এনক্লোজারে বেগম। —নিজস্ব চিত্র।
কথায় বলে বৃদ্ধস্য তরুণী ভার্যা। তবে তাতেই তাল কাটছে বারবার!
এই তো কয়েক মাস আগের কথা। সোহাগ করে বাদশার কাছে গিয়েছিল বেগম। কিন্তু বাদশা এমন তেড়ে এসেছিল যে প্রাণ বুঝি যায় যায়। অগত্যা জলাশয়ে বাদশা-বেগমের মাঝে শক্তপোক্ত জাল দিয়ে বিভাজিকা তৈরি করে দিয়েছিলেন ঝাড়গ্রাম চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। মাস খানেক আগের আকাশ ভাঙা বৃষ্টিতে জলাশা উপচে গিয়ে অবশ্য মুছে দিয়েছিল সেই বিভাজিকা। ভেসে ফের বাদশার কাছে চলে গিয়েছিল বেগম। হয়তো ভেবেছিল এতদিন একা থেকে বাদশার মন বোধহয় পাল্টেছে। কিন্তু কোথায় কী! ফের আক্রমণাত্মক বাদশা। বেগমের লেজের বাঁ-দিকে মোক্ষম কামড়ও বসিয়েছে সে। বেগমকে তাই পাকাপাকি ভাবে আলাদা জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করা হল। তার চিকিত্সাও হচ্ছে।
বাদশা-বেগম দু’জনই কুমির। ঝাড়গ্রামের জঙ্গলমহল জুলজিক্যাল পার্কে বছর দশেক ধরে রয়েছে পুরুষ কুমিরটি। বছর দুয়েক আগে আলিপুর চিড়িয়াখানা থেকে একটি কমবয়সী পুরুষ ও স্ত্রী কুমির পাঠানো হয়েছিল ঝাড়গ্রামে। দো মালি-এক ফুলের দ্বন্দ্ব বাধতে দেরি হয়নি। দুই পুরুষ কুমিরের লড়াইয়ে মৃত্যু হয় নবাগত পুরুষ কুমিরটির। সে থেকে বয়স্ক পুরুষ কুমিরটির সঙ্গে একই জলাশয়ে ছিল স্ত্রী কুমিরটি। সরকারি ভাবে নামকরণ না হলেও চিড়িয়াখানার কর্মীরা ওদের নাম দিয়েছেন বাদশা আর বেগম। কিন্তু ইদানীং সঙ্গিনীকে সহ্য করতে পারছিল না বাদশা। আর তাতেই বেধেছে বিপত্তি।
বন্যপ্রাণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অসম বয়সের জন্যই সঙ্গিনীকে পছন্দ হচ্ছে না বাদশার। বেগমেরও মন ভার। শুক্রবার বিকেলে চিকিৎসার সময় চিড়িয়াখানার কর্মী সাহেবরাম মুর্মু বেগমের মুখ টিপে ধরে রেখেছিলেন রোজকার মতো। সুযোগ বুঝে সাহেবরামের হাত কামড়ে দিয়েছিল বেগম। অল্পের জন্য বড় বিপদ থেকে বেঁচেছেন সাহেবরাম।
দীর্ঘদিন চিড়িয়াখানায় বন্যপ্রাণীর চিকিৎসা করছেন সরকারি প্রাণি চিকিত্সক চঞ্চল দত্ত ও সুলতা মণ্ডল। তাঁদের ধারণা, “কম বয়সের দোহারা সঙ্গিনীকে মনে ধরছে না বয়স্ক পুরুষ কুমিরটির। দীর্ঘদিন একা থাকার অভ্যাস থেকেও বেরিয়ে আসতে পারছে না সে। স্ত্রী কুমিরটিও ক্ষতের যন্ত্রণায় ক্ষিপ্ত রয়েছে।’’ চিড়িয়াখানার অধিকর্তা তথা ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ হলাইচ্চি বলেন, “পুরুষ কুমিরটির কামড়ে জখম হওয়ায় স্ত্রী কুমিরটিকে আলা এনক্লোজারে রেখে চিকিৎসা করানো হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy