Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মনোনয়ন দ্বন্দ্বে ভাঙন খাসতালুকে 

২০১৭ সালের বিধানসভা উপ-নির্বাচনে মানস পত্নী গীতা ভুঁইয়া তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে প্রায় ৬৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন।

বিজেপির দেওয়াল লিখন। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

বিজেপির দেওয়াল লিখন। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

দেবমাল্য বাগচী
সবং শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০৩
Share: Save:

সম্রাট অশোকের কলিঙ্গ বিজয়ের সময়ে নাকি সমুদ্রের ঢেউ ভাঙত এই এলাকায়। তাই নাম হয়েছিল সভঙ্গ। পরে কালের অবক্ষয়ে সভঙ্গ থেকে সবঙ্গ। আর এখন সবং। শুধু সমুদ্রের ঢেউ নয়, ভাঙা-গড়ার খেলা দেখা গিয়েছে সবংয়ের রাজনীতিতেও। একসময়ের কংগ্রেসের ‘শক্তঘাঁটি’ বলে পরিচিত সবংয়ের ভুমিপুত্র মানস ভুঁইয়া কংগ্রেস থেকে একঝাঁক নেতা-কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। এর পরে তৃণমূলে দেখা গিয়েছে পুরনো-নতুনের সংঘাত। মাথাচাড়া দিয়েছে বিজেপি।

২০১৭ সালের বিধানসভা উপ-নির্বাচনে মানস পত্নী গীতা ভুঁইয়া তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে প্রায় ৬৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন। তবে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সাড়ে ৫ হাজার ভোট পাওয়া বিজেপি ২০১৭ সালের উপ-নির্বাচনে সাড়ে ৩৭ হাজার ভোট অর্জন করেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের ৭টি আসন পায় বিজেপি। বিজেপির এই ভোটবৃদ্ধিই কপালে ভাঁজ ফেলেছে তৃণমূলের। এ বার লোকসভা নির্বাচনের ময়দানে তাই সবংয়ের মাটিতে ঘুরছে একটাই প্রশ্ন- গীতা ভুঁইয়ার ‘লিড’ কি ধরে রাখতে পারবে তৃণমূল? প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মানস ভুঁইয়া। তিনি বলছেন, “আমি বলব লোকসভা নির্বাচনে ভোট নিশ্চয় বিধায়ক, সাংসদ বা তাঁদের প্রতিনিধিরা কমাবে না। যাঁদের মনে অন্য কোনও দুর্বলতা রয়েছে তাঁরা কমানোর চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু আমাদের মিলিত শক্তি এই ভোটের ব্যবধান কমতে দেবে না।”

মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী আশাবাদী, তাঁর স্ত্রীয়ের বিধানসভা এলাকা থেকে বড় লিড পাবেন ঘাটাল কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী দীপক (দেব) অধিকারী। কিন্তু দেভোগ, বলপাই, বুড়াল, দণ্ডরা, নারায়ণবাড়ের মতো এলাকা ঘুরে দেখা গেল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কাঁটায় স্বস্তিতে নেই তৃণমূল। বামেদের ক্ষয়ের সঙ্গে রয়েছে বিজেপির চোরাস্রোত। দণ্ডরা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় যেতেই চোখে পড়ল রাস্তার দু’দিকে পতপত করে উড়ছে বিজেপির পতাকা। দণ্ডরা পূর্ব বুথে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের হয়ে ভোটারদের বুথ পর্যন্ত নিয়ে এসেছিলেন অশোক মাইতি। এখন অশোক বলছেন, “আমরা এখন চাই এখানে বিজেপি জিতুক। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও যদি আমরা তৃণমূলের হয়ে কাজ না করতাম বা ঠিক ভোট হত, তবে তো বিজেপি জিতে যেত।”

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ঘাটালে এ বার লড়াই দেব বনাম বিজেপি ভারতী ঘোষের। সাংসদ হিসাবে দেব গত পাঁচবছরে সবংয়ে এসেছেন দু’বার। আবার জেলার পুলিশ সুপার থাকাকালীন ভারতী ঘোষের ভূমিকা নিয়ে সবংবাসীর মনে প্রশ্ন রয়েছে। দশগ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিশিরকুমার মাইতির কথায়, “এখানকার মানুষ তো নিজের ভোটটুকু দিতে পারে না। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর কার্যকলাপে বিজেপির হাওয়া রয়েছে। কিন্তু বিজেপির প্রার্থী গ্রহণযোগ্য নয়। তাই বিকল্প প্রার্থী না থাকায় তৃণমূল প্রার্থী পাঁচবছরে এলাকায় না এলেও হয়তো জিতবেন। কিন্তু শক্তিশালী বিরোধী থাকা জরুরি।”

সবং বিধানসভার ১৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে পিংলা ব্লকের তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রভাব রয়েছে। বিজেপির সবং বিধানসভার পর্যবেক্ষক চন্দন সেন বলছেন, “প্রার্থী নয়, প্রতীক দেখে মানুষ ভোট দেবে। তাছাড়া তৃণমূলের অমূল্য মাইতির অনুগামীদের একাংশ আমাদের ভোট দেবে। আবার ২০১৪ সালে দেবের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ায় মানস ভুঁইয়ার অনুগামীদের একাংশ বিজেপিকে ভোট দেবে। বামেদের ভোটও পাব। সবংয়ে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।” যদিও মানস বলছেন, “২০১৪ সালে আমাকে জোর করে রাহুল গাঁধী প্রার্থী করিয়েছিলেন। তাই দেবের প্রতি আমার কোনও ‘ইগো’ নেই।” তবে সবংয়ে বিজেপির ভোট বৃদ্ধির পিছনে তৃণমূলের অমূল্য অনুগামীদের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে মানস অনুগামীরা। এ বারও তাঁকে চাপে ফেলার চেষ্টা হবে বলে আশঙ্কা জেলা কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতির। তিনি বলেন, “বিজেপির ভোটবৃদ্ধির পিছনে বরাবর আমার দিকে আঙুল তোলা হয়েছে। এ বারও একইভাবে সেই আঙুল তোলার চেষ্টা হবে। কিন্তু এই বিধানসভায় আমরা যেভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচার চালাচ্ছি তাতে উপ-নির্বাচনের ‘লিড’ ধরে রাখবই।” সবং ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রভাত মাইতি বলেন, “আমরা সকলে এক হয়ে প্রচারে নেমেছি। দেব বিপুল ভোটে ‘লিড’ পাবে।”

নায়ক লড়বেন। মর্যাদা বাজি থাকবে ভূমিপুত্র ডাক্তারের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sabang Lok Sabha Election 2019 সবং
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE