Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জোট প্রার্থী কে, ধন্দ কাটছে না ঝাড়গ্রামে

রণভূমিতে তিনি যে একা নন, বুঝিয়ে দিলেন সুব্রত ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার মা আনন্দময়ীর প্রসাদী ফুল মাথায় নিয়ে মিছিল করে এসে ঝাড়গ্রাম আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেন বর্ষীয়ান এই কংগ্রেস নেতা।

মনোনয়ন জমা দেওয়ার পথে কংগ্রেস প্রার্থী সুব্রত ভট্টাচার্য। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

মনোনয়ন জমা দেওয়ার পথে কংগ্রেস প্রার্থী সুব্রত ভট্টাচার্য। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৬ ০২:২৭
Share: Save:

রণভূমিতে তিনি যে একা নন, বুঝিয়ে দিলেন সুব্রত ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার মা আনন্দময়ীর প্রসাদী ফুল মাথায় নিয়ে মিছিল করে এসে ঝাড়গ্রাম আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেন বর্ষীয়ান এই কংগ্রেস নেতা।

এ দিন সুব্রতবাবুর সমর্থনে জঙ্গলমহলের কংগ্রেস কর্মীরা ধামসা-মাদল বাজিয়ে মিছিল করেন। সুব্রতবাবুর সঙ্গে মনোনয়ন জমা দিতে আসেন নয়াগ্রাম আসনের জোট প্রার্থী কংগ্রেসের মনোজকুমার টুডু। ওই মিছিলে লাল ঝাণ্ডা নিয়ে হাজির ছিলেন সিপিএমের কয়েকজন নেতা-কর্মীও। ফলে, ঝাড়গ্রাম আসনে জোটের জটিলতা আরও বাড়ল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। মঙ্গলবার ঝাড়গ্রাম আসনে জোটের প্রার্থী হিসেবে ঝাড়গ্রাম জেলা কংগ্রেসের সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যের নাম ঘোষণা করে কংগ্রেস। তার পরেও ঝাড়গ্রাম আসনে বাম জোটের প্রার্থী হিসেবে ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর নেত্রী চুনিবালা হাঁসদাকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত অনড় রয়েছে সিপিএম।

বুধবার চুনিবালাকে নিয়ে লালগড়ের বেলাটিকরিতে যৌথ মিছিল ও বুথ কর্মিসভা করেন জেলা সিপিএমের শীর্ষ নেতারা। জঙ্গলমহলে কংগ্রেসের কোনও সংগঠন নেই বলে ওই কর্মিসভায় কটাক্ষও করা হয়। কিন্তু এদিন সুব্রতবাবুর সমর্থনে সিপিএমের একাংশ কংগ্রেসের মিছিলে যোগ দেওয়ায় বামেদের অস্বস্তি আরও বেড়েছে। সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক তরুণ রায় জানান, রাজ্যস্তরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঝাড়গ্রাম আসনে চুনিবালাকে এবং নয়াগ্রাম আসনে কংগ্রেসকে সমর্থন করা হচ্ছে। তরুণবাবু বলেন, “এখন শুনছি কংগ্রেসের সুব্রত ভট্টাচার্য ঝাড়গ্রাম আসনে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। এরপরই কী হবে তা নিয়ে আমি মন্তব্য করতে পারব না। এখনও পর্যন্ত ঝাড়গ্রাম আসনে চুনিবালাই জোটের প্রার্থী। রাজ্যস্তরে অন্য সিদ্ধান্ত হলে তেমন পদক্ষেপ করা হবে।”

এ দিন সুব্রতবাবুর মিছিলে সিপিএম কর্মীদের যোগদান প্রসঙ্গে তরুণবাবুর ব্যাখ্যা, নয়াগ্রাম আসনের কংগ্রেস প্রার্থীর সমর্থনে নয়াগ্রামের বাম নেতা-কর্মীরা কংগ্রেসের মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। মিছিলে যোগ দেওয়া সিপিএমের নয়াগ্রাম জোনাল কমিটির সম্পাদক মনোরঞ্জন মাহাতো বলেন, “জোটের মিছিলে যোগ দিয়েছিলাম।” সেই মিছিলে ঝাড়গ্রাম আসনের কংগ্রেস প্রার্থী সুব্রত ভট্টাচার্য ছিলেন স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলে মন্তব্য করতে চাননি মনোরঞ্জনবাবু।

সিপিএম জেলা সম্পাদক তরুণবাবুর সাফাই, “সুব্রতবাবু তো কংগ্রেসের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি। তাঁকে বাদ দিয়ে তো আর কংগ্রেসিরা মিছিল করবেন না। বিষয়টি নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে।” তবে এ দিন দেখা গিয়েছে, ঝাণ্ডা ছাড়াই বেলপাহাড়ির কয়েকজন বাম কর্মী সুব্রতবাবুর মিছিলে হেঁটেছেন। এক সময় সুব্রতবাবুর হস্তক্ষেপে মূলস্রোতে ফেরা প্রাক্তন মাওবাদীদেরও কয়েকজন মিছিলে ছিলেন। মিছিলে সামিল হওয়া এক সিপিএম কর্মী বলেন, “চুনিবালাকে সমর্থনের বিষয়ে দলের সিদ্ধান্তে আমরা খুশি নই। তাই সুব্রতবাবুর সমর্থনে মিছিলে হেঁটেছি।” কিন্তু ঝাড়গ্রামে জোটের প্রার্থী যে কে সেটাই ভোটারদের কাছে স্পষ্ট হচ্ছে না। সুব্রতবাবু বলছেন, “রাজ্যস্তরে জোটটা কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের মধ্যে হয়েছে। এর বাইরে বাকিরা অপ্রাসঙ্গিক। কোথাও হয়তো একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।”

বছর বাষোট্টির সুব্রতবাবু ঝাড়গ্রাম জেলা কংগ্রেসের সভাপতি হলেও পূজার্চ্চনাই তাঁর পেশা। সুব্রতবাবুর গ্রহণযোগ্যতা যে প্রশ্নাতীত তা কবুল করেন তাঁর রাজনৈতিক শত্রুরাও। বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতাও তিনি। তবে, জোটের জটিলতা বাড়ায় রীতিমতো উজ্জীবিত ঝাড়গ্রাম আসনের তৃণমূল প্রার্থী তথা আদিবাসী উন্নয়নমন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা। তাঁর কটাক্ষ, “জোট কোথায়, পুরোটাই তো ঘোঁট। আমাকে বিপুল ভোটে জেতানোর দায়িত্বটা দেখছি বিরোধীরাই কাঁধে
তুলে নিয়েছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CPM Congress Jhargham Assembly Election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE