ফাইল চিত্র।
বানানো হয়েছে কিসান মান্ডি। কোথাও বানানো হয়েছে রেগুলেটেড মার্কেট। কিন্তু তার পরেও নিজেদের পুরনো বাজার-দোকান ছেড়ে সেই সব মান্ডি-মার্কেটে যাচ্ছেন না বহু ব্যবসায়ী।
কিন্তু কেন? জেলার বিভিন্ন কিসান মান্ডি সংলগ্ন এলাকার বাজারগুলিতে খোঁজ নিয়ে যে তথ্য উঠে আসছে, তার মধ্যে অন্যতম দু’টি কারণ হল— মান্ডিগুলির ‘খারাপ’ অবস্থা এবং দোকানঘর বিলিতে বিলম্ব বা ‘দুর্নীতি’।
ভগবানপুর-২ ব্লকের শান্তিয়া এলাকায় রয়েছে একটি মান্ডি। সেখানে কৃষিপণ্য কেনাবেচার বদলে রাখা হয়েছে রাজ্য সরকারের ‘সবুজ সাথী’ প্রকল্পের সাইকেল। অথচ ওই এলাকার দেড় কিলোমিটারের মধ্যেই রয়েছে ইটাবেড়িয়া হাট-বাজার। ওই বাজার এতটাই জনপ্রিয় যে, আগে যেখানে সপ্তাহে ২ দিন হাট-বাজার বসার কথা ছিল, সেখানে এখন প্রতিদিনই দোকান বসছে। আবার মান্ডির তিন কিলোমিটার দূরে রয়েছে মাধাখালি বাজার। ওই বাজারে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। ওই দুই বাজারের আনাজ থেকে অন্য সামগ্রীর একাধিক ব্যবসায়ীর বক্তব্য, এমন জমজমাট বাজার ছেড়ে তাঁরা অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গায়র মান্ডিতে যাবেন কেন?
আবার নন্দীগ্রামের হরিগ্রামে যে কিসান মান্ডি রয়েছে, সেটির ক্ষেত্রেও অবস্থানগত কারণকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা রেয়াপাড়া এবং ১ ব্লকের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা টেঙ্গুয়া বাজার থেকে ওই কিসান মান্ডির দূরত্ব বেশি। ফলে ধান খেতের মাঝখানে ফাঁকা জায়গায় অনেকেই ব্যবসা করতে যেতে রাজি হননি। স্থানীয় ব্যাবসায়ীর কথায়, ‘‘মান্ডি এমন জায়গায় যে, আমরাই জিনিস কিনতে যেতে চাইব না। আর আমজনতা আমাদের কাছ থেকে জিনিস কিনতে ওখানে আসবেন কেন!’’ পাঁশকুড়ার ক্ষেত্রে আবার ব্যাপারটি অন্যরকম। সেখানের স্টেশন বাজারের বহু ব্যবসায়ী কৃষক বাজারে যেতে চাইছেন। দোকান বিলির জন্য অগ্রিম টাকাও দিয়েছেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এখনও সেখানে দোকানঘর বিলি হয়নি বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
জেলা সদর তমলুকে কিসান মান্ডি তৈরি হয়েছে সম্প্রতি। মান্ডির ২২টি স্থায়ী দোকানের মধ্যে ছ’টি ‘সুফল বাংলা’র জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। পুরসভার জন্য রয়েছে তিনটি স্টল। বাকি ১৩ টি স্টল এখনও বণ্টন হয়নি। ওই চত্বরেই তৈরি করা হয়েছিল রেগুলেটেড মার্কেট। সেখানে রয়েছে প্রায় ২০০টি দোকান। কিন্তু সেটিও পুরোদমে চালু হয়নি। ওই মার্কেটের দোকান প্রাপকদের মধ্যে মাত্র ৬০ জন কৃষিপণ্য বাদে বিভিন্ন ব্যবসা শুরু করলেও অধিকাংশ দোকানঘরের ঝাঁপ বন্ধ। এরফলে গোটা মার্কেট চত্বরে ভুতুড়ে বাড়ির মত সারি দিয়ে বন্ধ রয়েছে দোকানঘর।
ওই মার্কেটে দোকান চালু করা ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, লটারির মাধ্যমে দোকান বণ্টন করার ফলে অনেক প্রকৃত ব্যবসায়ী দোকান পাননি। ফলে যে উদ্দেশ্যে এখানে বাজার গড়া হয়েছিল, তা পূরণ হয়নি। ব্যবসায়ীদের অনেকেই দোকান না পেয়ে পুরনো বাজারে বা ফুটপাতে আনাজ ও মাছ ব্যবসায় করতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার অনেকেই স্বেচ্ছায় ওই মান্ডি বা মার্কেটে যেতে চাননি। এমনই এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘আগে সন্ধ্যের পর থেকেই ওই এলাকায় আলো জ্বলত। কিন্তু কিছুদিন হল তা জ্বলে না। ফলে মদ্যপানের জন্য অনেকেই নিয়মিত এখানে আসেন। নিরাপত্তার সমস্যা রয়েছে।’’ পাশপাশি, বাজার সাফাই করা হয় না বলেও অনেকে অভিযোগ করেছেন।
তমলুক রেগুলেটেড মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মনোজ হালদার বলেন, ‘‘দোকান পাওয়া ব্যক্তিরা যাতে সবাই ব্যবসা চালু করেন, সে জন্য প্রশাসনের তরফে কয়েকবার নোটিস দেওয়া হয়েছে। তবে এখনও অনেকে দোকান চালু করেনি এটা ঠিক। আমরা সমস্ত দোকান চালুর চেষ্টা চালাচ্ছি।’’ জেলা রেগুলেটেড মার্কেট কমিটির চেয়ারম্যান তথা জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘তমলুক রেগুলেটেড মার্কেটে সমস্ত দোকান চালু করার জন্য আমরা উদ্যোগী হয়েছি। এ জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy