তৃণমূলের দুই শিবিরের পৃথক কর্মসূচি ঘিরে প্রকাশ্যে এসে পড়ে নন্দকুমার ব্লকের তৃণমূল নেতা-কর্মী-সমর্থকদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। প্রতীকী ছবি।
উপলক্ষ্য ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে কলকাতায় ব্রিগেড সমাবেশের সমর্থনে প্রচার। গত জানুয়ারিতে সেই প্রচার ঘিরেই সামনে চলে এসেছিল নন্দকুমার ব্লকে তৃণমূলের দুই যুযুধান শিবিরের বিভাজন।
একই দিনে সকালে তৃণমূল সমবায় সেলের তরফে ব্লকের ঠেকুয়া বাজার থেকে খঞ্চি বাজার পর্যন্ত পদযাত্রায় সামিল হয়েছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি সুকুমার বেরা এবং জেলা সমবায় সেলের সভাপতি গোপাল মাইতি। সেদিনই বিকেলে নন্দকুমার বাজারে ব্লক তৃণমূলের উদ্যোগে পদযাত্রায় নেতৃত্ব দেন নন্দকুমারের বিধায়ক সুকুমার দে, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দীননাথ দাস প্রমুখ। একই ইস্যুতে তৃণমূলের দুই শিবিরের পৃথক কর্মসূচি ঘিরে প্রকাশ্যে এসে পড়ে ব্লকের তৃণমূল নেতা-কর্মী-সমর্থকদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। যা নিয়ে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগে জেরবার দলের জেলা নেতৃত্ব। এই বিভাজনকে এড়িয়ে লোকসভা ভোটে দলকে কতটা এক সুতোয় গাঁথা যাবে সেটাই এখন চিন্তা জেলা নেতৃত্বের।
তমলুক লোকসভার মধ্যে থাকা নন্দকুমার ব্লক তথা বিধানসভা এলাকা বরাবর তৃণমূলের শক্তঘাটি হিসেবে পরিচিত। যদিও এলাকার বিধায়ক সুকুমার দে ও পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি সুকুমার বেরার ঠান্ডা লড়াই আর দলের অন্দরে সীমাবদ্ধ নেই। তার প্রমাণ, গত লোকসভা নির্বাচনে তমলুক কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী এই বিধানসভা এলাকা থেকে ২৪ হাজার ভোটের ‘লিড’ পেয়েছিলেন। অথচ মাত্র দু’বছর পরে ওই বিধানসভায় তৃণমূল প্রার্থী সুকুমার দে’র জয়ের ব্যবধান কমে দাঁড়ায় ১২ হাজারে। ফের ৬ মাস পর তমলুক লোকসভার উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারী ‘লিড’ পান ৪২ হাজার ভোটের।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ভোটের ফলে এমন চড়াই-উতরাইয়েই লুকিয়ে রয়েছে শাসকদলের দুই শিবিরের পারস্পরিক বিরোধিতার তত্ত্ব, এমনটাই অভিযোগ দলের স্থানীয় কর্মী-সমর্থকদের। যার জেরেই গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে সুকুমার বেরা ফের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হিসেবে জয়ী হলেও বিরোধী শিবিরের আপত্তিতে সভাপতি পদে ফিরতে পারেননি। লোকসভা ভোটের বাজারে বিভাজনের সেই ছবি ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। তার কারণ, লোকসভা ভোটের জন্য তৃণমূলের যে ব্লক নির্বাচনী কমিটি গড়া হয়েছে তাতে ব্লক সভাপতি তথা বিধায়ক সুকুমার দে ছাড়াও রয়েছেন তাঁর অনুগামী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দীননাথ দাস সহ অন্যান্য ব্লক নেতারা। অথচ কমিটিতে ‘বিরোধী শিবিরের’ নেতা তথা জেলা সমবায় সেলের সভাপতি গোপাল মাইতি স্থান পেলেও বাদ পড়েছেন পঞ্চায়েত প্রাক্তন সভাপতি সুকুমার বেরা ও তাঁর অনুগামী হিসেবে পরিচিত পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি বাবুলাল মণ্ডল, প্রাক্তন কর্মাধ্যক্ষ নবকুমার আদক ও দুর্গাপদ মণ্ডল প্রমুখ। তবে ব্লক নির্বাচন কমিটিতে ঠাঁই না পেলেও সুকুমার বেরার অনুগামী কর্মীরা তৃণমূল সমবায় সেলের তরফে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে দেওয়াল লেখা শুরু করেছেন জানা গিয়েছে।
সুকুমার বেরার দাবি, ‘‘বিধায়ক নিজের মতো করে নির্বাচন কমিটি গড়েছেন। তাতে আমাদের রাখা হয়নি। কিন্তু দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে দেওয়ার লেখার অধিকার আমার রয়েছে। তাই তৃণমূল সমবায় সেলের তরফে দেওয়াল লিখন-সহ প্রচারে নেমেছি।’’
বিধায়ক সুকুমার দে পক্ষপাতের অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘ব্লক নির্বাচন কমিটি গড়ায় কোনও পক্ষ দেখা হয়নি। কমিটিতে ছাত্র, মহিলা, সংখ্যালঘু, যুব-সহ বিভিন্ন শাখা সংগঠনের পদাধিকারীরা রয়েছেন। সমবায় সেলের তরফে গোপাল মাইতিও রয়েছেন। তাই শুধু আমার অনুগামীদের স্থান দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’
দলীয় কর্মীদের একাংশের অবশ্য দাবি, লোকসভা ভোটে দলের প্রার্থীকে আগের চেয়ে বেশি ভোটে জেতাতে আমরা বাড়ি বাড়ি প্রচার করছি। কিন্তু ব্লকের দুই নেতার বিরোধে জেরে বিরোধীরা অপপ্রচার করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে।
তমলুকের তৃণমূল প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘দলের ব্লক কমিটির তরফে ব্লক নির্বাচন কমিটি গড়া হয়েছে। আমরা কোনও হস্তক্ষেপ করিনি। আর গোষ্ঠীকোন্দলের কোনও বিষয়ই নেই। সবাই দলের কর্মী হিসেবেই কাজ করছেন। কোনও সমস্যা যদি থাকলে আলোচনা করেই মিটিয়ে নেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy