Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শরীরী বাধা জয় করে পায়ে এঁকে লড়াই মিলনের

সমুদ্রের ঘাটের পাশে বসে পা দিয়ে আনমনে ছবি আঁকছেন এক তরুণ। তাঁকে দেখে থমকে দাঁড়াচ্ছেন সেই দিয়ে যাওয়া পথ চলতি মানুষ এবং পর্যটক। কেউ কেউ কৌতুহলবশত এগিয়ে গিয়ে দেখছে ওই তরুণের আঁকা। আবার কেউ হয়তো মুগ্ধ হয়ে কিনে নিচ্ছেন তাঁর আঁকা সেই ছবি।

পায়ে আঁকা এই ছবি বেচেই চলে সংসার। নিজস্ব চিত্র

পায়ে আঁকা এই ছবি বেচেই চলে সংসার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
দিঘা শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:৫৩
Share: Save:

সমুদ্রের ঘাটের পাশে বসে পা দিয়ে আনমনে ছবি আঁকছেন এক তরুণ। তাঁকে দেখে থমকে দাঁড়াচ্ছেন সেই দিয়ে যাওয়া পথ চলতি মানুষ এবং পর্যটক। কেউ কেউ কৌতুহলবশত এগিয়ে গিয়ে দেখছে ওই তরুণের আঁকা। আবার কেউ হয়তো মুগ্ধ হয়ে কিনে নিচ্ছেন তাঁর আঁকা সেই ছবি।

ওল্ড দিঘার ব্লু ভিউ ঘাটে যাওয়ার পথে বিকেলে হামেশাই চোখে পড়ে এই দৃশ্য। এক প্রতিবন্ধী তরুণের লড়াই দেখে অনুপ্রাণিত হন অনেকেই। কিন্তু রামনগর থানা এলাকার গোবরা গ্রামের বাসিন্দা মিলন বারিকের আসল লড়াই আড়ালেই থেকে যায় অনেকের কাছে। বছর বাইশের মিলন জন্মের কয়েক বছর পর থেকেই শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। শারীরিক সমস্যার জন্য তাঁর যে বাইশ বছরের, দেখে তা-ও বোঝা সম্ভব নয়। মিলনের দুই হাত এবং দুই পা স্বাভাবিক নয়। মুখে কথা ফোটে না তেমন। এমন প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মা-কে পাশে নিয়ে মনের জোরে ডান পা দিয়ে ছবি আঁকেন মিলন।

মিলনের পরিবার এবং স্থানীয় সূত্রের খবর, জন্মের চার বছর পর থেকে তাঁর ওই প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি সামনে আসে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিলনের প্রতিবন্ধকতা বাড়তে থাকে। তাঁর বাবা অরবিন্দ বারিক ওড়িশার একটি দোকানে কর্মী হিসাবে কাজ করতেন। তাঁর পরিবারের দাবি, এক সময় সেখান থেকে বাড়িতে আসা কার্যত কমিয়ে দেন মিলনের বাবা। দুই ছেলে এবং এক মেয়েকে নিয়ে বিপাকে পড়েন মিলনের মা আরতি বারিক।

লড়াই শুরু সেখান থেকেই। মিলনের বোন ছোটবেলায় ছবি আঁকত। বোনের ছবি আঁকা দেখে মিলনও উচ্ছ্বাসিত হতো। প্রথমে পা নাড়িয়ে ছবি আঁকারও চেষ্টা করত মিলন। প্রতিবেশী এক মহিলা বাড়িতে এসে মিলনকে ছবি আঁকার তালিম দেন। সেই আঁকা আপাতত তাঁর পরিবারের আর্থিক উপার্জনের উপায়। স্থানীয় সূত্রের খবর, রামনগর ১ ব্লকের পক্ষ থেকে মিলনের জন্য ইন্দিরা আবাস যোজনায় ঘর করে দেওয়া হয়েছে। মাথা গোঁজার সমস্যা হয়তো তাঁদের নেই। কিন্তু পেটের টানে দিঘার সৈকতে ছবি বিক্রি করতে হয় মিলন এবং আরতীদেবীকে।

আরতিদেবী বলেন, “ছেলের ছবি বিক্রি করে এবং সহৃদয় ব্যক্তিদের সাহায্য নিয়ে কোনও রকমে সংসার চালাই। টাকার অভাবে মিলনের চিকিৎসা তেমন হয়নি। কী রোগে সে আক্রান্ত জানি না। চিকিৎসার জন্য অনেক লোকের কাছে ঘুরেছি। এখন হাল ছেড়ে দিয়েছি।’’ আরতিদেবী জানিয়েছে, প্রতিদিন দিঘা যাতায়াতের খরচও তাঁদের কাছে অনেক টাকা। এক ব্যক্তি দিঘায় ভাড়া গাড়ির ব্যবসা করেন। তাঁর গাড়িতে মিলনেরা গোবরা থেকে দিঘায় যান। আর তাঁর গাড়িতেই রাতে বাড়ি ফেরেন।

মিলনের এই লড়াইয়ের কথা জানতে পেরে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন রামনগর-১ এর বিডিও আশিসকুমার রায়। তিনি বলেন, “সম্প্রতি এই ব্লকের দায়িত্বে এসেছি। মিলনের কথা আগে জানতাম না। তবে তিনি যাতে প্রতিবন্ধী ভাতা পান, তার জন্য চেষ্টা করব। এছাড়া, কীভাবে মিলনের চিকিৎসা করানো যায় বা তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়ানো যায়, সে বিষয়টিও দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Youth Specially Abled Drawing Feet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE