Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

গেরুয়া ভয়ে গণইস্তফা

ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল ঝাড়গ্রাম গ্রামীণ ব্লকের টিএমসিপির সদস্যরা মঙ্গলবার একযোগে সাংগঠনিক সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, সংগঠনের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের সহযোগিতা মিলছে না।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৩৪
Share: Save:

গেরুয়া-হুমকিতে ‘ত্রস্ত’ শাসকদলের ছাত্র সংগঠন! তৃণমূল ছাত্র পরিষদে তাই গণ-ইস্তফা জঙ্গলমহলে।

ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল ঝাড়গ্রাম গ্রামীণ ব্লকের টিএমসিপির সদস্যরা মঙ্গলবার একযোগে সাংগঠনিক সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, সংগঠনের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের সহযোগিতা মিলছে না। তাই তাঁরা আর সংগঠনে থাকতে চান না।

জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামে গত লোকসভা ভোটে ভরাডুবি হয়েছে তৃণমূলের। ফুটেছে পদ্ম। ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া শাসকদল মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর ঘাড়ে দায়িত্ব সঁপেছে। সংগঠন চাঙ্গা করতে নানা দাওয়াইও দিচ্ছেন নন্দীগ্রামের সেনাপতি। তবে সে সবের মধ্যেই দলের ছাত্র সংগঠনে এমন ভাঙন শোরগোল ফেলে দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেবেন বলে জানিয়েছেন টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য।

টিএমসিপির জেলা সভাপতি সত্যরঞ্জন বারিক বলেন, ‘‘অভিমানেই ওরা এই কাজ করেছে। সকলকে বুঝিয়ে ফিরিয়ে আনা হবে।’’ ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী বিরবাহা সরেনের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘সন্ত্রাস হলে রাজনৈতিক ভাবেই মোকাবিলা করব। কারা পদত্যাগ করেছেন, ঠিক কী হয়েছে খোঁজ নিচ্ছি।’’ আর ‘সন্ত্রাস’ প্রসঙ্গে ঝাড়গ্রাম জেলার পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘যেখানে যে রকম অভিযোগ হচ্ছে সেই মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’

সাঁকরাইল ব্লক টিএমসিপি-র সভাপতি দীপক বেরা, সাঁকরাইল অনিল বিশ্বাস স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের টিএমসিপি ইউনিট সভাপতি সন্তু বারিক-সহ ৪৫ জন জেলা সভাপতির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, গত ৩০ অগস্ট কলেজের টিএমসিপি সমর্থক দুই ছাত্রীকে মারধর করে এবিভিপির সদস্যরা। ওই ঘটনায় জেলা নেতৃত্ব কোনও গুরুত্ব দেননি। প্রশাসনিক সহযোগিতাও মেলেনি। অন্য দিকে ঝাড়গ্রাম গ্রামীণ ব্লক টিএমসিপি-র সভাপতি শেখ নজরুলও ইস্তফা দিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছেন টিএমসিপি-র ৪২জন সদস্য। নজরুল পদত্যাগপত্রে জানিয়েছেন, সাংগঠনিক কাজ করতে গিয়ে তিনি ও কর্মীরা বিভিন্ন সমস্যা ও দলীয় অসহযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছেন। নেতৃত্বকে জানিয়েও কাজ না হওয়ায় পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন।

নজরুল বলেন, ‘‘এলাকায় গেরুয়া সন্ত্রাস শুরু হয়েছে। মানিকপাড়া কলেজে আমরা ইউনিট তৈরি করতে পারিনি। ক্রমাগত আমাদের সদস্যরা পথেঘাটে আক্রান্ত হচ্ছেন। রাত বিরেতে বাড়ি গিয়েও ধমকাচ্ছে গেরুয়া বাহিনী। পুলিশে অভিযোগ করে বিপদ আরও বেড়েছে। নিরাপত্তা না পেয়ে সদস্যরা আর ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।’’ টিএমসিপি-র সাঁকরাইল কলেজ ইউনিটের সভাপতি সন্তু বারিকও বলেন, ‘‘একেবারে প্রকাশ্যে গেরুয়া সন্ত্রাস শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে উচ্চনেতৃত্ব পাশে না থাকলে কীভাবে সাংগঠনিক কাজ করব!’’

সন্ত্রাসের অভিযোগ মানছে না গেরুয়া ছাত্র সংগঠন। এবিভিপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সংযোজক স্বরূপ ধল বলেন, ‘‘টিএমসিপি-ই তো কলেজগুলিতে সন্ত্রাস করছে। আমরাই আক্রান্ত হচ্ছি।’’ স্বরূপের মতে, ‘‘তবে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ওদের সমর্থন তলানিতে ঠেকেছে। এ সব সেই হতাশার প্রতিফলন।’’

গত ১ অগস্ট মানিকপাড়া কলেজের কাছে মিছিল করতে গিয়ে আক্রান্ত হন টিএমসিপি সদস্যরা। সে দিন বার বার উচ্চ নেতৃত্বকে জানিয়েও সময়মতো কেউ আসেননি। সে দিন বেধড়ক মার খেতে হয় কয়েকজন টিএমসিপি সদস্যকে। মানিকপাড়া কলেজে নির্বাচিত ছাত্র সংসদ নেই ঠিকই, তবে কলেজের নিয়ন্ত্রণ এখন এবিভিপি-র ইউনিটের হাতে। সাঁকরাইলের কলেজে টিএমসিপি ইউনিট থাকলেও ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে এবিভিপি। প্রায়ই গোলমাল হচ্ছে। কয়েকদিন আগে টিএমসিপি ক্লাস ডায়াসিং করতে গেলে এবিভিপি বাধা দেয় বলে অভিযোগ। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে টিএমসিপি সমর্থক দুই ছাত্রীকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে এবিভিপি-র বিরুদ্ধে।

বেলপাহাড়ির শিলদা কলেজেও টিএমসিপি ইউনিটের সদস্যরা রীতিমতো সন্ত্রস্ত হয়ে জেলা নেতৃত্বের কাছে এ দিনই মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন, এবিভিপি ও বিজেপির লোকজ‌ন বাড়িতে হানা দিচ্ছে। নেতৃত্ব পাশে না দাঁড়ালে কাজ করা অসম্ভব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jhargram Gramin Block BJP TMCP ABVP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE