তৃণমূলের প্রচারে ময়না খাতুন। ডানদিকে, বিজেপির প্রচারে শেখ রেজ্জাক।
লোকসভা ভোটের দামামা বেজে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাঠে নেমে পড়েছে সব দল। রাজ্যে শাসক তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি। প্রচারে যখন বিজেপি ও তৃণমূল একে অপরের দিকে কাদা ছোড়াছুড়ি করছে তখন একেবারেই অন্য ছবি কোলাঘাটের সাগরবাড়ে।
কোলাঘাট ব্লকের সাগরবাড় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার দক্ষিণ দেউলবাড় গ্রামের তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য ময়না খাতুন। ভূগোলে স্নাতক ও বিএড পাশের পর এখন এমএ পড়ছেন। বাবা পেশায় ঠিকাদার। মা রিজিয়া বিবি তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই দলের সক্রিয় কর্মী। ২০১৩ সালে কোলাঘাট পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূলের প্রার্থীও হয়েছিলেন। তবে জিততে পারেননি। মায়ের দেখানো পথ ধরেই ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে পঞ্চায়েত সদস্য নির্বাচিত হন ময়না।
কট্টর তৃণমূল পরিবারে কিন্তু ভিন্ন পথের পথিক ছেলে শেখ রেজ্জাক আলি। বিজেপির কোলাঘাট মণ্ডল ২-এর সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতি তিনি। ২০১৮ সালে পাঁশকুড়া বনমালী কলেজ থেকে স্নাতক হন রেজ্জাক। এক সময় পড়াশোনার জন্য দিদির সাহায্য চাইলেও এখন রাজনীতিতে ভিন্ন মেরুর যাত্রী রেজ্জাক রাজনীতি নিয়ে কোনও সাহায্য নেওয়ার বিরোধী। কারণ, দিদি যে বিপরীত মেরুর।
এলাকায় বাড়ি বাড়ি প্রচার চালাচ্ছে তৃণমূল, বিজেপি দু’পক্ষই। সকাল হলেই তৃণমূলের ঝান্ডা ধরে এলাকার সাংসদ পদপ্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারীর সমর্থনে যখন বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন রিজিয়া ও ময়না। বিজেপির পতাকা হাতে নিয়ে তখন এলাকায় ভোটের প্রচারে রেজ্জাক। যা চমকে দিয়েছে প্রতিবেশীদেরও। এক ছাদের নীচে ভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে বিস্মিত অনেকেই। যদিও এ নিয়ে কোনও সমস্যা নেই বলেই দাবি রেজ্জাক এবং রিজিয়া ও ময়নার। তিনজনেরই দাবি, রাজনীতির মেরুকরণ থাবা বসাতে পারেনি মা ছেলে, ভাই-বোনের সম্পর্কে।
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তা হলেও ভিন্ন মেরুতে হাঁটলেন কেন?
রেজ্জাক বলেন, ‘‘আমি মনে করি তৃণমূল রাজ্যের মানুষের প্রকৃত উন্নয়ন করতে পারেনি। উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত আমাদের নিজেদের এলাকাও। তাই রাজ্য তথা দেশকে রক্ষা করতে বিজেপিই একমাত্র বিকল্প।’’ ময়নার যুক্তি, ‘‘ভাই আমার খুব ভাল বন্ধু। কিন্তু ওর নিজস্ব কিছু পছন্দ থাকতে পারে। তাই দিদি হিসেবে ওকে কোনও বাধা দিইনি। তবে আমি মনে করি সাম্প্রদায়িক বিজেপির হাত থেকে রাজ্য ও দেশকে রক্ষা করতে তৃণমূলের পাশে থাকা দরকার।’’
তৃণমূল পরিবারের এক সদস্যর বিজেপিতে যোগ দিয়ে কোনও হুমকির মুখে পড়তে হয়নি?
রিজিয়া বিবি বলেন, ‘‘দলের অনেকেই ছেলের বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু ছেলে বড় হয়েছে। মা হিসেবে তাঁর ব্যক্তিগত পছন্দের বিরোধিতা কেন করব? দলকেও তা বোঝানোর চেষ্টা করেছি।’’
তৃণমূলের কোলাঘাট ব্লক সভাপতি মদন মোহন মিশ্র বলেন, ‘‘বিষয়টি জানি না। তবে প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ রয়েছে। একই পরিবারে বিপরীত রাজনীতির উদাহরণ আগেও অনেক রয়েছে।’’
বিজেপির জেলা সভাপতি প্রদীপ দাস বলেন, ‘‘মোদীজির উন্নয়নে সামিল হয়ে অনেকেই দলে যোগ দিচ্ছেন। তা ছাড়া আমাদের রাজ্যে গীতা মুখোপাধ্যায়, অজয় মুখোপাধ্যায়, তথাগত রায়, সৌগত রায়ের মতো পারিবারিক রাজনৈতিক বিভিন্নতার নিদর্শন তো রয়েছেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy