গাছে দমকলের হোস পাইপ দিয়ে জল ছিটিয়ে তাড়ানো হচ্ছে পাখি। সোমবার রাতে হলদিয়া বন্দর আবাসনে। নিজস্ব চিত্র
রাতের অন্ধকারে নষ্ট করা হল বহু পাখির বাসা। শিল্প তথা বন্দর শহর হলদিয়ার ওই ঘটনা ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। প্রশ্ন উঠছে, এ ধরনের ঘটনায় জীব বৈচিত্র্যে কি প্রভাব পড়ছে না!
ঘটনার সূত্রপাত সোমবার রাতে। স্থানীয় সূত্রের খবর, হলদিয়া বন্দর আবাসনের অফিসার পাড়ায় ক্লাস্টার ফোরে বন্দর সংস্থার দমকল রাত ১১টা নাগাদ অন্তত ২০টি গাছে কয়েকশো পাখির বাসা জল দিয়ে ভেঙে দেয়। ওই কাণ্ডে হতবাক স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা জানিয়েছে, গভীর রাত পর্যন্ত তাঁরা শয়ে শয়ে পাখির চিৎকার শুনেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বন্দর আধিকারিক বলেন, ‘‘রাতের অন্ধকারে দমকল এনে জল দিয়ে পাখি তাড়ানো হচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছে না আমরা কোনও সভ্য দেশে রয়েছি।’’ এই কর্মকাণ্ডে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশবিদেরও।
সোমবার রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, জনা দশেক দমকল কর্মী এবং এক বন্দর আধিকারিকের উপস্থিতিতেই ওই কাজ হচ্ছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক দমকল কর্মী বলেন, ‘‘সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের পাশে মোট ২০টি গাছে জল দিয়ে পাখি তাড়ানো হয়েছে।’’ কিন্তু এভাবে রাতে পাখির বাসা নষ্ট করলে তারা যাবে কোথায়? দমকলকর্মীর উত্তর, ‘‘ওরা আবার চলে আসবে।’’ উল্লেখ্য, এটি ওই পাখিদের প্রজননের সময়। একাধিক বাসায় ডিমও ছিল বলে জানা গিয়েছে।
হলদি নদীর তীরবর্তী ওই বন্দর আবাসনে প্রতি বছর নানা প্রজাতির বক আসে। এর মধ্যে বিরল প্রজাতির সাইবেরিয়ান ক্রেনও থাকে। মুলত, এদের বিষ্ঠা থেকেই আপত্তি বন্দরের একাংশের বাসিন্দাদের। তাঁদের দাবি, ওই সব পাখি দূষণ ছড়াচ্ছে। এর আগেও কখনও বাজি ফাটিয়ে, আবার কখনও পাখির বাসা শুদ্ধ ডাল কেটে দেওয়া অভিযোগ উঠেছে। গত বছর এভাবেই কয়েকশো পাখির বাচ্চা-সহ গাছের ডাল কেটেছিল বন্দর সংস্থা। তা নিয়ে সে সসময় বিতর্ক হয়েছিল। দাবি, তাই এবার রাতে অন্ধকারে ভাঙা হল বাসা।
স্থানীয় পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলি ওই কাজের তীব্র সমালোচনা করেছে। হলদিয়া বিজ্ঞান পরিষদ ও বিজ্ঞানমঞ্চও ওই কাজের নিন্দা করেছে। একটি পক্ষীপ্রেমী সংগঠনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই সই সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু কেন এমন হল? এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে বন্দরের প্রশাসনিক ম্যানেজার অমল দত্তকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। বন্দরের প্রশাসনিক ডেপুটি ম্যানেজার (প্রসাশন) তনিমা ঘোষ বলেন, ‘‘আমি বাইরে রয়েছি। এ বিষয়ে কিছু জানি না।’’
এ ব্যাপারে পুর্ব মেদিনীপুরে মুখ্য বন আধিকারিক স্বাগতা দাসের বক্তব্য, ‘‘আমাদের কিছু করার নেই। ওই কাজ দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের।’’ যদিও পূর্ব মেদিনীপুরের প্রাক্তন মুখ্য বন আধিকারিক পি কে পাল বলেন, ‘‘ওই সব গাছে সাইবেরিয়ার ক্রেন আসে। পরিবেশ আর খাদ্য রয়েছে বলেই ওরা এখানে আসে। এবার মানুষ যদি ওদের পেছনে লাগে, তাহলে কি আর ওরা আসবে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy