Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মার্কিন ছাত্রীর টাকায় গ্রন্থাগার দাসপুরের স্কুলে

শিকড়ের টানে সেই ঘাটালের স্কুলের পাশেই দাঁড়াল মার্কিন মুলুকে বেড়ে ওঠা দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী দীপশ্রেয়া সুর। তার পুরস্কারের টাকায় গ্রন্থাগার পেতে চলেছে ঘাটাল মহকুমার দাসপুর ১ ব্লকের সীমানা প্রাণকৃষ্ণ হাইস্কুল।    

দীপশ্রেয়া সুর

দীপশ্রেয়া সুর

অভিজিৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৭ ০১:১৫
Share: Save:

জন্ম থেকে সে ক্যালিফোর্নিয়াবাসী। শিকড় অবশ্য এ দেশে। বাবার আদি বাড়ি বিহারে, আর মা পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের মেয়ে। শিকড়ের টানে সেই ঘাটালের স্কুলের পাশেই দাঁড়াল মার্কিন মুলুকে বেড়ে ওঠা দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী দীপশ্রেয়া সুর। তার পুরস্কারের টাকায় গ্রন্থাগার পেতে চলেছে ঘাটাল মহকুমার দাসপুর ১ ব্লকের সীমানা প্রাণকৃষ্ণ হাইস্কুল।

দীপশ্রেয়া ক্যালিফোনির্য়ার সানিভেল এলাকার ‘নোত্র দাম সান হোসে হাইস্কুল’র ছাত্রী। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় নিজের উদ্যোগে কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করে সে। সেই সূত্রে মেলে ‘গার্লস স্কাউট গোল্ড অ্যাওয়ার্ড’, যার পুরস্কারমূল্য ভারতীয় অঙ্কে ৫ লক্ষ টাকা। গোটা টাকাটাই দাসপুরের স্কুলে গ্রন্থাগার তৈরিতে দিয়েছে দীপশ্রেয়া। পুরস্কারের শর্তই ছিল, ওই টাকায় যে কোনও সামাজিক উন্নয়ন করতে হবে।

আরও পড়ুন: রূপ ফিরবে ঠিক, আশায় খাঁন্দারানি

দীপশ্রেয়ার বাবা বাল্মীকি সুর পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। কর্মসূত্রে তিনি আমেরিকা প্রবাসী। দীপশ্রেয়ার জন্ম ক্যালিফোর্নিয়াতেই। তার মামাবাড়ি ঘাটাল মহকুমার চন্দ্রকোনার গোয়ালডাঙায়। মামা দেবব্রত হাজরা দাসপুরের ওই স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক। স্কুলে গ্রন্থাগার নেই বলে মামার কাছে শুনেছিল দীপশ্রেয়া। তাই সে কাজে পুরস্কারের টাকা দেবে বলে মনস্থির করে দীপশ্রেয়া।

কিন্তু তার বাপ-ঠাকুরদার বাড়ি যেখানে, সেই বিহারে তো সামাজিক উন্নয়নে কাজের ক্ষেত্র অনেক বেশি? তা হলে দাসপুর কেন? রবিবার ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ফোনে দীপশ্রেয়ার জবাব, ‘‘চাইলে দেশের যে কোনও জায়গাতেই কাজটা করতে পারতাম। কিন্তু এখানে মামা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করাতে পারবেন। তা ছাড়া, এই স্কুলে গ্রন্থাগারটা জরুরি ছিল।’’ গত জানুয়ারি থেকে গ্রন্থাগারের কাজ শুরু হয়। কাজ চলাকালীন নিয়মিত খোঁজ নিয়েছে দীপশ্রেয়া। মেয়েকে সমানে উৎসাহ জুগিয়েছেন বাল্মীকি ও সুমনা সুর।

১৬০০ বর্গফুটের দোতলা গ্রন্থাগার ভবন তৈরি হয়ে গিয়েছে। পাঠ্যপুস্তক, গল্পের বইও আসতে শুরু করেছে। ২৩ নভেম্বর মাতঙ্গিনী হাজরার নামে গ্রন্থাগারটির উদ্বোধন হবে। দীপশ্রেয়ার দিদিমা কণিকা রায়ের স্মৃতিতে গ্রন্থাগারের উদ্বোধন করবেন দাদু সুশান্ত রায়। থাকবে দীপশ্রেয়া ও তার মা সুমনাদেবীও। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে তাঁরা নিয়ে আসবেন নানা স্বাদের ১৭৫টি বই।

মার্কিন ছাত্রীটির অর্থসাহায্যে অবশেষে গ্রন্থাগার পাওয়ায় খুশি সীমানা প্রাণকৃষ্ণ হাইস্কুলের শিক্ষক ও পড়ুয়ারা। প্রধান শিক্ষক হালিম মহম্মদ বললেন, “আমরা শুধু জায়গাটুকু দিয়েছি। বিনিময়ে পেলাম আধুনিক গ্রন্থাগার।” ভাগ্নীর ভূমিকায় খুশি স্কুলের শিক্ষক দেবব্রতবাবুও। আর স্কুলপড়ুয়া স্পন্দন আদক, সোমাশ্রী জানাদের কথায়, “এ বার অবসর সময়টা গ্রন্থাগারেই কাটাব। এত দিন তো এই সুযোগ ছিল না।”

দীপশ্রেয়া জানিয়েছে, ভবিষ্যতেও এই স্কুলের উন্নয়নে পাশে থাকবে সে। মেয়ের কীর্তিতে খুশি সুমনাদেবীও। তাঁর কথায়, “আমি চাই ভবিষ্যতে ও আরও উন্নয়নমূলক কাজ করুক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE