Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বৃদ্ধ বাবা-মাকে দেখুন, ধমক বিডিওর

 বৃহস্পতিবার সকালে এমন দৃশ্য দেখে প্রবীণ মানুষটিকে অফিস ঘরে নিয়ে গিয়ে বসান বিডিও। জল খেয়ে ধাতস্থ হয়ে ধানশোলা গ্রামের বছর চুরাশির রমেশ মাহাতো কান্নায় ভেঙে পড়ে জানান, এই ব্লক অফিসেরই অস্থায়ী কর্মী রবীন্দ্র মাহাতো তাঁর ছেলে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াগ্রাম শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৮ ০২:০৫
Share: Save:

সকালবেলা অফিসে ঢুকতে গিয়ে থমকে গিয়েছিলেন নয়াগ্রামের বিডিও সৌরেন্দ্রনাথ পতি। লাঠি হাতে অশীতিপর এক বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে রয়েছেন। চোখের কোণে চিক চিক করছে জল। কী ব্যাপারে! সাতসকালে বিডিও অফিসে কেন লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে ওই বৃদ্ধ?

বৃহস্পতিবার সকালে এমন দৃশ্য দেখে প্রবীণ মানুষটিকে অফিস ঘরে নিয়ে গিয়ে বসান বিডিও। জল খেয়ে ধাতস্থ হয়ে ধানশোলা গ্রামের বছর চুরাশির রমেশ মাহাতো কান্নায় ভেঙে পড়ে জানান, এই ব্লক অফিসেরই অস্থায়ী কর্মী রবীন্দ্র মাহাতো তাঁর ছেলে। ছেলে এবং পুত্রবধূ কাজল মাহাতোর বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে এসেছেন তিনি। এখানেই থেমে যাননি ওই বৃদ্ধ। বিডিওর কাছে তিনি অভিযোগ করেন কীভাবে প্রতিনিয়ত হেনস্থার মুখে পড়ত হত তাঁদের।

রমেশবাবু বিডিও-কে জানান, বার্ধক্যভাতা বাবদ প্রতি মাসে এক হাজার টাকা পান তিনি। কিন্তু জোর করে রসিদে টিপ সই করিয়ে ওই টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলে নেন তাঁর ছেলে। তাঁকে ও তাঁর স্ত্রী আলোচনাদেবীকে ঠিক মতো খেতে দেওয়া হয় না। ছেলে-বৌমার সংসারের প্রতি মুহূর্তে অপমানিত-অত্যাচারিত হতে হয় বলে অভিযোগ করেন রমেশবাবু।

সব কথা শুনে বিডিও তাঁর দফতরের অস্থায়ী কর্মী রবীন্দ্রবাবুকে সস্ত্রীক তলব করেন। বিডিও-র অফিস চেম্বারে বৃদ্ধ বাবা-মাকে দেখে ভ্যাবাচাকা খেয়ে যান রবীন্দ্রবাবু। বিডিও-র ধমকে কাঁচুমাচু হয়ে রবীন্দ্রবাবু বোঝানোর চেষ্টা করেন, তাঁর বাবা-মা ঠিক কথা বলছেন না।

এরপরই স্থানীয় সূত্রে তথ্যের ভিত্তিতে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন বিডিও। সৌরেন্দ্রনাথবাবু স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বৃদ্ধ বাবা-মায়ের উপর অত্যাচার করা হলে তিনি ছেড়ে কথা বলবেন না। রবীন্দ্রবাবুকে কাজ থেকে বরখাস্ত করার জন্য পদক্ষেপ করবেন। এরপরই ভেঙে পড়েন রবীন্দ্রবাবু ও তাঁর স্ত্রী কাজলদেবী।

রবীন্দ্রবাবু কবুল করেন, বাবার বার্ধক্য ভাতার টাকা তিনি নিয়ে নেন। বাবা-মায়ের প্রতি আর কোনও রকম অবহেলা করবেন না বলে বিডিও-র কাছে লিখিত মুচলেকা দেন তিনি। সবার সামনে বাবা-মায়ের পা ছুঁয়ে শপথ করেন, রবীন্দ্রবাবু ও তাঁর স্ত্রী।

বিডিও-র হস্তক্ষেপে রবীন্দ্রবাবু তাঁর বাবার বার্ধক্য ভাতার পাসবই ফেরত দেন। ততক্ষণে বিডিও গাড়ি পাঠিয়ে নিয়ে আসেন রমেশবাবুর স্ত্রী আলোচনাদেবীকেও। এবার বিডিও তাঁর অফিস ক্যান্টিনে নিয়ে গিয়ে রমেশবাবু ও তাঁর স্ত্রী আলোচনাদেবীকে দুপুরের ভাত খাওয়ান। সবশেষে অফিসের গাড়িতে করে ধানশোলা গ্রামে বৃদ্ধ দম্পতিকে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করেন। পরে রবীন্দ্রবাবু বলেন, “আর ভুল হবে না। বিডিও সাহেবকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।”

বৃদ্ধ রমেশবাবু চোখের জল মুছে বলেন, “বিডিও সাহেবের কাছে গিয়ে প্রতিকার পেলাম। শেষ জীবনটা যাতে নিশ্চিন্তে বাঁচতে পারি সেই আর্জিটুকু রেখেছিলাম। বিডিও সাহেবকে ধন্যবাদ। বিডিও সাহেবকে আশীর্বাদ করেছি, ওনার ভাল হোক।”

নয়াগ্রামের বিডিও সৌরেন্দ্রনাথ পতি বলেন, “ভবিষ্যতে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করবেন না বলে ওই কর্মী লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এরপর বৃদ্ধ বাবা-মায়ের উপর অমানবিক আচরণ করা হলে ওই কর্মীর বিরুদ্ধে আইনঅনুযায়ী কড়া পদক্ষেপ করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BDO Mother Father
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE