো মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। কখনও চরিত্র নিয়ে বদনাম করা হয়েছে। তবু হার মানেননি ঝুমাদেবী। শেষ পর্যন্ত হার মেনে গত জানুয়ারিতে ঝুমাদেবীকে ছেড়ে চলে গিয়েছেন তাঁর স্বামী। ঝুমাদেবী এখন প্রতিদিন ঘরের কাজকর্ম সেরে গরুর পরিচর্যা সেরে সকালে টোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। বিকেলে বাড়ি গিয়ে এক মুঠো ভাত খেয়ে ফের টোটো নিয়ে রাস্তায়। রাত ৯টা নাগাদ বাড়ি ফিরে আসেন। কম বাঁকা কথা শুনতে হয়নি ঝুমাদেবীকে। এমনকী, টোটোচালকদের একাংশের অভিযোগ, কম টাকায় যাত্রী পরিবহণ করেন তিনি। যদিও ঝুমাদেবীর কথায়, ‘‘সত্ পথে রোজগার করি। অতিরিক্ত লাভের লোভটা করি না।”
বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন ঝাড়খণ্ডের বহড়াগোড়ায়। ছোট মেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তাঁকে নিয়েই যাবতীয় স্বপ্ন ঝুমাদেবীর। তাঁর কথায়, ‘‘অশান্তির সংসারের বড় মেয়েটাকেও পড়াতে পারিনি। ছোট মেয়েটা এবার মাধ্যমিক দেবে। ওকে উচ্চ শিক্ষিত করতে চাই।’’
জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসবে মেয়ে। আর প্রতিদিনই জীবনের বড় পরীক্ষায় বসছেন মা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy