রাতের হলদিয়া। বন্ধ ওষুধ দোকান। নিজস্ব চিত্র
দোকানের শাটারের দরজায় লেখা রয়েছে ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা মিলবে। কিন্তু বাস্তব চিত্রটা অন্য। রাত বাড়লে দোকানের ঝাঁপও বন্ধ হয়ে যায়!
হলদিয়ায় গভীর রাত জীবনদায়ী ওষুধ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার বলেই জানাচ্ছেন বহু শহরবাসী। অভিযোগ, ব্রজলালচক থেকে দুর্গাচক, টাউনশিপ থেকে চৈতন্যপুর— সর্বত্র রাত হলেই বন্ধ থাকে ওষুধের দোকান।
শিল্প ও বন্দর শহর হওয়ায় হলদিয়ায় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। মহকুমা হাসপাতাল ছাড়াও হলদিয়ায় ৯টি নার্সিংহোম এবং একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে। অথচ মহকুমা হাসপাতালের সামনে থেকেই রাতে ওষুধ মেলে না বলে অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রের খবর, দুর্গাচকে যেখানে মহকুমা হাসপাতাল রয়েছে, ওই এলাকায় সাত–আটটি ওষুধ দোকান রয়েছে। কিন্তু দোকানগুলির বেশিরভাগই রাত সাড়ে ১০টার পর বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, হাসপাতালের অদূরে একটি বেসরকারি নার্সিংহোম রয়েছে। তার নীচে যে ওষুধ দোকান রয়েছে, রাতে সেটিই একমাত্র ভরসা রোগীর পরিজনের। সেটিই সারা রাত খোলা থাকে।
স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, মঞ্জুশ্রী মোড়ে আকাশ গঙ্গা কমপ্লেক্সে একাধিক ওষুধ দোকান রয়েছে। কিন্তু সেগুলি সকাল ৬টায় খুললেও রাত একটু বাড়লেই বন্ধ হয়ে যায়। টাউনশিপের মত বড় চত্বরে ২০টির বেশি ওষুধ দোকান রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, রাত ৯টা বাজলেই সেগুলি বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে তখন একমাত্র সম্বল ক্লাস্টার–ফোরের সিপিটি কো-অপারেটিভের একটি কাউন্টার। একই ছবি রায়রায়চক, পোড়ারচক এলাকায়।
গোপাল নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘মা অসুস্থ হয়েছিল। দোকান বন্ধ থাকায় রাতে আট কিমি দূরে সাইকেল চেপে ওষুধ কিনতে হয়েছিল।’’ মহকুমা হাসপাতাল চত্বরের এক যুবক দেবগোপাল মাইতি বলেন, ‘‘রাতে ওষুধ না পেয়ে অনেক সময় রোগীর পরিজন হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ান। আমরা তখন স্থানীয় ওষুধ দোকানদের কর্মচারীদের ঘুম থেকে ডেকে তুলে ওষুধের ব্যবস্থা করে দিই।’’ রাতে শুধু দোকান বন্ধ নয়, দোকান খোলা থাকলেও অনেক সময় চিকিৎসকদের লিখে দেওয়া ওষুধ পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ।
হলদিয়া মহকুমা হাসপাতাল সূত্রের খবর, প্রতিদিন গড়ে ২০০এর বেশি রোগী জরুরি বিভাগে আসেন। দিনে রাতে তাঁদের জন্য জীবনদায়ী ওষুধ লাগে। কিন্তু রাতে ওষুধ দোকানের হাল নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন রোগীর পরিজনেরা। উল্লেখ্যে, হাসপাতাল চত্বরে নায্য মূল্যের ওষুধ দোকান রাতে খোলা থাকে। তবে তাতেও অনেক সময় ওষুধ পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ।
ওষুধ ব্যাবসায়ীদের একাংশের ব্যাখ্যা, রাতে মদ্যপদের উপদ্রব বেড়ে যায়। নিরাপত্তার অভাবে দোকান খুলে রাখা যায় না। এ নিয়ে ‘বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনে’র হলদিয়া জোনের সভাপতি মোহিত মান্না, ‘‘আগে হলদিয়া শহরে রাতে বহু ওষুধ দোকান খোলা থাকত। কিন্তু এখন শুধু নিরাপত্তার অভাবেই রাতে দোকান খোলা যায় না।’’ ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, পুলিশ নিরাপত্তা দিলে দিন রাত দোকান খোলা থাকবে।
শিল্প ও বন্দর শহরে যে রাত্রি বেশি পরিমাণে ওষুধ দোকান খোলা উচিত, তা মানছেন পুরকর্তারা। এ ব্যাপারে হলদিয়া পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সুধাংশু মণ্ডল বলেন, ‘‘এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য দফতরের নজরদারি বাড়ানো উচিত। আমরা পুরসভা গত ভাবে ওষুধ ব্যবসায়ীদের কাছে চব্বিশ ঘণ্টা খোলা রাখার জন্য অনুরোধ করব।’’
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাইচন্দ্র মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘ওষুধ দোকানগুলি ড্রাগ কন্ট্রোল দফতর নিয়ন্ত্রণ করে। এতে আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারি না।’’
(চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy