প্রতীকী চিত্র।
একদিন নিশ্চয়ই রেলপথে জুড়বে জনপদ। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নিশ্চয়ই সংসদে তুলবেন তাদের আশা, আকাঙ্ক্ষার কথা। ভোট আসে। ভোট যায়। অধরা থেকে যায় কাঁথি ভায়া এগরা হয়ে বেলদা এবং দিঘা ভায়া এগরা হয়ে বেলদা রেল লাইনের স্বপ্ন।
এগরা শহরে রেল পরিষেবা চালু হলে দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হতো এগরা এবং দিঘা। পর্যটন ব্যবসা যেমন সমৃদ্ধ হত পাশাপাশি চিকিৎসার জন্য দক্ষিণ ভারতে যাওয়াও সুবিধাজনক হত। কাঁচা লঙ্কা, পান পাতা চিনে বাদামের মতো অর্থকরী ফসল অনেক টাকা খরচ করে তামিলনাড়ু, পঞ্জাব বা অন্ধ্রপ্রদেশে পাঠাতে হয়। রেলপথ থাকলে সহজসাধ্য হতো রফতানি। কিন্তু কেন রেলপথের দাবি পূরণ হয় না? রেল প্রশাসন সূত্রের খবর, কোনও জায়গায় নয়া রেলপথের ক্ষেত্রে অনেকগুলি বিষয় জড়িত থাকে। প্রস্তাবিত রেলপথটি অর্থনৈতিক ভাবে লাভজনক কি না, তা খতিয়ে দেখা হয়। যদিও এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। প্রার্থীরা ভোট চাইতে এলে মানুষ রেলপথের দাবি জানায়। হাসিমুখে সব শোনেন প্রার্থী। ব্যাস, ওই পর্যন্তই। বাম সাংসদ প্রবোধ পাণ্ডা একবার সংসদে বিষয়টি তুলেছিলেন। তারপর আর বিশেষ কিছু এগোয়নি।
এগরা পূর্ব মেদিনীপুরে হলেও বিধানসভা এলাকাটি মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। নাট্য ব্যক্তিত্ব প্রাণাশিস ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে আমাদের ভোট হওয়ায় সাংসদেরা সেই নজরে এগরা বিধানসভাকে দেখে না। তাই সাংসদ ক্ষেত্রে উন্নতি তেমন চোখে পড়েনি। আজ পর্যন্ত এগরায় অডিটোরিয়াম টুকু হয়নি। লোকসভার কেন্দ্র মেদিনীপুরের বদলে কাঁথি হলে এলাকায় অনেক বেশি উন্নতি হবে।’’
ভোটে বিধান
এগরা বিধানসভা
মেদিনীপুর লোকসভা
২০১৪ লোকসভা
তৃণমূল ৯৫,৫৩৬
বাম ৭৩,৯৭৫
বিজেপি ১৯,১২২
কংগ্রেস ৫,৫৬৪
জয়ের ব্যবধান ২১,৫৬১
২০১৬ বিধানসভা
তৃণমূল ১,১৩,৩৩৪
জোট ৮৭,৩৭৮
বিজেপি ১৩,০০২
জয়ের ব্যবধান ২৫,৯৫৬
২০১৮ পঞ্চায়েত
জেলা পরিষদ (তৃণমূল ৪-০)
এগরা ১ পঞ্চায়েত সমিতি
(তৃণমূল ২৩-০)
এগরা ২ পঞ্চায়েত সমিতি (এর ২১টি এগরা বিধানসভার মধ্যে। সবগুলিই তৃণমূলের দখলে)
পঞ্চায়েত (তৃণমূল ১৫-০)
এগরা মহকুমায় সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে রোগী পরিষেবা নিয়ে বারে বারে অভিযোগ ওঠে। ঝাঁ চকচকে হাসপাতাল। তবে অভিযোগ, চিকিৎসক এবং নার্সের অভাবে চিকিৎসা হয় গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মতো। পানিপারুল এবং জুমকি গ্রামপঞ্চায়েতে লঙ্কা এবং বাদাম চাষ হয়। এখানকার লঙ্কা অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহারে রফতানি হয়। কথা ছিল সেখানে কিসান মান্ডি হবে। তবে সেই কাজ আজও থমকে রয়েছে। তবে ব্লক এলাকায় রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়েছে। মঞ্জুশ্রী এলাকায় নতুন পাকা রাস্তা হয়েছে। পানীয় জলের সমস্যা মিটেছে, রাজ্য সড়কে সম্প্রসারণের কাজ হয়েছে। হয়েছে পথবাতি আর বিশ্রামাগার। মজে যাওয়া বালিঘাই খালের সংস্কার শুরু হয়েছে। পানিপারুল গ্রামের মধ্যে রাস্তা পাকা হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
২০১৪ লোকসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী সন্ধ্যা রায় এগরা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ২১ হাজারের বেশি ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন। ২০১৬ সালের বিধানসভা তৃণমূল প্রার্থী জেতেন প্রায় ২৬ হাজার ভোটে। ২০১৮ এর পঞ্চায়েত ভোটে সব ক’টি গ্রাম পঞ্চায়েতই তৃণমূল দখল করেছে। শাসক দলের শক্ত ঘাঁটি। এগরার বিধায়ক সমরেশ দাসও বলছেন, ‘‘মানস ভুঁইয়া মেদিনীপুর লোকসভার মধ্যে এগরা থেকে বেশি ভোটে জয়ী হবেন। বিজেপি-র কোন অস্তিত্ব নেই গোটা এগরা বিধানসভায়।’’ তবে আদি-নব্যের দ্বন্দ্বে অস্বস্তি রয়েছে শাসক শিবিরে। গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকটি আসনে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে জিতে যান তৃণমূল নেতারা। পরে অবশ্য তাঁদের অনেকেই ফিরেছেন শাসক শিবিরে। ক্ষোভ রয়েছে পুর এলাকাতেও। এগরা শহর তৃণমূলের সভাপতি স্বপন নায়কের কথায়, ‘‘ কিছু মানুষ নিজের স্বার্থে পুরসভার বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতি কররছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখা দিচ্ছে। তবে ভোটের আগে দলনেত্রীর নির্দেশে সকলে একত্রিত হয়ে কাজ করছি।’’
কেন ফল হবে বিজেপির? এগরা বিধানসভার বিজেপির আহ্বায়ক অরূপ দাশ বললেন ‘‘শুধু মাত্র এগরা বিধানসভা থেকে পাঁচ হাজার লিড পাবেন দিলীপবাবু।’’ কংগ্রেস নেতা মানসকর মহাপাত্র আবার বলছেন, ‘‘তৃণমূলের ভোটে এগরায় বিজেপি শক্তি পাচ্ছে। কংগ্রেস এখানে নিজেদের লড়াই করে জমি পুনরুদ্ধার করছে।’’
শহরবাসীর একাংশ বলছেন, এগরায় তৃণমূলের জমি শক্ত হলেও পুরসভার ‘হাউজিং ফল অল’ প্রকল্পের দুর্নীতি এবং পার্ক বিতর্ক শাসক দলের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এগরার অবসর প্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী শক্তিপদ ঘোড়াই বললেন,‘‘‘তৃণমূল আগের মতো মানুষের জন্য আর ভাবে না। নেতারা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। তবে এখানে তৃণমূলের ভোটার বেশি। দলকে আরও বেশি করে সংযত হতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy