বাড়ির পথে ওড়িশার শ্যামসুন্দর। নিজস্ব চিত্র
তিন বছর ধরে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডই হয়ে উঠেছিল ঘরবাড়ি। ৩০ বছর চলছিল নিরুদ্দেশের সন্ধান। অবশেষে মধুরেণ সমাপয়েৎ। বৃহস্পতিবার ঘাটাল মহকুমা হাসপাতাল থেকে পরিজনদের সঙ্গে ওড়িশায় বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলেন শ্যামসুন্দর পড়িয়া। সৌজন্যে পুলিশ আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি দাসপুরের সোনাখালিতে দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন শ্যামসুন্দর। তাঁকে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করায় পুলিশ। মাথায় ও পায়ে আঘাত লেগেছিল প্রৌঢ় শ্যামসুন্দরের। শল্য বিভাগে টানা চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হন। কিন্তু কিছুতেই নিজের নাম-ঠিকানা বলতে পারছিলেন না। খোঁজ করতেও কেউ আসেনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই প্রৌঢ়কে আইসোলেশন ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করে পৃথক কেবিনের বন্দোবস্ত করে দেন।
এতদিন ওই কেবিনই ছিল প্রৌঢ়ের ঠিকানা। হাসপাতালের অনেকেই তাঁকে নতুন পোশাক কিনে দিতেন। কিন্তু হাজার চেষ্টাতেও কেউ জানতে পারেননি কোথায় তাঁর বাড়ি, কী ভাবে এলেন সোনাখালিতে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, দিন দশেক আগে হঠাৎ তিনি কথা বলতে শুরু করেন। নাম ও ঠিকানাও গড়গড় করে বলে দেন। ঠিকানার হদিস পেয়েই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মার্চের শেষ সপ্তাহে থানায় জানিয়ে আসে। প্রৌঢ় জানান, তাঁর নাম শ্যামসুন্দর পড়িয়া। বাবার নাম বংশীধর। ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার বৈশিংহ থানার দেওপদা গ্রামে বাড়ি। ওই ঠিকানা ধরে খোঁজ চালায় ঘাটাল থানা। ঘাটাল থানার ওসি দেবাংশু ভৌমিক কথা বলেন বৈশিংহ থানার আইসির সঙ্গে। জানা যায়, বছর তিরিশেক আগে শ্যামসুন্দর বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। তখন প্রৌঢ়োর বয়স ৪০-র কিছু বেশি। ছোট থেকেই শ্যামসুন্দর টিউশনি পড়াতেন। মানসিক সমস্যা ছোট থেকেই ছিল। সংসার করেনি।
এ দিন দুপুরে ওড়িশার বাড়ি থেকে শ্যামসুন্দরের ভাইপো অশোক চন্দ্র পড়িয়া এবং এক আত্মীয় নথিপত্র নিয়ে ঘাটাল থানায় যোগাযোগ করেন। পুলিশের গাড়িতেই তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় ঘাটাল হাসপাতালে। অশোক চন্দ্র বললেন, “কাকাকে বহু খুঁজেছি। কিছুতেই পাইনি।একসময় আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। সেই কাকাই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে এর চেয়ে আনন্দের আর কী থাকতে পারে।” সুপার কুণাল মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “উনি (শ্যামসুন্দর) দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন।এমন মানুষকে সুস্থ করে পরিবারের হাসি মুখ দেখাই তো বাড়তি পাওনা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy