Advertisement
১৯ মার্চ ২০২৪
general-election-2019-vote-colour

একটা ‘আনফিট সার্টিফিকেট’ হবে! আর্জিতে নাকাল ডাক্তাররা

জেলা প্রশাসনের এক সূত্র জানাচ্ছে, প্রত্যেক ভোটেই ডিউটি এড়াতে কিছু কর্মী নানা ‘অজুহাত’ দেন। অব্যাহতি পাওয়া নিশ্চিত করতে অনেকে আবেদনের সঙ্গে ডাক্তারের শংসাপত্র জুড়ে দেন।

চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে সেই পোস্টার। নিজস্ব চিত্র

চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে সেই পোস্টার। নিজস্ব চিত্র

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৯ ০০:২১
Share: Save:

আনফিট সার্টিফিকেট চাই— এমন আর্জিতে নাকাল ডাক্তাররা। মেদিনীপুরের এক ডাক্তার তো আবার তাঁর চেম্বারের সামনে একাধিক পোস্টারও সাঁটিয়ে দিয়েছেন। যে পোস্টারে লেখা, ‘নির্বাচনী সংক্রান্ত কাজ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য কোনও মেডিক্যাল সার্টিফিকেট এখান থেকে দেওয়া হয় না।’’

জেলা প্রশাসনের এক সূত্র জানাচ্ছে, প্রত্যেক ভোটেই ডিউটি এড়াতে কিছু কর্মী নানা ‘অজুহাত’ দেন। অব্যাহতি পাওয়া নিশ্চিত করতে অনেকে আবেদনের সঙ্গে ডাক্তারের শংসাপত্র জুড়ে দেন। তাঁরা মনে করেন, সঙ্গে ‘আনফিট’ শংসাপত্র থাকলে, নিদেনপক্ষে শংসাপত্র অসুস্থ কিংবা চিকিৎসাধীন লেখা থাকলেও তাঁকে ভোটের ডিউটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরে এ বার ৯১০ জন ভোটকর্মী ভোটের ডিউটি থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছেন। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, এরমধ্যে ১৫১ জন আবেদনের সঙ্গে ডাক্তারের শংসাপত্র জুড়ে দিয়েছেন।

আবেদনকারী সত্যিই ভোটের কাজের জন্য ‘আনফিট’ কি না সেটা দেখতে এ বার মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ওই বোর্ডের সামনে হাজির হতে হয় আবেদনকারীকে। বোর্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। ডাক্তারের শংসাপত্রের উপর খুব বেশি কিছু নির্ভর করে না। তবু অনেকে আবেদনে বাড়তি গুরুত্ব যোগ করতে জুড়ে দিচ্ছেন ডাক্তারের শংসাপত্র। জেলার পোলিং পার্সোনেল সেলের ওসি বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য মানছেন, ‘‘শারীরিক কারণে বেশ কয়েকজন ভোটের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। আবেদনের সঙ্গে ডাক্তারের শংসাপত্র জুড়ে দিয়েছেন।’’ জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, আবেদনকারীদের প্রকৃত তথ্য যাচাই করে দেখা গিয়েছে অনেক আবেদনই যথাযথ নয়। এখনও পর্যন্ত ৯৬ জনকে শারীরিক কারণে অব্যাহতি দেওয়াও হয়েছে। জেলাশাসক পি মোহনগাঁধী বলেন, ‘‘অব্যাহতির আবেদনে যাঁরা শারীরিক অসুবিধের কথা জানিয়েছিলেন, তাঁদের বিষয়টি মেডিক্যাল বোর্ডের কাছে পাঠানো হয়েছে। বোর্ড সবদিক খতিয়ে দেখছে।’’

আজ কোথায় কোথায় ভোট, দেখে নিন

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

আনফিট সার্টিফিকেটের চাহিদা বাড়ছে। তাতেই প্রাণ ওষ্ঠাগত চিকিৎসকদের। মেদিনীপুরে চেম্বার রয়েছে চিকিৎসক প্রতীপ তরফদারের। তিনি চেম্বারের সামনে পোস্টারে লিখে জানিয়ে দিয়েছেন, ভোটের কাজ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য মেডিক্যাল সার্টিফিকেট তিনি দিতে পারবেন না। প্রতীপ বলেন, ‘‘অনেকে আসছেন। আনফিট শংসাপত্র চাইছেন। বোঝাতে গিয়ে কালঘাম ছুটছে। বাধ্য হয়ে এই পোস্টার দিয়েছি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘কে ফিট, কে আনফিট, সেটা তো মেডিক্যাল বোর্ড বলবে। এটাই অনেকে বুঝতে চাইছেন না। অথচ, যাঁরা এই আর্জি নিয়ে আসছেন, তাঁরা সকলেই সরকারি কর্মচারী।’’ মেদিনীপুর মেডিক্যালের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর তথা ফিজিশিয়ান কৃপাসিন্ধু গাঁতাইত বলেন, ‘‘হাসপাতালের বহি:র্বিভাগেও একজন এসে শংসাপত্র চেয়েছেন। ভাবা যায়!’’ মেদিনীপুর মেডিক্যালের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর তথা সার্জেন সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে। অনেকে মনে করেন, ডাক্তার কিছু একটা লিখে দিলেই বোধহয় আর ডিউটি করতে হবে না। কিন্তু তা তো নয়। কে ভোটের কাজে যেতে ফিট, কে আনফিট, সেটা মেডিক্যাল বোর্ড দেখে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE