Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

শ্রমিকের জয়গান, বিশ্বকর্মা পুজোয় মানুষই দেবতা!

মানব বিশ্বকর্মা রূপে পুজো করা হয়েছে বেলদা থানার ঠাকুরচকের দীপ্তেন্দু দত্ত, রমনী মাইতি ও গোষ্ঠবিহারী দোলাইকে। দীপ্তেন্দু পেশায় বাসের কন্ডাক্টর, রাজমিস্ত্রির কাজ করেন রমনী। আর কাঠ দিয়ে দেবতার মূর্তি গড়েন কাকরাজিতের গোষ্ঠবিহারী দোলাই।

দাঁতনে বিশ্বকর্মা রূপে পুজো করা হল তিন শ্রমজীবীকে। নিজস্ব চিত্র

দাঁতনে বিশ্বকর্মা রূপে পুজো করা হল তিন শ্রমজীবীকে। নিজস্ব চিত্র

বিশ্বসিন্ধু দে
দাঁতন শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:২৭
Share: Save:

কুমারীকে মাতৃরূপে আরাধনা হয় দুর্গাপুজোয়। তা বলে মানব বিশ্বকর্মা!

দাঁতন ১ এর গড়মনোহরপুরের সুন্দরপুর শিবমুনি যোগাশ্রমে মঙ্গলবার দেখা গেল এমনই দৃশ্য। অবশ্য এ বারই প্রথম নয়। বিগত সতের বছর ধরে মানব বিশ্বকর্মার পুজো করে আসছে এই আশ্রম। তিনজন শ্রমিককে বিশ্বকর্মার সাজে সাজিয়ে রীতিমতো মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে পুজো করা হয়। আশ্রম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের ৮১ ও ৮২ সুক্তে বিধিসম্মত এই পুজো। কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই অংশের ব্যাখ্যা করলে দাঁড়ায়, আসল দেবতা তো শ্রমজীবী মানুষ। তাদের পুজো করা দরকার।

এ বছর মানব বিশ্বকর্মা রূপে পুজো করা হয়েছে বেলদা থানার ঠাকুরচকের দীপ্তেন্দু দত্ত, রমনী মাইতি ও গোষ্ঠবিহারী দোলাইকে। দীপ্তেন্দু পেশায় বাসের কন্ডাক্টর, রাজমিস্ত্রির কাজ করেন রমনী। আর কাঠ দিয়ে দেবতার মূর্তি গড়েন কাকরাজিতের গোষ্ঠবিহারী দোলাই। সামনে সাজানো ফুল, বেলপাতা। বেদের মন্ত্র উচ্চারণ করছেন পুরোহিত। বিশ্বকর্মা রূপে পুজো পেয়ে অন্যরকম অনুভুতির কথা জানালেন দীপ্তেন্দু। তাঁর কথায়, ‘‘সারাবছর ধরে কাজ করি কেউ তেমন সম্মান দেয় না। মানুষকে পুজো করা হচ্ছে এখানে। বিগত সাতবছর ধরে পুজো করছেন এঁরা। মানুষই তো সব। তাই এমন পুজো পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছে।’’ আর আশ্রম পরিচালক অনিল প্রধান বলেন, ‘‘বিশ্বের সমস্ত কর্ম যিনি সম্পন্ন করেন তিনিই বিশ্বকর্মা। বর্তমানে কারা বিশ্বের সমস্ত কাজ করছেন? তাই মানুষই আসল দেবতা। কাঠের মূর্তিতে ফুল দেওয়ার পাশাপাশি মানুষকে একদিন আরাধনা করে শ্রদ্ধা জানালাম।’’

কিন্তু বিশ্বকর্মা পুজোর পরের দিনে এই আয়োজন? আশ্রম সূত্রে খবর, প্রতিবছর এই আশ্রম বিশ্বকর্মা পুজোর পরের দিন মহানাম যজ্ঞ ও মানব বিশ্বকর্মা পুজোর আয়োজন করে। হয় মহোৎসবও। দূর দূরান্তর থেকে বহু মানুষ পুজো দেখতে আসেন। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন বাস চলে না বলেই পরের দিনে আয়োজন।

‘মানুষই দেবতা গড়ে। তাহারই কৃপার পরে করে দেব মহিমা নির্ভর’। কবি কালিদাস রায়ের ভাবনা যেন বাস্তব রূপ পায় শিবমুনি যোগাশ্রমে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE