প্রতীকী ছবি।
রাজ্য তথা জেলা নেতৃত্বের হুইপ ছিল পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনে দলের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত বলে মানতে হবে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের। কিন্তু সোমবার বোর্ড গঠনের সময় দেখা গেল দলের সেই নির্দেশ বহু জায়গাতেই মানা হয়নি। শুধু তাই নয়, বিজেপির ‘সমর্থন’ নিয়ে বোর্ড গঠনের অভিযোগও তৃণমূলের একাংশের বিরুদ্ধে।
এ দিন জেলায় দ্বিতীয় দফায় পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনে মহিষাদলের ইটামগরা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপির ‘হাত’ ধরে পঞ্চায়েতে প্রধান নির্বাচনের অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের একাংশের বিরুদ্ধে।
তৃণমূল ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ইটামগরা-২ পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান রামকৃষ্ণ দাসের অনুগামী সদস্যরা বিদায়ী উপপ্রধান মুসলেমা বেগমকে সংরক্ষিত প্রধান পদে বসাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা মানতে রাজি হননি জয়ী সদস্যদের একাংশ। তাঁরা শম্পা তাঁপ নামে এক মহিলা সদস্যর নাম প্রস্তাব করেন। তখন দলীয় নির্দেশ অমান্য করে ভোটাভুটি হয়। বিজেপির একমাত্র সদস্য নমিতা মান্না (গুছাইত) শম্পাকে সমর্থন জানান।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ইটামগরা-২ পঞ্চায়েতে ১২টি আসনের মধ্যে শাসকদল পেয়েছিল ১১টি। বিজেপি একটি মাত্র আসন পায়। শাসক দলের তরফে জানা গিয়েছে, এদিন বিদায়ী প্রধান রামকৃষ্ণ দাসের পক্ষে দলের ৬ জন সদস্য ছিলেন। কিন্তু শম্পাকে প্রধান করতে চেয়েছিলেন ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব। প্রয়োজনীয় সমর্থন না থাকায় বিজেপির ‘সাহায্য’ নিতে হয় শাসক দলকে। প্রধান নির্বাচিত হওয়ার পর শম্পার দাবি, ‘‘বিজেপি সমর্থন করেছিল বলে প্রধান হতে পেরেছি। তবে নমিতাদেবী বিজেপিতেই থাকছেন।’’ একই প্রতিক্রিয়া শোনা গিয়েছে নমিতাদেবীর গলায়। তিনি বলেন, ‘‘আমি বিজেপির নির্বাচিত সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছি। শুধু প্রধান পদে সমর্থন করেছি।’’
বিজেপির সঙ্গে এমন আঁতাতে ক্ষুব্ধ স্থানীয় তৃণমূলের একাংশ। সরাসরি ব্লক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন পঞ্চায়েতের নব নির্বাচিত উপপ্রধান রামকৃষ্ণ দাস। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যা যেখানে সংখ্যালঘুদের পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছেন। সেখানে দু’দফার উপপ্রধান পদে থাকা মুসলেমাকে হারিয়ে ভুল করেছে দল। রাজ্য নেতৃত্ব এবং পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর কাছে অভিযোগ জানাব। তারপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।’’
যদিও, অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন মহিষাদল ব্লক তৃণমূল সভাপতি তিলক চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘‘একাধিকবার মিটিং ডাকা হয়েছিল। কিন্তু যাঁরা অনুপস্থিত ছিলেন দলীয় মিটিংয়ে তাঁরাই এদিন ভোতাভুটি করেছেন বলে শুনেছি। তবে, পুরো বিষয়িটি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
এদিন হলদিয়া ব্লকের চারটি এবং সুতাহাটা ব্লকের ছতি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান ও উপ প্রধান নির্বাচন হয়। হলদিয়াতে আগে থেকে দলীয় মিটিংয়ে প্রধান ও উপ প্রধান পদে সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিতদের নাম ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছিল। সেইমত প্রধান ও উপপ্রধান পদে এ দিন শপথ গ্রহণ হয়। নন্দীগ্রাম-১ ও ২ ব্লকে ছিল ঐক্যের চিত্র। নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের খোদামবাড়ি-১ ও ২, আমদাবাদ-২, এবং বয়াল-১ গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন শান্তিপূর্ণভাবে হয়। নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের দশটি গ্রামপঞ্চায়েতে প্রধান ও উপ প্রধান পদে সর্ব সম্মতিক্রমে শপথ গ্রহণ হয়। পরে কেন্দেমারি জলপাই গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রাক্তন প্রধান উপপ্রধানদের সংবর্ধনা জানানো হয়। সেখানে বাম-কংগ্রেস সহ বিরোধীদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
বোর্ড গঠনে তৃণমূলের কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে পাঁশকুড়াতেও। স্থানীয় কেশাপাট পঞ্চায়েতে ২১ জন সদস্যই তৃণমূলের। প্রধান নির্বাচনে তৃণমূলের তরফে বিদায়ী প্রধান দিলীপ সাঁতরাকে ফের সমর্থনের জন্য হুইপ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জেলা নেতৃত্বের নির্দেশ উপেক্ষা করে মানস সামন্ত প্রধান পদের জন্য লড়াইয়ে নামেন। ভোটাভুটিতে ১৪-৭ ব্যবধানে দিলীপবাবু জিতলেও এই ঘটনায় গোষ্ঠী কোন্দল বেআব্রু হয়েছে।
বোর্ড গঠনে ভোটাভুটি এড়াতে হুইপ জারি করেও কেন গোলমাল এড়ানো গেল না?
শিশিরবাবু বলেন, ‘‘এই ঘটনা অনভিপ্রেত। দলীয় ভাবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে বহিষ্কারও করা হতে পারে।’’
মহিষাদলের ঘটনায় বিজেপির জেলা সভাপতি (তমলুক সংগঠন)প্রদীপ দাস বলেন, ‘‘ওই সদস্যার পরিবারের একজনকে ভোটের আগে অপহরণ করা হয়েছিল। এবার ততোধিক চাপ সৃষ্টি করে তৃণমূল সমর্থন আদায় করেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy