Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
হাসি-কান্না হীরা-পান্না

মাঠ থেকে হেঁশেল—আনাজ দরে আগুন

পকেট ভরা টাকা নিয়ে গিয়েও বাজারের থলে ভরছে না গৃহস্থের। স্বাভাবিক ভাবে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন বাজার ফেরত গৃহকর্তা। আর চাষিরা আশ্বস্ত করছেন, এই ক’দিনই তো দুটো পয়সার মুখ দেখা যায়। এটা না হলে যে ধনেপ্রাণে মরতে হত।

লেগেছে আগুন

লেগেছে আগুন

অভিজিৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল     শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:০৫
Share: Save:

একের পর এক বিপর্যয় কাটিয়ে অবশেষে কিছুটা লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন চাষিরা।

পকেট ভরা টাকা নিয়ে গিয়েও বাজারের থলে ভরছে না গৃহস্থের। স্বাভাবিক ভাবে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন বাজার ফেরত গৃহকর্তা। আর চাষিরা আশ্বস্ত করছেন, এই ক’দিনই তো দুটো পয়সার মুখ দেখা যায়। এটা না হলে যে ধনেপ্রাণে মরতে হত।

প্রবীণ চাষিদের একাংশ এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের উদ্যান পালন দফতরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বুলবুলে ক্ষতির ক্ষত কাটিয়ে এ বার কিছুটা হলেও লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা।

উদ্যান পালন দফতর সূত্রে পাওয়া হিসেব অনুযায়ী, যে চাষি বেগুন ফলান, তাঁর প্রতি কাঠায় ফসল উৎপাদনে খরচ হয় প্রায় দু’হাজার টাকা। প্রতি কাঠায় বেগুন উৎপাদন হয় প্রায় ৬০০ কিলোগ্রাম। অর্থাৎ কিলোগ্রাম প্রতি খরচ, প্রায় সাড়ে ৩টা টাকা। এরপর বেগুন পৌঁছয় পাইকারি বাজারে। সেখান থেকে খুচরো বিক্রেতা বেগুন কেনেন প্রতি কিলোগ্রাম ৩৫ টাকা দরে। বাজারে তা বিক্রি হয় ৪০-৫০ টাকা কিলোগ্রাম দরে। উৎপাদন খরচ সাড়ে ৩টা টাকা। আর তা বিক্রি হচ্ছে ৫০টাকায়! এত টাকা তা হলে কার মুনাফা? চাষির নাকি ফড়েদের। না আড়তদারদের? প্রবীণ চাষিদেরই একাংশ জানাচ্ছেন, সাড়ে ৩টা টাকা নয়। উৎপাদন খরচ প্রকৃতপক্ষে আরও বেশি। কারণ, মাঠ থেকে ফসল বাড়ি নিয়ে আসা। কিছুটা রক্ষণাবেক্ষণ। পরে পরিবহণের মাধ্যমে আড়তদারদের কাছে পৌঁছনো এবং সেখান থেকে ফসল নামানো। পুরো এই প্রক্রিয়া প্রতি কিলোগ্রামে প্রায় ১০ টাকা উৎপাদন খরচে যোগ হয়। অর্থাৎ তা বেড়ে হয় প্রায় ১৪টাকা। কিন্তু চাষিদের কাছ থেকে আড়তদারেরা যদি প্রতি কেজি ৩৫ টাকা দরে বেগুন কেনেন, তা হলেও তো মুনাফার ব্যবধান গিয়ে দাঁড়ায় ১৫টা!

প্রবীণ চাষিদেরই একাংশ জানাচ্ছেন, খাতায় কলমে সেটা দেখা গেলেও এর সঙ্গে যোগ করতে হবে, আবহাওয়া জনিত ক্ষয়ক্ষতি। বিশেষ করে এই মরসুমে তো একাধিকবার বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে আনাজের ফলন। তাই ১৪ নয়। সবদিক হিসেব করলে মেরেকেটে এ বার মুনাফা থাকছে কেজি প্রতি ৮-১০টাকা। তবে মুনাফার এই পরিমাণ যে কম তা অবশ্য স্বীকার করে নিচ্ছেন প্রবীণ চাষিদের একাংশ।

শুধু বেগুন নয়। প্রায় সব আনাজের ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচের সঙ্গে গড়ে ১০টাকা সংযোজন হয়। তবে চাষি এবং উদ্যান পালন দফতরের আধিকারিকদের একাংশ এটা মনে করিয়ে দিতে ভুলছেন না, এ সব হিসেবেই আনুমানিক। স্থান, কাল ভেদে দামের হেরফের ঘটে। কিছু ক্ষেত্রেও হেরফেরের পরিমাণ হয় আকাশ-পাতাল। কারণ, আনাজের ক্ষেত্রে দাম অধিকাংশই নির্ভর করে প্রতিদিনের চাহিদা যোগানের উপর।

পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর আনাজ উৎপাদনে প্রথম সারিতে। জেলার সবং, ডেবরা, গড়বেতা, শালবনি, চন্দ্রকোনা রোড- সহ বিভিন্ন ব্লকেই মরসুমি আনাজ চাষ হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চাষিদের কাছ থেকে ফড়েরা আনাজ কিনে নেন। নগদ টাকাও পেয়ে যান চাষিরা। ফড়ের হাত ঘুরে আনাজ পাইকারি বাজারে পৌঁছলে আরও কিছুটা দামের হেরফের ঘটে। চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এ বার বছরের শুরু থেকেই একেক করে বিপর্যয় হয়েছে। এতে উৎপাদন শুরুর আগে নষ্ট হয়েছিল চারা গাছ। অনেককে নতুন করে চাষ করতে হয়েছে। শাক জাতীয় কিছু ফসল একেবারে নষ্ট হয়েছিল। ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুনের অর্ধেক গাছ নষ্ট হয়েছিল। তাই এ বার ভরা মরসুমেও চাহিদার তুলনাই উৎপাদন কম। তার জেরে দামও অগ্নিমূল্য। দাসপুরের পাইকান গ্রামের খগেন সামন্ত, কিসমত কলোড়ার অসিত দাস, মুকুন্দপুরের গৌর পালেরা বললেন, “এখন বাড়তি লাভ হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু গত কয়েক মাসে চাষে যে ক্ষতি হয়েছে, এই লাভে এখনও সেই ঘাটতি পুষোতে পারেনি।”

তা হলে উপায়? আর কতদিন দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হবে গৃহকর্তাকে?

চাষি এবং উদ্যান পালন দফতর। আশ্বস্ত করছে দু’পক্ষই। সবুর করুন। দাম কমবেই। জেলা উদ্যানপালন আধিকারিক কুশধ্বজ বাগ বললেন, “কয়েকদিন পরই উৎপাদন বেড়ে যাবে। দাম কমলেও তখনও চাষিরা লাভ পাবেন। সস্তায় আনাজ পাবেন আমজনতাও।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Price Price Hike Food Price
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE