Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

অস্তিত্ব রক্ষায় লড়বেন ভোটে, বাহা পুজোয় অঙ্গীকার বিরবাহার

বিরবাহা বললেন, ‘‘জেতা-হারাটা বড় নয়। আদিবাসীদের গিনিপিগ বানিয়ে রাজনীতির খেলা চলতে দেওয়া যাবে না, এই বার্তাটা স্পষ্ট করে দিতে চাই।’’

ঝাড়গ্রাম শহরে নিজের বাড়িতে বীরবাহা হাঁসদা। নিজস্ব চিত্র

ঝাড়গ্রাম শহরে নিজের বাড়িতে বীরবাহা হাঁসদা। নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৯ ০০:১৭
Share: Save:

গত বিধানসভায় লড়াইয়ের স্মৃতি খুব একটা সুখকর নয়। জামানত জব্দ হয়েছিল সে বার।

তবু লোকসভায় লড়তে চান বিরবাহা হাঁসদা। লড়তে চান মায়ের দলের অস্তিত্ব রক্ষায়, লড়তে চান আদিবাসী, কুড়মি-সহ জঙ্গলমহলের সব জনজাতির জন্য, লড়তে চান জঙ্গলমহলের জেলাগুলিকে নিয়ে স্বশাসিত পরিষদ গড়ার তাগিদে।

শনিবার আদিবাসীদের পবিত্র বাহা পুজো শুরুর দিনেই সাঁওতালি সিনেমার মহানায়িকা বিরবাহা হাঁসদা তাঁর এই অঙ্গীকারের কথা স্পষ্ট করেছেন। ঝাড়গ্রাম শহরের বিদ্যাসাগর পল্লির বাড়ির উঠোনে এ দিন সাবেক সাজে ছিলেন অভিনেত্রী। পরনে আদিবাসীদের ‘পাঞ্চি’ শাড়ি, খোঁপায় কচি শালফুল। ‘বোঙ্গা থান’-এ প্রণাম সেরে বিরবাহা বললেন, ‘‘জেতা-হারাটা বড় নয়। আদিবাসীদের গিনিপিগ বানিয়ে রাজনীতির খেলা চলতে দেওয়া যাবে না, এই বার্তাটা স্পষ্ট করে দিতে চাই।’’ বিরবাহার মা তথা ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর নেত্রী চুনিবালা হাঁসদা জানালেন, আদিত্য কিস্কুর নেতৃত্বাধীন ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টি-সহ অন্য ঝাড়খণ্ডী দলগুলির সঙ্গে মেয়ের প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে আলোচনা চলছে।

আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে বিনপুর আসনে ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর হয়েই লড়েছিলেন বিরবাহা। সে বার তৃণমূল প্রার্থীর কাছে হেরে জামানত জব্দ হয়েছিল অভিনেত্রীর। এ বার ঝাড়গ্রামে তৃণমূল প্রার্থী বিরবাহা সরেন। তাঁর স্বামী রবিন টুডু ‘মাঝি পারগানা মহল’-এর নেতা। ফলে তৃণমূলের বিরবাহাকে সমর্থন করা নিয়ে দ্বিধা বিভক্ত আদিবাসী সমাজ। আর এই কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী দেবলীনা হেমব্রম। সে দিক থেকে বিরবাহা হাঁসদা লড়লে ভোট কাটাকুটির অঙ্কে তো তৃণমূলের বিরবাহারই লাভ?

অভিনেত্রী বলছেন, ‘‘লাভ-ক্ষতি না। লোকসভা ভোটে দাঁড়িয়ে আদিবাসীদের অধিকার আর বঞ্চনার কথা জাতীয় স্তরে পৌঁছে দিতে চাই।’’ বিরবাহার মতে, আদিবাসী এলাকায় রাজ্য এবং কেন্দ্রের গোপন বোঝাপড়ার জন্য আদিবাসীরা জল-জমি-জঙ্গলের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। খেটে খাওয়া মানুষের হাতে সারা বছর কাজ নেই। সাঁওতালি স্কুলগুলির পরিকাঠামোর উন্নতি, মুন্ডারি এবং কুড়মালি ভাষাকে সংবিধানের অষ্টম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিও তুলবেন বিরবাহা। তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন লালগড়ে রেলপথের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কাজ হয়নি। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারও লালগড়ে রেলপথ নিয়ে কিছু করেনি।

বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর নিয়ে স্বশাসিত পরিষদের দাবিও তুলবেন অভিনেত্রী। বিরবাহার কথায়, ‘‘স্বশাসিত পরিষদ ছাড়া ঝাড়গ্রামের উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাবাও পৃথক ঝাড়খণ্ড রাজ্যের স্বপ্ন দেখেছিলেন।’’ মুখ্যমন্ত্রী গত বছর তাঁকে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। বিরবাহার ক্ষোভ, ‘‘শাড়ি আর উত্তরীয় দিলেও শংসাপত্র দেওয়া হয়নি। আসলে তৃণমূল আমাকে রাজনীতির বোড়ে করতে চেয়েছিল।’’

এ সবের জবাব দিতেই ভোটে দাঁড়াতে চান বিরবাহা। তাঁর সাফ কথা, ‘‘আমরা আদিবাসী-মুলবাসীদের প্রকৃত প্রতিনিধি হতে চাই। মাঝি পারগানার কিছু স্বার্থান্বেষী নেতার বিরুদ্ধেও আমার লড়াই।’’

তৃণমূল অবশ্য এ সবে আমল দিচ্ছে না। দলের ঝাড়গ্রাম জেলা চেয়ারম্যান সুকুমার হাঁসদা বলছেন, “আঞ্চলিক ঝাড়খণ্ডী দলগুলি ভোটে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারবে না। ”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE