সাবেক: খড়্গপুরে বেয়ার গ্যারেট ইঞ্জিন। নিজস্ব চিত্র
মাঝে বারো বছর। ২০০৬ সালে শেষবার শালিমার থেকে মেচেদা পর্যন্ত চলেছিল বাষ্পচালিত এই ইঞ্জিন। তারপর থেকে ইঞ্জিনের ঠাঁই হয়েছিল খড়্গপুরে রেল কারখানাতেই। বছর দু’য়েক মেরামতের পর ফের খড়্গপুর-মেদিনীপুর পথে পরীক্ষামূলক ভাবে চালানো হল বেয়ার গ্যারেট লোকোমোটিভ বাষ্পচালিত ইঞ্জিন। আগামী ২ অক্টোবর খড়্গপুর থেকে শালবনি পর্যন্ত এই ইঞ্জিন দিয়ে চালানো হবে হেরিটেজ ট্রেন।
১৯০০ সালের পর হার্বাট উইলিয়াম গ্যারেট প্রথম এই বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের নকশা তৈরি করেন। তার নামেই এই ইঞ্জিনের নাম হয় গ্যারেট ইঞ্জিন। প্রথমে ইঞ্জিনের গতি ছিল কম। ১৯০৯ সালে দার্জিলিং রেলে প্রথম সেই ইঞ্জিন চলে। পরে সেই ইঞ্জিনকে আরও উন্নত করে লোকোমোটিভ করার কাজে নামেন চার্লস ফেব্রিক বেয়ার। সেই সম্পর্কে প্রচার শুরু করেন রিচার্ড পিকক। প্রচারে জনপ্রিয়তা পাওয়ার পরে ১৯২৬ সালে ইংল্যান্ডে বেয়ার পিকক অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড প্রথম তৈরি করে এই বেয়ার গ্যারেট ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিনের গতিও ছিল বেশি। ১৯২৯ সালে প্রথম বেঙ্গল-নাগপুর রেলের মেইন লাইনে এই ট্রেন চালানো হয়। তার পরে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত এই রুটেই চলাচল করত এই ট্রেন। কয়লার ইঞ্জিনে চলা বাষ্পচালিত ট্রেনের জনপ্রিয়তা ক্রমেই কমতে শুরু করে। আসে ডিজেল চালিত ট্রেন। তার পর দেশের বিভিন্ন রেল মিউজিয়ামে এই ট্রেন সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৬ সালে শালিমার থেকে মেচেদা পর্যন্ত চলার পরে এই ইঞ্জিনে কিছু যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। ইঞ্জিনটি নিয়ে আসা হয় খড়্গপুর রেল কারখানায়। সেখানেই গ্যারেট শপে ২০১৬ সাল থেকে ইঞ্জিনটি মেরামত চলছিল। এ জন্য দিল্লির রেল মিউজিয়াম থেকে ৩২৩টি যন্ত্রাংশ নিয়ে আসা হয়। এরপরেও আরও কিছু যন্ত্রাংশের চাহিদা ছিল। খড়্গপুর রেল কারখানাতেই ২৭২টি যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয়।
শনিবার খড়্গপুর থেকে শালবনি পর্যন্তই পরীক্ষামূলকভাবে এই ট্রেন চালানোর কথা ছিল। সেই মতো খড়্গপুর স্টেশনের তিন নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে যাত্রা শুরু করে ইঞ্জিনটি। তবে যুগের তুলনায় ইঞ্জিনের গতি কম থাকায় মেদিনীপুরের আগেই যাত্রা শেষ করে ফের খড়্গপুরের ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ফিরে আসে ট্রেনটি। এ দিন এই ইঞ্জিনের ছবি তুলতে অনেকে ভিড় জমিয়েছিলেন। এ নিয়ে খড়্গপুর রেলের সিনিয়র ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার কুলদীপ তিওয়ারি বলেন, “মেইন লাইনে চলা এটাই প্রথম বাষ্পচালিত ইঞ্জিন। এ বার আমরা খড়্গপুর-শালবনি রুটে এই ইঞ্জিনটির হেরিটেজ যাত্রা করতে চাইছি। তাই পরীক্ষামূলকভাবে ইঞ্জিনটি মেদিনীপুর পর্যন্ত চালানো হল।” দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, “এই ধরনের ইঞ্জিন নতুন প্রজন্মের কেউই প্রায় দেখেনি। তাই এমন ঐতিহ্যকে সকলের সামনে তুলে ধরতে আমরা ২০০৬ সালে শালিমার থেকে মেচেদা পর্যন্ত চালিয়েছিলাম। এ বার ফের একটি হেরিটেজ যাত্রার উদ্দেশ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ইঞ্জিনটি চালানো হল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy