শালবনিতে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
একের পর এক লোধা-শবর সম্প্রদায়ের উপভোক্তারা জমা দিচ্ছেন লিখিত অভিযোগ। সকলেরই দাবি, সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরির টাকা অ্যাকাউন্টে ঢুকেছিল। কিন্তু জোর করে তা তুলিয়ে ‘কাটমানি’ নিয়েছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।
বিরোধী বিজেপি সদস্য সুব্রত শীটকে পাশে বসিয়ে সোমবার এমনই অভিযোগ শুনলেন ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের রেখা সরেন। ব্লকের শালবনি পঞ্চায়েতের বামুনমারা ও জামবনি গ্রামের ৫৫ জন উপভোক্তার থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ৫৫ জনের মধ্যে ৩৫ জন লোধা-শবর। এ দিন পিকআপ ভ্যানে যে ২৪ জন উপভোক্তা পঞ্চায়েত সমিতিতে এসেছিলেন, তাঁদের ২১ জন লোধা-শবর। সঙ্গে ছিলেন বিজেপি-র শালবনি মণ্ডলের সম্পাদক মহিমরঞ্জন বেরা, বামুনমারা বুথ সভাপতি বিমল পাল।
এতদিন অভিযোগ করেননি কেন? মহিমের জবাব, ‘‘তৃণমূলের হুমকি-সন্ত্রাসে কেউ কথা বলার সাহস পেত না। এখন পট পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ সাহস করে কথা বলছেন।’’
বামুনমারা সংসদে ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে ইন্দিরা আবাসে উপভোক্তাদের অ্যাকাউন্টে ৭৫ হাজার টাকা ঢুকেছিল। অভিযোগ, তৃণমূলের তৎকালীন পঞ্চায়েত সদস্য গণেশ পাল, স্থানীয় কর্মী মানিক মান্না ও দয়াময় পালরা ৫ হাজার, ১০ হাজার বা তারও বেশি টাকা নিয়েছিলেন। অনেকেই টাকার অভাবে বাড়ি শেষ করতে পারেননি। ২০১৭-১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনাতেও একই রকম ভাবে টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। গত বছর ভোটে শালবনি পঞ্চায়েতের সব আসনে জেতে বিজেপি। লোকসভাতেও ৮টি বুথেই বিজেপি-র লিড রয়েছে।
গত শনিবার এলাকায় গিয়েছিলেন রেখা। তখনই কাটমানি নালিশ শোনেন তিনি। ২৪টি অসমাপ্ত বাড়িও দেখানো হয় তাঁকে। রেখা লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। এ দিন লিখিত অভিযোগ পেয়ে রেখার বক্তব্য, ‘‘ভুল বুঝিয়ে যদি কেউ টাকা নিয়ে থাকে, অবশ্যই দেখা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে, টাকা ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে।’’ অভিযুক্ত তৃণমূল নেতারা অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন। আর তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি বিরবাহা সরেন বলেন, ‘‘বিজেপি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে এই ধরনের অভিযোগ করাচ্ছে।’’
কাটমানি ফেরত চেয়ে বিক্ষোভ হয়েছে শালবনিতেও। তৃণমূলের কর্ণগড় অঞ্চলের সভাপতি কাঞ্চন চক্রবর্তীর ভাদুতলার বাড়ির সামনে সোমবার সকালে বিক্ষোভ, স্লোগান চলে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছিলেন কর্ণগড়ের বালিজুড়ির লক্ষ্মী সিংহ। লক্ষ্মী বলেন, ‘‘সরকারি প্রকল্পে শৌচাগার করে দেবে বলে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে ওই তৃণমূল নেতা। যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, তাদের সবাইকে শৌচাগার করে দেয়নি। একশো দিনের কাজেও ও টাকা মেরেছে। দেখিয়েছে প্রকল্পে ৫০০ জন কাজ করেছে। আসলে ১০০ জন কাজ করেছে।’’ এই নেতার বাড়িতে মাস খানেক আগেও হামলা হয়েছিল। কাঞ্চন বাড়িতে ছিলেন না। তবে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি নেপাল সিংহ বলেন, ‘‘এলাকায় অশান্তি ছড়াতে বিজেপির লোকজনই বিক্ষোভ দেখিয়েছে।’’ অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক শুভজিৎ রায়ের বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কাটমানি ফেরাতে বলেছেন। মানুষ তো কাটমানির টাকা ফেরত চাইবেনই। তৃণমূল এখন সবেতেই বিজেপির ভূত দেখছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy