বিপন্ন: ঝাড়গ্রামের কদম কাননে রেলের তৃতীয় লাইন তৈরির জন্য কাটা হয়েছে গাছ। ছবি: দীপাঞ্জন মাহাত ইনসেটে, সবুজের শপথ। —নিজস্ব চিত্র।
অরণ্যশহরের সবুজ বাঁচাতে নাগরিক কনভেনশন হল ঝাড়গ্রাম শহরে। রবিবার সন্ধ্যায় অরণ্যশহরের বলাকা মঞ্চে ওই কনভেনশনের আয়োজনে ছিল ‘ঝাড়গ্রাম নাগরিক উদ্যোগ’। বিভিন্ন পেশার নাগরিক ও বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে আবেদন জানানো হল— সরকারি আইন মেনেই গাছ বাঁচানোর জন্য কার্যকরী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
এ দিনের কনভেনশনে আলোচনায় ছিলেন চিকিৎসক সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়, সমাজকর্মী নভেন্দু হোতা, শিক্ষাব্রতী উপেন পাত্র, অঙ্কুর মণ্ডল প্রমুখ। কলকাতা ও ঝাড়খণ্ডের বেশ কয়েকজন পরিবেশকর্মী, যাঁদের শিকড় রয়েছে এই অরণ্য শহরে, এসেছিলেন তাঁরাও। বৃষ্টির মধ্যেও ভিড় ছিল চোখের পড়ার মতো। ‘ঝাড়গ্রাম নাগরিক উদ্যোগ’-এর আহ্বায়ক শ্রীমন্ত রাউৎ বলেন, ‘‘ঝাড়গ্রামে অরণ্য ধ্বংসের বিরুদ্ধে নাগরিকদের সচেতন করার পাশাপাশি গণ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। আইন মেনেই পথে নেমে সরব প্রতিবাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’
ঠিক হয়েছে, শাল গাছ কাটার বিরুদ্ধে প্রচার ও প্রতিবাদ চলবে। উন্নয়নের নামে পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও জীব বৈচিত্র্যের উপর যে কোনও ক্ষতিকর কার্যকলাপের বিরুদ্ধে, শালগাছ বাঁচাতে আইনি লড়াই চলবে। নতুন শাল চারা রোপণ ও অবশিষ্ট শালগাছগুলিকে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পুরসভা ও সংশ্লিষ্ট দফতরকে নিতে হবে বলেও কভেনশনে দাবি তোলা হয়। রাস্তার ধারে মরা শালগাছ কেটে তার দশ গুণ গাছ রোপণ এবং ব্যক্তিগত স্তরে নাগরিকদের সাধ্যমতো গাছ লাগাতে হবে ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে বলে জানানো হয়েছে।
নব্বইয়ের দশকে ঝাড়গ্রাম শহরের শাল গাছ বাঁচানোর জন্য আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন অরণ্যশহরের এক পরিবেশ কর্মী পেশায় স্কুল শিক্ষক প্রয়াত বিজন ষড়ঙ্গী। বিজনের আন্দোলন সফল না হলেও আজ থেকে কুড়ি বছর আগে সেটাই ছিল সবুজ ধ্বংসের বিরুদ্ধে ঝাড়গ্রামের প্রথম প্রতিবাদ। বিজন নেই। তাঁর স্ত্রী অপরাজিতাদেবী ও মেয়ে সংহতি ঝাড়গ্রামের বাইরে থাকায় কনভেনশনে হাজির থাকতে পারেননি। তবে, তাঁদের পাঠানো এক লিখিত বিবৃতি কনভেনশনে পাঠ করা হয়। ঝাড়গ্রামের পরিবেশ কর্মী অমৃত পৈড়া বলেন, ‘‘প্রয়াত পরিবেশ কর্মী বিজন ষড়ঙ্গী যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন, দু’দশক পরে হলেও, সেই আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার জন্য কাজ করবে ঝাড়গ্রাম নাগরিক উদ্যোগ।’’
কয়েকদিন আগে চন্দ্রির একটি স্কুলে বট গাছে বাজ পড়ায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যায় ১৫ জন ছাত্র ছাত্রী। এই বিষয়টি উল্লেখ করে গাছের প্রয়োজনীয়তার কথা আলোচিত হয় কনভেনশনে। কনভেনশনে ঝাড়গ্রামের বাস্তুতন্ত্র ও জীব বৈচিত্র্য বাঁচিয়ে রেখে উন্নয়নের পক্ষে সওয়াল করেন বক্তারা।
বনাঞ্চলের মধ্যে গড়ে ওঠা ঝাড়গ্রাম শহরের সবুজের পরিধি উদ্বেগজনক হারে কমে গিয়েছে। গত পাঁচ-ছ’বছরে উন্নয়নের দোহাই দিয়ে শহরের সরকারি জমি থেকে অজস্র শালগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। বনভূমির শ্রেণি চরিত্র বদলে দিয়ে সেই জমির কয়েক হাজার শালগাছ কেটে দিয়ে এসপি অফিস ও জেলা পুলিশের সদর দফতর তৈরি হচ্ছে। টাটা-খড়্গপুর শাখার রেলের তৃতীয় লাইন বসানোর জন্য কদমকানন থেকে ডিয়ারপার্ক যাওয়ার রাস্তায় কয়েক হাজার শাল ও নানা ধরনের বহু পুরনো গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। কনভেনশনের বক্তারা বলেন, এক সময়ের সবুজের ছাদরে মোড়া ছিল অরণ্যশহর। সেই সবুজ ছাদরে এখন অজস্র ফুটো। বেসরকারি ও রায়তি জমির অজস্র গাছ কেটে মাথা তুলেছে কংক্রিটের বহুতল। কার্যত অরণ্যের ধ্বংসযজ্ঞ চলছে অরণ্যশহরে। তাই সবুজ রক্ষায় গণ আন্দোলনের শপথ নেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy