ব্লাডব্যাঙ্কে রক্ত সংক্রান্ত তথ্যের খতিয়ান। নিজস্ব চিত্র
প্রতি বছর পয়লা বৈশাখে নববর্ষ উদযাপনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সাথেই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে তমলুকের একটি ক্লাব। এবার তাদের অধিকাংশ সদস্যই লোকসভা ভোটে একটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারে নেমে পড়েছেন। ফলে এ বার শিবিরের আয়োজন হচ্ছে না।
শুধু তমলুকের এই ক্লাবই নয়, জেলা জুড়ে প্রায়ই একই ছবি। লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হতেই ভোটের প্রচারে নেমে পড়েছে বিভিন্ন এলাকার ক্লাবের সদস্যরা। অনেক ক্লাব কর্তা সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকায় ভোট প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। চলতি মাস থেকে আগামী মে মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত দু’মাস ধরে চলবে নির্বাচন পর্ব। সাধারণও রাজ্যের হাসপাতালগুলির ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের জোগানের বেশিরভাগটাই আসে এই সমস্ত ক্লাব ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের রক্তদান শিবির আয়োজনের মাধ্যমে। কিন্তু জেলার অধিকাংশ ক্লাবের সদস্যরা ভোটের প্রচারে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় রক্তদান শিবিরের আয়োজনে ভাটার পড়ার আশঙ্কা। সে ক্ষেত্রে সামনের কয়েক মাস রক্তের জোগান নিয়ে যে সমস্যা তা মানছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। সঙ্কটে পড়তে পারেন হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে চিকিসাধীন রোগী সহ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তরা। সমস্যা মেটাতে ইতিমধ্যেই বিকল্প পথের সন্ধানে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। পূর্ব মেদিনীপুরের মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘নির্বাচন পর্ব চলার সময়েও ক্লাবগুলির উদ্যোগে রক্তদান শিবিরের আয়োজন কমতে পারে। তাই রক্তের জোগান দিতে বিশেষ পরিকল্পনা করা হচ্ছে। দু’তিন বছর ধরে রক্তদান শিবির আয়োজন করে আসছে এমন ক্লাবগুলিকে নিয়ে এ মাসেই বৈঠকে বসব। ক্লাবগুলিকে অনুরোধ করা হবে যাতে নির্বাচন পর্বের মাঝেই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেন। আশা করি অনেকে সাড়া দেবে।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হাসপাতাল ছাড়াও কাঁথি, হলদিয়া, এগরা মহকুমা হাসপাতাল ও নন্দীগ্রাম, পাঁশকুড়া সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্ক চালু রয়েছে। ওই ব্লাড ব্যাঙ্কগুলির মাধ্যমে জেলার বিভিন্ন এলাকায় রক্তদান শিবির করে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। ওই সব শিবির আয়োজনে উদ্যোগী হয় বিভিন্ন ক্লাব ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। জেলা হাসপাতাল ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মাসে ৭৮, এপ্রিলে ৬০ ও আগামী মে মাসে ১২টি রক্তদান শিবির আয়োজনের জন্য বিভিন্ন ক্লাব ব্লাড ব্যাঙ্কে বুকিং করেছে। কিন্তু নির্বাচন ঘোষণা হওয়ায় ক্লাবগুলির রক্তদান শিবির বাতিলের সম্ভবনা রয়েছে। ফলে রক্তের চাহিদা মেটানোয় সমস্যা হতে পারে।
ব্লাড ব্যাঙ্কের মেডিক্যাল অফিসার তুষার মাইতি বলেন, ‘‘গত বছর গরমে পঞ্চায়েত ভোটের সময় কয়েকটি ক্লাব রক্তদান বাতিল করেছিল। রক্তের চাহিদা মেটাতে ব্লাড ব্যাঙ্কে স্থায়ী রক্তদান শিবিরের ব্যবস্থা চালু রয়েছে। প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে এখানে এসে কেউ রক্তদান করতে পারেন।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা হাসপাতালে আসা থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের জন্য গড়ে প্রতিদিন ১৫-২০ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন। এছাড়া বিভিন্ন নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন রোগী মিলিয়ে গড়ে ৬০ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন। তমলুক ভলান্টারি ব্লাড ডোনারস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শুকদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জেলায় প্রতিবছর প্রায় ৫৫ হাজার ইউনিট রক্ত প্রয়োজন হয়। গত বছর রক্তদান শিবিরগুলি থেকে চুয়াল্লিশ হাজার ইউনিট রক্ত সংগ্রহ হয়েছিল। অর্থাৎ চাহিদার চেয়ে এখনও ঘাটতি রয়েছে। নির্বাচনের সময়ে ক্লাবগুলি যাতে রক্তদান শিবির আয়োজন করে সেজন্য স্বাস্থ্য দফতরকে ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেছি ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy