Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

মেদিনীপুরে তান্ত্রিক পুজো, মাটির নীচে নাকি ৩৫ হাজার কোটি!

পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সোমবার থেকে একটি ঘরে ‘এল’ আকারের গর্ত খোঁড়া শুরু হয়েছিল। সকাল থেকেই চলত পুজোপাঠ। রীতিমতো ফুল-বেলপাতা দিয়ে। ছিল প্রদীপও। অতিথিদের থাকার জন্য ঘরের সঙ্গেই ত্রিপল দিয়ে একটি অস্থায়ী ঘর তৈরি হয়েছিল। সেখানে আলো-পাখার ব্যবস্থা করাও হয়েছিল। ভাড়া করে আনা হয়েছিল জেনারেটরও।

মাটি খুঁড়ে এ ভাবেই চলছিল পুজো। নিজস্ব চিত্র

মাটি খুঁড়ে এ ভাবেই চলছিল পুজো। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
চন্দ্রকোনা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৮ ০১:৪৯
Share: Save:

অশুভ শক্তিকে তাড়াতে পারলে মিলবে নাকি ৩৫ হাজার কোটি টাকা!

অশুভ শক্তির থেকে রেহাই মিলবে কি করে। তার উপায়ও আজব! সে জন্য করতে হবে নানা আচার-অনুষ্ঠান। খোঁড়াখুঁড়ি করতে হবে মেঝেতেও। আর এ সব বুঝিয়েই চন্দ্রকোনা-২ ব্লকের পিয়ারডাঙা গ্রামে গেড়ে বসেছিলেন চার ‘তান্ত্রিক’। খবর পেয়ে ব্লক প্রশাসন জেনেছে, গোটাটাই কুংস্কারের ফল। যাঁর বাড়িতে ওই ‘তান্ত্রিকেরা’ ঘাঁটি’ গেড়েছে তাঁদের সঙ্গে কথাও বলা হচ্ছে।

চন্দ্রকোনা শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার গেলেই পাকা রাস্তার ধারে পড়বে পিয়ারডাঙা গ্রাম। গ্রামের একবারে কোণে ঘন বাঁশ গাছ ঘেরা নির্জন জায়গায় বাড়ি হক সেন ভাঙির। মাটির তিন কামরার বাড়ি। পাঁচ ছেলে-মেয়ে। অভাবের সংসার। এখানেই ঘাঁটি গেড়ে বসেছিলেন চার ‘তান্ত্রিক’। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সোমবার থেকে একটি ঘরে ‘এল’ আকারের গর্ত খোঁড়া শুরু হয়েছিল। সকাল থেকেই চলত পুজোপাঠ। রীতিমতো ফুল-বেলপাতা দিয়ে। ছিল প্রদীপও। অতিথিদের থাকার জন্য ঘরের সঙ্গেই ত্রিপল দিয়ে একটি অস্থায়ী ঘর তৈরি হয়েছিল। সেখানে আলো-পাখার ব্যবস্থা করাও হয়েছিল। ভাড়া করে আনা হয়েছিল জেনারেটরও।

অপরিচিত লোকজনদের আনাগোনা সন্দেহ হয় এলাকার বাসিন্দাদের। ক’দিন ধরে গ্রামের কয়েকজন ওই বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি দেখে এসেছিলেন। ফুল-বেলপাতা সহ পুজোর নানা উপকরণ দেখে শুক্রবার সকালে গ্রামের মানুষ বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি জানতে চান। তাঁদের কথাবার্তায় এলাকার বাসিন্দাদের সন্দেহ আরও বাড়ে। খবর পেয়ে যান বিডিও শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ী। ততক্ষণে ওই বাড়িতে ভিড় জমান পিয়ারডাঙা-সহ সংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দারা। বিডিও গিয়ে কথা বলেন হকসেন ভাঙির পরিজনেদের সঙ্গে। চার অপরিচিত ‘তান্ত্রিকের’ সঙ্গেও তাঁরা কথা বলতে শুরু করেন। অভিযোগ, বিপদ আঁচ করে এক সময় চম্পট দেয় তারা। বাড়ি ছেড়ে বেপাত্তা হয়ে যায় হক সেন ভাঙিও। শুক্রবার দুপুর পযর্ন্ত হক সেন ভাঙি বাড়ি ফেরেনি। এলাকার বাসিন্দাদের অবশ্য সাফ বক্তব্য, “এই সব বুঝরুকি ছাড়া অন্য কিছু নয়। এর পিছনে অন্য গল্প আছে। পুলিশ তদন্ত করুক।”

বছর খানেক আগের কথা। স্থানীয় সূত্রে দাবি, হক সেন ডাঙির বাড়িতে মাঝে মধ্যেই টর্চের আলো কিংবা এমার্জেন্সি আলো ব্যবহার করলেই দপদপ করে নিভে যাচ্ছিল। কেন এমনটা হচ্ছে তা জানতে গুণিনের পরামর্শ নিয়েছিলেন তাঁরা। তখনই তাঁরা জানতে পারেন ঘরে ৩৫ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি আছে। তবে ঘরে অশুভ শক্তি ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই আগে সেই অশুভ শক্তিকে নষ্ট করতে হবে। তারপর মিলবে এই বিপুল পরিমাণ টাকা ও সোনা।

হক সেন ভাঙির স্ত্রী অনুসুরা বিবির দাবি, “এর আগেও একবার ঘরে গর্ত খোঁড়া হয়েছিল। তখন কিছু মেলেনি। তাই ফের পুজো মাধ্যমে গর্ত খোঁড়া শুরু হয়েছিল।” অনুসুরা বিবির দাবি, “আমরা কাউকে চিনতাম না। ওরাই সব খরচ দিচ্ছিল। ঘর থেকে যা মিলবে তার অর্ধেক আমাদের দেবে বলেছিল। বাকি ওরা নিয়ে নিত।”

বিডিও বলেন, “অসৎ উদ্দেশ্য নিয়েই ওই চার জন অপরিচিত এখানে এসেছিল। তবে কী ভাবে এদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল তা জানা যায়নি। পুলিশকে পুরো বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছে।” তিনি জানান, “কুসংস্কারে ভর করেই ওই পরিবার এমন কাজ করেছে। প্রয়োজনে ওই পরিবারের সদস্যদের কাউন্সেলিং করার ব্যবস্থা করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ritual Shaman Superstition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE