ভারতী ঘোষ। ফাইল চিত্র।
বৃহস্পতিবার পাঁশকুড়ার মাইশোরায় ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষের প্রচারকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি হয়েছিল। অবস্থান বিক্ষোভ থেকে থানা ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে ভারতী যখন পাঁশকুড়ায় ‘তৃণমূল বিরোধী মুখ’ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে চাইছেন, তখন গোলমালের ঘটনায় ভারতীকেই কাঠগোড়ায় দাঁড় করিয়েছেন পাঁশকুড়ার বিজেপি নেতা কর্মীরা। ফলে শুক্রবার পাঁশকুড়ায় আরএসএস-এর এক কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসেও কার্যত ‘সঙ্গীহীন’ হয়ে থাকলেন ভারতী। পাঁশকুড়ার কোনও বিজেপি নেতাকে তাঁর আশপাশে দেখা যায়নি। গতকালের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পুলিশ তৃণমূল এবং বিজেপির ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে।
ভারতীকে কেন দুষছেন নিচুতলার বিজেপি কর্মীরা?
পাঁশকুড়ার বিজেপি নেতা আনিসুর রহমান জেলে থাকার সুবাদে প্রচারে ভারতীকে সহায়তা দিচ্ছেন পাঁশকুড়া পুরসভার বিরোধী নেতা সিন্টু সেনাপতি। সিন্টু আর আনিসুর বিজেপির দু’ই বিপরীত গোষ্ঠীর নেতা হিসেবেই পরিচিত। বিজেপির ঘাটাল লোকসভার নির্বাচনী কো-কনভেনরও সিন্টু। প্রচারে ইতিমধ্যেই ভারতীর কাছে বিশ্বস্ত হয়ে উঠেছেন তিনি। যা মেনে নিতে পারছে না আনিসুরের অনুগামীরা। বৃহস্পতিবার মাইশোরায় ভোট প্রচার নিয়ে আনিসুরের অনুগামীরা যোগাযোগ করেন ভারতীর সঙ্গে। কিন্তু মাইশোরার মতো বিরোধীশূন্য জায়গায় এ ভাবে ভোট প্রচারে সায় ছিল না সিন্টুর। কিন্তু ভারতীর জেদের কাছে হার মানেন সিন্টু। অগত্যা দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ভারতীর ভোট প্রচারে যোগ দেন তিনি। কিন্তু প্রচারের রাশ সিন্টুর হাতে ছিল না বলে অভিযোগ সিন্টু অনুগামীদের। ভারতীকে কার্যত নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গিয়েছে আনিসুর অনুগামীদের। বৃহস্পতিবার ভারতী যখন কালো পতাকা দেখানোর পাল্টা হিসেবে যশোড়া-রাধাবল্লভপুর রাস্তায় অবস্থান বিক্ষোভে বসেন, তখন সিন্টু তাঁকে অবস্থান তুলে নিতে বারবার অনুরোধ করেন। সিন্টুর অনুগামীদের বক্তব্য, কম গুরুত্বপূর্ণ ওই গ্রামীণ রাস্তায় অবস্থান করে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে না জেনেই সিন্টুবাবু সেখান থেকে অবস্থান তুলে নিতে বলেছিলেন। তা ছাড়া মাইশোরা এলাকায় এখনও বিজেপির কোনও সাংগঠনিক কমিটি নেই। তাই সেখানে অনড় অবস্থান চালানো কার্যত খুব একটা কাজে আসত না। কিন্তু ভারতী নিজের জেদে অনড় থাকেন। এমনকি বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অন্তরা ভট্টাচার্য অবস্থান বিক্ষোভ তুলে নেওয়ার আর্জি জানালেও কাজ হয়নি।
ওই দিন স্থানীয় এক তৃণমূল কর্মীর খড়ের গাদায় আগুন লাগানো ও তৃণমূল কর্মীদের বাড়িতে হামলার ঘটনাতেও সিন্টুর কোনও ভূমিকা ছিল না বলে জানা গিয়েছে। এই অবস্থায় সিন্টুকে শিখন্ডি করে অন্য কেউ এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন কি না সেই প্রশ্ন উঠেছে। আক্রমণের হাত থেকে রেহাই পাননি সিন্টুও। রাতেই তৃণমূল বিজেপির ৩৮ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ বিজেপির নিচুতলার কর্মীরা।
বিজেপির একটি সূত্র মনে করছে গোলমাল, মামলা মোকদ্দমার জেরে সিন্টুকে আটকাতে পারলে পাঁশকুড়ায় বিজেপির রাশ পুরোপুরি চলে যাবে আনিসুর অনুগামীদের হাতে। সেই উদ্দেশ্যেই গোলমাল করা হয়েছে কি না সেই প্রশ্ন তুলেছেন সিন্টু অনুগামীরা।
শুক্রবার, পাঁশকুড়ায় দেখা যায়নি বিজেপির কোনও নেতা-কর্মীকে। তৃণমূলের অভিযোগ, গ্রেফতারের ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে এদিন পাঁশকুড়ায় আরএসএস-র একটি কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসেছিলেন ভারতী।
বিজেপির এক নিচুতলার কর্মী বলেন, ‘‘ভারতী ম্যাডামের জন্যই আমরা তৃণমূলের হাতে মার খেলাম আবার মামলায় জড়ালাম। ওই দিন ম্যাডামের অতটা বাড়াবাড়ি করা উচিত হয়নি।’’
কী বলছে বিজেপি নেতৃত্ব?
জেলা সভাপতি প্রদীপ দাস বলেন, ‘‘যে এলাকায় ভারতী ঘোষ প্রচারে গিয়েছিলেন সেখানে দলের সাংগঠনিক অবস্থান সম্পর্কে ওঁর ধারণা খুব বেশি ছিল না বলে মনে হয়েছে। প্রার্থীর সঙ্গে দলীয় নেতাদের সমন্বয়ের অভাবে ওই জায়গায় কিছু গোলমাল হয়েছিল বলে শুনেছি। আগামীদিনে এই বিষয়ে আমরা সতর্ক থাকব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy