Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দূষণ, মাফিয়া রাজ থেকে মুক্তির দাবি

লোকসভার যুদ্ধে জরুরি বিধানসভার অঙ্ক। সেই সমীকরণেই আনন্দবাজার পৌঁছে গিয়েছে জনতার দরবারে। তিন বছর আগের ভোটের পরে কী পেয়েছেন মানুষ, সাংসদ নির্বাচনের আগেই বা কী ভাবছেন তাঁরা, রইল বিধানসভাওয়াড়ি পর্যালোচনা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৯ ০১:৪৪
Share: Save:

এক সময় জমিদারদের বসতি হিসেবে গড়ে উঠেছিল দোরপরগনা। পরে কালের পরিবর্তনে হয়েছিল দরিয়া। সেই দরিয়ার পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে হলদি নদী। বর্তমানে সেই জনপদই হলদিয়া। একাধারে শিল্প আর বন্দর শহর হওয়ার সুবাদে শিল্পাঞ্চলের রাজনীতির ভাঙা-গড়ার খেলা এখানে শুরু থেকেই।

নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের সূত্র ধরে এক সময় বামেদের শক্তঘাঁটি হলদিয়ায় পরিবর্তনের স্রোত বইতে শুরু করেছিল কাঁথি থেকে আসা তৃণমূলের শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে। ক্রমে হলদিয়ায় ঘাসফুল শিবির নিজের জমি শক্ত করলেও আদি আর নব্যের সংঘাতে ফাটল ধরতে শুরু করে ২০১৩ সালেই। গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ২৪ টি ব্লক তৃণনমূল দখল করলেও, একমাত্র সুতাহাটা পঞ্চায়েত সমিতি ছিনিয়ে নিয়েছিল বামেরা। ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে তৎকালীন বিধায়ক শিউলি সাহাকে ‘সরিয়ে’ নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে। আর হলদিয়ায় জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি মধুরিমা মণ্ডল ২১ হাজারের বেশি ভোটে হেরে যান সিপিএমের তাপসী মণ্ডলের কাছে। তবে গোষ্ঠীদ্বন্দের ক্ষত সারিয়ে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ভরাডুবি সামলে নেয় শাসক দল। লোকসভা উপনির্বাচনে শুভেন্দুর ভাই তথা তৃণমূল প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারী ৮০ হাজার ভোটের ‘লিড’ পেয়েছিলেন। পরে, হলদিয়া পুরসভার নির্বাচনে ২৯ টি ওয়ার্ড এবং পঞ্চায়েতে সুতাহাটা ব্লকের ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত বিরোধীশূন্য ভাবে দখল করে তৃণমূল। কিন্তু এলাকায় বিজেপির ক্রমবর্ধমান উত্থান, পঞ্চায়েত ও পুরসভার ভোটে সাধারন মানুষের ভোট দিতে না পারার ক্ষোভই এখন শাসক দলের কাছে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। পাশাপাশি শিল্পাঞ্চল হিসাবে পরিচিতি পাওয়ার শুরু থেকেই বিভিন্ন সময়ে হলদিয়া পরিবেশ দূষণ নিয়ে আগের সরকার এবং বর্তমান রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেও বার বার ক্ষোভ দেখা গিয়েছে এখানকার বাসিন্দাদের।

ব্রজলালচকের বাসিন্দা পেশায় বেসরকারি শিল্প সংস্থার কর্মী সুকুমার সামন্ত বলেন, ‘‘রানিচকের কাছে দীর্ঘদিন ধরেই উড়ালপুল তৈরির কাজ চলছে। এতে ওই এলাকা দিয়ে যাতায়াতের সময় যেমন ধুলো, তেমনি প্রতি মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। কবে উড়ালপুলের কাজ শেষ হবে কে জানে।’’ একই ভাবে না পাওয়ার ক্ষোভ রয়েছে শিল্পাঞ্চলের আর এক বাসিন্দা রাবিয়া বিবির। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এত বড় গুরুত্বপূর্ণ শহরে যে সরকারি হাসপাতাল রয়েছে সেখানে দীর্ঘদিন ধরেই চিকিৎসক ও অন্য পরিষেবার অভাব রয়েছে। ভোট এসে শুধু আশ্বাস মেলে। কিন্তু কাজ আর হয় না।’’ অভিযোগ রয়েছে মাফিয়া রাজ এবং তোলাবাজিরও।

হলদিয়া-সহ সুতাহাটা ব্লকের অধিকাংশ জায়গা জুড়ে শুধু শাসক দলের দেওয়াল লিখন, ব্যানার-ফেস্টুন আর তেরঙ্গা পতাকা উড়ছে। বিক্ষিপ্তভাবে কিছু জায়গায় সিপিএম প্রার্থীর সমর্থনে দেওয়াল লিখন কিংবা লালা পতাকা দেখা গেলেও বিজেপির চিহ্ন নেই গোটা বিধানসভা এলাকায়। বিরোধীদের এমন ছন্নছাড়া অবস্থা শাসক দলকে স্বস্তি দিলেও দুর্গাচক, হাতিবেড়িয়া, টাউনশিপ, গুয়াবেড়িয়া, গিরিশ মোড়, চৈতন্যপুর নিয়ে সংশয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব। লোকসভা উপ-নির্বাচনের ব্যবধান ধরে রাখার চেষ্টা আদৌ কতটা সফল হবে, তা নিয়ে দোটানায় রয়েছে শাসক দল।

এ ব্যাপারে হলদিয়ায় তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক নেত্রী মধুরিমা মণ্ডল বলেন, ‘‘মানুষ যা রায় দেবে, তাই মাথা পেতে নেব।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি (তমলুক) প্রদীপ কুমার দাসের কথায়, ‘‘হলদিয়ায় মাফিয়া রাজ কায়েম করে গতবার ভোট করেছে তৃণমূল। এবার কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। সে সব কিছুই পারবে না। সাধারণ মানুষ নিঃশব্দে বিপ্লব ঘটিয়ে দেবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE