Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সাড়ে চার টাকায় পাতে মাছ-ডিম-আলুপোস্ত!

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ। তৎপর প্রশাসনও। কিন্তু সামান্য টাকায় পুষ্টি মিলবে কি!

মিড -ডে মিল খাচ্ছে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

মিড -ডে মিল খাচ্ছে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

তমলুক: শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৯ ০১:০২
Share: Save:

পড়ুয়াদের পাতে সপ্তাহে দু’দিন ভাতের সঙ্গে মাছ বা ডিমের ঝোল, একদিন আলু পোস্ত, একদিন সয়াবিন ও দু’দিন আনাজের তরকারি থাকা বাধ্যতামূলক। সঙ্গে পাঁচ দিন ডাল ও দু’দিন চাটনি থাকতেই হবে। মিড ডে মিল নিয়ে এই তালিকা সব স্কুলে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলাশাসকদের। তালিকা অনুযায়ী খাবার ঠিকমতো দেওয়া হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারেও নজরদারি আরও বাড়ানোর কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

তবে মিড-ডে মিলের খাবারের তালিকা প্রকাশ এই প্রথম নয়। আগেও কয়েকবার এই ধরনের তালিকা প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু দেখা গিয়েছে, বহু ক্ষেত্রেই ওই তালিকা অনুযায়ী পড়ুয়াদের পাতে খাবার দেওয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ এসেছে অভিভাবকদের কাছ থেকে। দিন কয়েক আহে হুগলির চুঁচুড়ায় বালিকা বিদ্যামন্দির স্কুলে মিড ডে মিল নিয়ে অভিযোগে শোরগোল পড়ে রাজ্যে। সেখানকার পড়ুয়াদের অভিযোগ ছিল, মিড-ডে মিল হিসাবে তাদের পাতে পড়ে স্রেফ নুন-ভাত। বিষয়টি জানতে পারে তা নিয়ে প্রতিবাদ করেন স্থানীয় বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। এমন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে বলে জানান। ঘটনার পর গত ২১ অগস্ট দিঘায় প্রশাসনিক বৈঠকেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলের বিষয়টি রাজ্য সরকার খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন।

সেখানেই খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, সমস্ত অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ও স্কুলে নিয়মিত পরিদর্শনে যেতে হবে। মিড - ডে মিলের খাবার পড়ুয়াদের পাতে ঠিকমত পাচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। চেখে দেখতে হবে খাবারের মান। বিডিও, এসডিও এবং পুলিশের আধিকারিকদের স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র পরিদর্শনে যাওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। পাশাপাশি সাংবাদিকদেরও স্কুলে ঘুরে এ সম্পর্কে তথ্য জানানোর পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর এমন নির্দেশের পরেই নড়েচড়ে বসেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসনের মিড-ডে মিল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক (ট্রেজারি) সমস্ত পুরপ্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, বিডিওদের কাছে চিঠি দিয়ে মিড-ডে মিলের সাপ্তাহিক খাবার তালিকা দিয়ে জানিয়েছেন, তালিকা অনুযায়ী পড়ুয়াদের খাবার দেওয়ার বিষয়টি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে ও নিয়মিতভাবে পরিদর্শন ও দেখাশোনা করতে হবে। এসডিও, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল পরিদর্শক, অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকদেরও এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘মিড-ডে মিল বিষয়ে নির্দেশিকা মেনে যাতে সব স্কুলে পড়ুয়াদের খাবার দেওয়া হয় তা জানানো হয়েছে।’’
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, মিড-ডে মিলে ভাত ছাড়া কি কি তরকারি দিতে হবে তার তালিকা সংক্রান্ত প্রথম নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ২০১২ সালে। পরে ২০১৬ ও ২০১৮ সালে এবিষয়ে ফের নির্দেশিকা দেওয়া হয়। প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানান, ২০১৮ সালে মিড-ডে মিলের যে তালিকা দেওয়া হয়েছিল এবারও সেই তালিকা অপরিবর্তিত রেখে কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশ হয়েছে। কিন্তু এর জন্য যে অর্থ বরাদ্দ হয়, তা তালিকা অনুযায়ী পড়ুয়াদের পাতে খাবার দেওয়ার জন্য মোটেই বাস্তব সম্মত নয়। পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সাধারণ সম্পাদক অরূপকুমার ভৌমিক বলেন, ‘’মঙ্গলবার ভাত, ডাল, মাছ বা ডিমের ঝোল ও চাটনি দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। বৃহস্পতিবার ভাত, মাছ বা ডিমের ঝোল ও আনাজের তরকারি দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। যেখানে পড়ুয়াদের জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ ৪ টাকা ৪৮ পয়সা। সেথানে বাজারে একটি ডিমের দাম ৫ টাকা। এক পিস মাছের দাম কমপক্ষে ৮ টাকা। এতে পড়ুয়াদের পাতে মাছ বা ডিমের ঝোল দেওয়া কী ভাবে সম্ভব!’’ তাঁর দাবি, খাবারের তালিকা অনুযায়ী বাস্তবসম্মত অর্থ বরাদ্দ হোক। না হলে মিড-ডে মিল নিয়ে শিক্ষকদের হেনস্থার আশঙ্কা রয়েছে।’’
বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক সতীশ সাউ বলেন, ‘‘’মিড-ডে মিলের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ হয় তার সঙ্গে খাবারের তালিকার সামঞ্জস্য নেই। আসলে সরকারি ব্যর্থতা ঢাকতে এটা করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mid Day Meal Mamata Banerjee Mid Day Meal Menu
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE