আম্রকুঞ্জ চত্বরে দরগা আর মন্দিরের সহাবস্থান। নিজস্ব চিত্র
সম্প্রীতির আবহে মহরম পালিত হল মহিষাদলে।
মহিষাদলের রাজবাড়ির আম্রকুঞ্জে ৩০০ বছরের পুরনো দরগা শরিফে শুক্রবার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ সমবেত হয়েছিলেন। বসে মেলাও। নামালক্ষ্যা, নাইকুণ্ডু, কাঞ্চনপুর, রামবাগ থেকে একাধিক তাজিয়া এদিন সন্ধ্যায় পৌঁছয় রাজবাড়ি প্রাঙ্গণে।
মহিষাদলের রাজবাড়ি চত্বরে ওই মহরমের অন্য মাহাত্ম্যও রয়েছে। ওই দরগা শরিফের ৫০ মিটারের মধ্যেই রয়েছে রাজ পরিবারের কুলদেবতা গোপাল জিউ-র মন্দির। মাঝখানে একটি দিঘি। রাজপরিবারের সদস্য শৌর্যপ্রসাদ গর্গ বলেন, ‘‘ছোট থেকেই দেখে আসছি এই দরগা। ওটা প্রায় তিনশো বছরের পুরনো। বছর তিনেক আগে দরগা সংস্কার করিয়েছি।’’ তিনি জানান, একই পুকুরের জল গোপাল জিউ-র পুজো আর নমাজের আগে ওজুর জন্য ব্যবহার করা হয়। সামনের বছর দরগা কেন্দ্রিক আরও পরিকাঠামো তৈরি করে দেওয়া হবে।
আর এতেই রয়েছে সম্প্রীতির বার্তা। শৌর্যপ্রসাদ জানান, এ বার রাজ পরিবারের বড় রানিমা ইন্দ্রাণী গর্গ এবং ছোট রানিমা দিব্যানী গর্গ রাজবাড়িতে রয়েছেন। এদিন রাজ পরিবারের পক্ষ থেকে কয়েক হাজার মানুষকে সরবত খাওয়ানো হয়।
আম্রকুঞ্জে মূলত দু’টি কমিটির উদ্যোগে ওই মহরম উদযাপন করা হয়। দরগা খাদিম শেখ ফজলুল বলেন, ‘‘আমার বাবা এই মাজারের খাদিম ছিলেন। সেই কাজ আমি করছি।’’ তিনি জানান, রাত ১০টা পর্যন্ত বহু মানুষ আসেন ওই মাজারে। আর সম্প্রদায় নির্বিশেষে সবাইকে আপন করে নেওয়া হয়। ফজলুলের কথায়, ‘‘রাজপরিবারের সাহায্য তাঁরা পান। মহরমের সময়ে রাজপরিবারের সদস্যরাও ওই দরগা শরিফে আসেন।’’
এদিন রাজবাড়ি চত্বরে দেখা গেল, নানা বয়সের মানুষজনকে। মহরমের শোকগাথা পড়া হচ্ছিল সেখানে। মহিষাদলের একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য মোক্তার হোসেন বলেন, ‘‘আমি তাজিয়ার সাথে এসেছি। এই রাজবাড়ির পরিবেশ দেখার মত। এ যেন সর্ব ধর্ম সমন্বয়।’’ রামবাগের বাসিন্দা সুলতানা বিবি বলেন, ‘‘সব ধর্মের মানুষও আসেন এখানে। শুধু তাই নয় তাজিয়া তৈরিতেও, অন্য সম্প্রদায়ের বহু মানুষ হাত লাগান।’’
এ দিন দরগা শরিফে এসেছিলেন এলাকার নাট্যকর্মী অলকেশ সামন্ত। তাঁর কথায়, ‘‘ছোট থেকেই এখানে আসছি। দরগার পরিবেশ খুব ভাল লাগে।’’ তবে এ সবের মধ্যেও এ দিন তাল কেটেছে রাজবাড়ি যাওয়ার রাস্তায়। বৃষ্টির জেরে ওই রাস্তার অবস্থা বেহাল বলে অভিযোগ অনেকের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy